রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

Looks like you've blocked notifications!

রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা বিকেল ৪টায় শেষ হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (এভিএমে) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়।

যদিও কোনো কোনো কেন্দ্রে চারটার পরেও ভোটগ্রহণ চলতে দেখা যায়। বিকেল চারটার আগে যে ভোটাররা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন, এখন তাদের ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। তবে, দ্রুতই এ ভোটগ্রহণ শেষ হবে।

গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের পর শেষ ধাপে এ দুটি সিটির ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবারও ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছে ইসি।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল এই ভোটে অংশ নিলেও বিএনপি নেই। বরিশালে এক মেয়র পদপ্রার্থীর ওপর হামলার পর ইতোমধ্যে সিলেট ও রাজশাহীর ভোট বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বরাবরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইসি।

ভোটের আগে পুরো সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাকে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়। রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদের মঙ্গলবার (২০ জুন) বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে, বৃষ্টির কারণে সিলেটের ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তায় কাজ করবে ১০ প্লাটুন বিজিবি, থাকবে র‍্যাব ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার সদস্যের পাশাপাশি থাকবে পুলিশ। এ ছাড়া ৪২টি ওয়ার্ডের জন্য ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্নের জন্য মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।’

১৯০টি ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকবে দুটি করে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরা থাকছে এক হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষেও। সব মিলিয়ে মোট সিসি ক্যামেরা থাকছে এক হাজার ৭৪৭টি। এসব তদারকি করা হবে ইসির প্রধান কার্যালয় থেকে।

সিলেট সিটির এবার মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ এবং নারী দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন। মেয়র পদে আট জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৮৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার অভিযোগে সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরিফ জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন করতে নগরীতে কাজ করছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্য। মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে রয়েছেন চারজন প্রার্থী। যদিও গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মুরশিদ আলম নির্বাচন বর্জন করেছেন। অপর তিন মেয়র পদপ্রার্থী হলেন—আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং জাকের পার্টির অ্যাডভোকেট লতিফ আনোয়ার।

নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ১১২ জন। এর মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে এই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। অপর ২৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১১ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৪৬ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন সুলতানা আহমেদ সাগরিকা নামে একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী।

সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারের নির্বাচনে নগরীর ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিই অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫৫টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। ভোট পর্যবেক্ষণ করতে বসানো হয়েছে এক হাজার ৫৬০টি সিসি ক্যামেরা।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান জানান, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে তিন হাজার ৫১৪ জন পুলিশ সদস্য ও এক হাজার ৮৬০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে র‌্যাবের ১৫টি দল ও ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। পাশাপাশি ৩০টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাইন মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন মাত্র ছয়জন। তারা ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।