তফসিল ঘোষণার পথে ইসি, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি
বিএনপির এক দফা আন্দোলন চলছে, চলছে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি। দলটি ও তাদের সমমনারা চায় সরকারের পদত্যাগ। এরইমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই তারা দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবেন। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় জোর প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে নির্বাচনি সামগ্রী। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ইতোমধ্যে সাক্ষাৎও সম্পন্ন করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বধীন কমিশন।
রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সে সুরেই কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, শিগগির তফসিল ঘোষণা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ ছিল রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে আমাদের যে প্রস্তুতি গৃহীত হয়েছে, তা অবহিত করা। আমরা রাষ্ট্রপতিকে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছি। তিনি শুনেছেন এবং সন্তুষ্ট হয়েছেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সুশৃঙ্খলভাবে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তিনি তা করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা।’ রাষ্ট্রপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
‘সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় নির্বাচনি সামগ্রী পাঠানোর কাজও শেষ করেছে ইসির নির্বাচনি শাখা। সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ। তফসিল ঘোষণার পর যে দু-একটা কাজ থাকে, সেগুলো বাকি আছে। আমরা মূলত আগামী নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছি। এখন শুধু তফসিল ঘোষণা বাকি। আগামী কমিশন সভার পর যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যায়ও নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তবে, বিষয়টি নির্ভর করছে তফসিল ঘোষণা নিয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠানের ওপর।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে যেদিন কমিশন সভা হয়েছিল, সেদিনই জাতির উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার ভাষণ রেকর্ড করা হয়। ওদিন সন্ধ্যায় তা বিটিভিতে প্রচার করা হয়। এবারও তেমনটি হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
ইসিসূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পরই শুরু হবে ‘নির্বাচন পূর্ব সময়’। নির্বাচনি আইন অনুসারে এ সময়ে যেকোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন বন্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচনি ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের আগ পর্যন্ত এ অবস্থা বহাল থাকবে। এ সময় সরকার নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হবে। সরকারের কার্যক্রম রুটিন ওয়ার্ক সীমিত হয়ে পড়বে।
এদিকে নির্বাচনের শেষ প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে চার বিভাগের ডিসি (জেলা প্রশাসক) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্বাচনি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর খুলনা, রংপুর, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের ডিসি, এসপিদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সিল-প্যাড ছাড়া অন্য সব নির্বাচনি সামগ্রী সংগ্রহ শেষ হয়েছে। সিল-প্যাড ১৫ নভেম্বরের আগেই সংগ্রহ হবে বলে তারা আশা করেন। অন্যদিকে, আগামী ১২ নভেম্বর নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপসের উদ্বোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই অ্যাপস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থাকবেন।
কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা আসতে পারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সভা আহ্বান সংক্রান্ত ফাইল এখনও আমার কাছে আসেনি। তবে, দ্রুত এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এখন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব। জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান সিইসি।