নৌকায় ভোট চেয়ে মিছিল, শামীম ওসমানকে শোকজ
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অতি উৎসাহী হয়ে ভোট চেয়ে মিছিল করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষে মিছিল-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল করতে দেখা গেছে। আর এ বিষয়টি নজরে এসেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির। ওই সংসদীয় এলাকার নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কাজী ইয়াসিন হাবিব আজ শনিবার (২ ডিসেম্বর) নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা চেয়ে শামীম ওসমানকে চিঠি পাঠিয়েছেন।
এই বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে এবং আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গত বুধবার দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মী এবং বেশি মানুষ না নিয়ে আমি ও আমার ছেলে ইমতিয়াজ ওসমান অয়নকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আজকে আওয়ামী লীগের নেতারা যে মিছিল করেছে তা হরতাল, অবরোধ এবং সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে।’
গতকাল শুক্রবারও জুমার নামাজের পর শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব মিছিলে শামীম ওসমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ শনিবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়টি ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানের পক্ষে একযোগে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন তার অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে ফতুল্লার কাশীপুর, এনায়েতনগর, তল্লা, কায়েমপুর, সস্তাপুর, ফতুল্লা বাজার ও কুতুবপুরসহ অন্যান্য এলাকায়ও মিছিল করেন তার অনুসারীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোকজনের একটি মিছিল হয়। ওই মিছিলে ব্যবহৃত ব্যানারটিতে ‘শান্তি মিছিল’লেখার পাশাপাশি ‘৭ জানুয়ারি শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’উল্লেখ ছিল। ব্যানারে শামীম ওসমানেরও বড় করে ছবি সাঁটানো ছিল।
সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল হয়। ওই মিছিলেও শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। মিছিলের আগে নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নেতা একেএম শামীম ওসমান সাহেবের ভোটের প্রচারণায় আমরা মিছিল করব।’
ফতুল্লা বাজার এলাকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর নেতৃত্বে এবং কায়েমপুর এলাকায় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল হয়। ওই দুই মিছিলেও নৌকা মার্কার পক্ষে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়া তল্লা এলাকায় যুবলীগনেতা জানে আলম বিপ্লবের নেতৃত্বে শামীম ওসমানের পক্ষে মিছিল করেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। কুতুবপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মীর হোসেন ওরফে মীরুর নেতৃত্বে মিছিল হয়। মীর হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজি বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
কাশীপুর ইউনিয়নে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদলের ছেলে নাজমুল হোসেন সাজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। তারাও মিছিলে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেন। তাদের ব্যানারে ‘৭ তারিখ সারা দিন, উন্নয়নের শপথ নিন’, ‘একেএম শামীম ওসমানের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’উল্লেখ ছিল।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, ‘ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। এটা শামীম ওসমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ মিছিল। এই সব স্থানে কাউকে প্রচার-প্রচারণা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবে কেউ কেউ নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়েছে এটা অস্বীকার করব না। এটা অনেকে না বুঝে করে ফেলেছে। যারা ব্যানারে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে লিখেছে এবং ভোট চেয়ে স্লোগান দিয়েছে তারা অতি-উৎসাহী ছিল। শামীম ভাই আমাদের কোন প্রকার প্রচারের জন্য বলেননি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে কেবল আনন্দ মিছিল করেছি। কারণ আমরা ১৮ তারিখে প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোট চাইতে পারব না, এটা জানি। কিন্তু কেউ কেউ ভুল করে ফেলেছে।’
এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কজুড়ে শামীম ওসমানের হাত উঁচিয়ে ধরা বড় কয়েকটি ছবি সংবলিত ফেস্টুন দেখা গেছে। শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে কয়েকটি ব্যানার ও ফেস্টুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড় ও চিটাগাং রোড এলাকায় সাঁটানো হয়েছিল। তবে বিকেলের পর ওইসব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নেওয়া হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা নিজ উদ্যোগ কিছু ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছিলাম। পরে আচরণবিধির কথা ভেবে সেগুলো আবার সরিয়ে নিয়েছি।’
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি বিষয়টা জেনেছি। কয়েকটি পাড়া-মহল্লায় আমি নিজেই শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকদের মিছিল করতে দেখেছি। এ সময় তারা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তাদের মিছিলের কারণে পাড়া-মহল্লায় যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। এটি সরাসরি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন তিনি (শামীম ওসমান) আইনকে শ্রদ্ধা করেন বলে সাংবাদিকদের সামনে জানালেন। কিন্তু একদিন পরেই তার লোকজন দিয়ে তিনি মিছিল করিয়ে, ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। আমি বিষয়টি প্রাথমিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে আমি লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে তার কোন কর্মী-সমর্থক মিছিল বা ভোট প্রার্থনা করতে পারবেন না। এটি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কেউ মিছিল করেছে, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’