নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে : বিদেশি পর্যবেক্ষকরা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, সফল ও বৈধ বলে অভিহিত করেছেন। তারা রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর এমন মন্তব্য করেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জিম বেটস বলেন, ‘আমি নির্বাচনকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে আসা বেশ কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষক তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রে ওয়াই শুতোভ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও হিশাম কুহাইল, গাম্বিয়া হাইকমিশনের মোহামাদু মুসা এনজি, স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে, ওআইসির নির্বাচনি ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকির মাহমুদ বান্দার, আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদি হাকিম মোয়ালিয়াম, দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ভিক্টর ওএইচ ও কানাডার চন্দ্রকান্ত আর্য।
প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও পর্যবেক্ষক জিম বেটস বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। অনেক দেশে ভোট সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হয়।’
আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসের সিইও আলেকজান্ডার বি গ্রে বলেন, ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এটি ভোটার, পোলিং স্টাফ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের পেশাদারিত্ব ও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
গ্রে ১০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের পর তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘একজন ভোটারও বা কেউ তার কাছে তাদের উদ্বেগ বা অভিযোগ জানাননি। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান পূরণ করেছে। আমি অত্যন্ত নিশ্চিত, নির্বাচন কমিশন সততার সঙ্গে পেশাদার কাজ করেছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রে ওয়াই শুতোভ বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোটাররা খুব সক্রিয় এবং সমস্ত প্রার্থী ও ভোটাররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এই জনগণই এদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে এবং এটি আমাদের জানিয়ে দেয়, এ নির্বাচন বৈধ।’
শুতোভ বলেন, তিনি নির্বাচনের উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ভোট সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পেয়েছেন।
শুতোভ আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন ছিল উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ এবং আমরা মনে করি, বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা কার্যকর। বাংলাদেশে নির্বাচনের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া স্থিতিশীলভাবে বিকশিত হচ্ছে।’
কানাডার পর্যবেক্ষক চন্দ্রকান্ত আর্য বলেন, ‘২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্বকারী রেকর্ড এক হাজার ৯০০ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সব প্রার্থীদের জনগণের কাছে অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং তাদের নিজের পক্ষে প্রচারে কোনো বাধা ছিল না।’
চন্দ্রকান্ত আর্য বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সফল নির্বাচন প্রদানে রাষ্ট্রের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চমৎকার কাজের স্বীকৃতি ও সাধুবাদ জানাতে চাই।’
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রকান্ত আর্য বলেন, ‘নির্বাচন বয়কট করা ওই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব স্বার্থে কৌশলগত সিদ্ধান্ত, সেই সিদ্ধান্তের রায় নিয়ে মন্তব্য করা আমাদের কাজ নয়।’
নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কানাডার এই পর্যবেক্ষক বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি ছিল অবাধ, তাই আমরা তা গ্রহণ করেছি।’
স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে বলেন, ‘ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও ভোটের দিনের কার্যক্রম খুব স্বাভাবিক এবং বেশ মনোরম ছিল।’
সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনি প্রক্রিয়া খুবই ভালো, চমকপ্রদ ও জাঁকালো। গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পাওলো কাসাকা বলেন, ‘তত্ত্ববাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মূলত একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে এবং এরপর কয়েকবার বাংলাদেশে।’
২০১৪ সালে বাংলাদেশে তার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে সাবেক এই পর্তুগিজ এমপি বলেন, তিনি তখন হাসপাতালে আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগের শিকার হওয়া গাড়িচালক, শিশুসহ অনেক লোকের পোড়া মরদেহ দেখেছেন।
পাওলো কাসাকা বলেন, ‘আমাদের সহিংসতার এই যুক্তি ভাঙতে হবে। গণতন্ত্র অবশ্যই একটি পছন্দ, তবে এটি বিষাক্ত মেরুকরণ হতে পারে না।’
ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও হিশাম কুহাইল বলেন, ‘আমরা আজ যা দেখলাম, তা হলো ভোটের দিনে একটি ভালো ভোটদান প্রক্রিয়া, কেউ কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করে না।’
হিশাম কুহাইল আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্ত ও শান্তিপূর্ণ ছিল, উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ছিল, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দক্ষ ছিলেন এবং অংশগ্রহণকারীরা ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে খুব খুশি ছিলেন।’