জীবন্ত গাছের শেকড় দিয়ে গড়ে ওঠা সেতু!

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ ও আসামের মধ্যবর্তী মালভূমিগুলোকে পৃথিবীর সবচেয়ে আর্দ্রতম স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এমন আর্দ্র পরিবেশ এই এলাকাকে গাছ ও লতাপাতার বেড়ে ওঠার জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে তৈরি করে। ফলে এসব পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত খাসি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ গাছপালার সঙ্গে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

আধুনিক নির্মাণ সামগ্রী আবিষ্কার হওয়ার আরো আগে তাঁরা গাছপালাকে ভিত্তি করে সেতু তৈরির অবকাঠামো স্থাপন করে ফেলেছে। অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব, বিপদসংকুল নদীপথ নিরাপদে পারাপারের জন্য তারা বেছে নিয়েছে গাছের শেকড়ের তৈরি সেতুকে।

আজ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ বছর আগে, খাসি জনগোষ্ঠী নদীর দুই ধারে লতানো শেকড়ের গাছ রোপণ করে। এসব শেকড় উপকূল পরিবেশে বাড়তে থাকে। মাঝের ক্ষণস্থায়ী বাঁশের অবকাঠামোর ওপর দিন দিন জড়াতে থাকে এসব শেকড়। মানুষের পদচারণায় এবং শিকড় একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে শক্ত এক সেতুর ভিত্তি তৈরি করে। আজ সেই সেতুগুলো জায়গাভেদে প্রায় ১৫ থেকে ২৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা, এবং একবারে ৩৫ জন পর্যন্ত মানুষের ভার সহজেই বহন করতে পারে।

খাসিদের কাছে এই শেকড় সেতুগুলো ‘জিং কিয়েং জ্রি’ নামে পরিচিত। যেখানে ইট সিমেন্টের সেতুগুলো দিন দিন স্থিতিস্থাপকতা হারাচ্ছে, এই শেকড় সেতু দিন দিন আরো মজবুত হচ্ছে। তুমুল বর্ষণ, বর্ষার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার এই সেতু অনায়াসে সইতে পারে।

শেকড় সেতু ছাড়াও খাসিদের প্রকৃতির সঙ্গে সখ্যতা আরো নানান দিকে বিস্তৃত। মেঘালয়ের একটি গ্রাম মাওলিনং, এখনো সেখানে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্রামটিকে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্জ্য পদার্থ বাঁশের আধারে সংগ্রহ করা হয় এবং পরিবর্তিতে সার হিসেবে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্লাস্টিক সামগ্রী পুনর্ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং গ্রামের রাস্তাঘাট গ্রামবাসীগণ রোজ নিজেরাই ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন রাখেন।

‘ঈশ্বরের নিজ বাগান’ এই নামের সার্থকতা রক্ষা করেছে মাওলিনং। পরিচ্ছন্নতম গ্রামের খেতাবপ্রাপ্ত এই গ্রাম রোজ নানান পর্যটক আকর্ষণ করছে তার খেতাবের কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই গ্রামটিকে পরিচ্ছন্নতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে আখ্যায়িত দিল্লি এই দেশেরই অংশ।