‘বিড়ালের ওজন শূন্য!’

Looks like you've blocked notifications!

গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় আপনার প্রিয় বিড়ালটি বসে আছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজের ওপরে। অথবা ঘুমানোর আগে আপনার প্রিয় বালিশ বা কাঁথাটাকেই নিজের বিছানা বানিয়ে ফেলাকে প্রায় দায়িত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাবে আপনার আদুরে বিড়াল! বাসায় যাঁরা বিড়াল পোষেন, তাঁদের এ রকম ঝামেলা প্রায়ই পোহাতে হয়। এমন অবস্থায় হয়তো আদরের প্রাণীটিকে বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু হাজারীবাগ বাজারের আক্তার হোসেন (৪০) কিন্তু সেটি করেন না; বরং তাঁর দোকানে পণ্যের ওজন মাপার ডিজিটাল যন্ত্রের ওপর বসে থাকা বিড়ালটিকে না সরিয়েই তিনি পণ্য ওজনের কাজটি করে থাকেন। ডিজিটাল যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে বিড়ালের ওজন শূন্য করে দেওয়ায়, সঠিক মাপেই দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারেন ক্রেতারা।  

শখের বিড়াল 
হাজারীবাগ বাজারে পাখি-কবুতরের খাবার ও পাখি পালনের সরঞ্জাম বিক্রির দোকান রয়েছে আক্তার হোসেনের। দোকানের নাম আক্তার পোলট্রি ফিড। এই ব্যবসার বাইরে আক্তার হোসেনের প্রধান শখ বিড়াল পোষা। তাঁর দোকানে রয়েছে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ছয়টি পূর্ণবয়স্ক বিড়াল। আর রয়েছে অসংখ্য বিড়ালের বাচ্চা। বাঘা, ডলি, ইনা, বীণা, টিনাসহ বিভিন্ন বাহারি নামে ডাকা হয় এদেরকে। 

যেভাবে শখের শুরু 
বিড়াল পোষা নিয়ে আক্তার হোসেন বলেন, ‘একবার একটি ফার্সি জাতের মেয়ে বিড়াল আমি উপহার পাই একটি ধনী পরিবার থেকে। তাঁরা আর বিড়ালটিকে পুষতে চাইছিলেন না। এর নাম দেওয়া হয় ডলি। একে নিয়েই বিড়াল পোষার শখের শুরু। শখের বশে বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল কেনা শুরু করি। এদের ক্রসের মাধ্যমে বিভিন্ন রঙের বিড়ালের জন্ম হয়েছে।’

ওজন মাপার যন্ত্রে বিড়াল 
যাকে দিয়ে আক্তার হোসেনের শখের শুরু, সেই ডলির প্রধান কাজ হচ্ছে পণ্য বিক্রির সময় ওজন মাপার যন্ত্রের ওপর শুয়ে থাকা। তার শুয়ে থাকা এতটাই রাজসিক যে—কেউ চাইলেই তাকে তুলতে পারবে না। ফলে ডলিসহই পণ্য ওজন করেন আক্তার হোসেন। গ্রাহকরা এ নিয়ে কখনো কোনো অভিযোগ জানিয়েছে কি না—জিজ্ঞেস করলে আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রায়ই যাঁরা আমার দোকান থেকে পণ্য কেনেন, তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেন না। তাঁরা ব্যাপারটা দেখে অভ্যস্ত। তবে অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা ওজনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমি বলি, বিড়ালের ওজন শূন্য। যন্ত্রের ওপর ডলি বসার পর, ওজন কমিয়ে শূন্য করে দিই। তখন পণ্যের ঠিক ওজনই পাওয়া যায়। কোনো কোনো গ্রাহক আবার প্রাণী হিসেবে বিড়ালকে অপছন্দ করেন, তাই তাঁরা আমার দোকান থেকে পণ্য নিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, বিড়াল আমার দোকান অপরিষ্কার করে। তাঁদের কাছে আমি পণ্য বিক্রি করি না। শখের চেয়ে পণ্য বিক্রি বড় না।’

এ ব্যাপারে দোকানের এক ক্রেতা সামিউল হাসান টলমল বলেন, ‘আমি শখের বশে কবুতর পুষতাম। তখন আমি তাঁর দোকান থেকে খাবার নিতাম। আমি প্রায়ই এসে দেখতাম, বিড়ালটি ওজন যন্ত্রের ওপর শুয়ে রয়েছে। একবার আমিও ওজনের ব্যাপারটি নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, পরে আক্তার ভাই বুঝিয়ে বললেন। আমি এতে খারাপ কিছু দেখছি না।’ 

বিড়ালের যত্ন 
বিড়ালের প্রতিদিনের ডায়েট কিন্তু বেশ ভালো। প্রতিদিন মুরগির পা, পাখনা, চামড়া দিয়ে সকালের নাশতা সারে বড় বিড়ালরা। দুপুর ও রাতের ডায়েটে রয়েছে মাছ বা মাংসের ঝোল দিয়ে মাখা ভাত। এ ছাড়া ছোট বিড়ালদের জন্য আধা লিটার দুধ ও পাউরুটি বরাদ্দ থাকে প্রতিদিন। বিভিন্ন শংকর জাতের বিড়ালের বাচ্চাও বিক্রি করেন আক্তার হোসেন। শখের জিনিস বিক্রি করতে না চাইলেও কারো কারো অনুরোধ নাকি ফেলতে পারেন না আক্তার হোসেন।