কীভাবে এলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট?

Looks like you've blocked notifications!
ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স। ছবি : কোলাইডার

অনেকের কাছেই দুপুরবেলার ঘুম ফেলে চুরি করে টিভি দেখার কারণ ছিল ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। ইংরেজি না বুঝলেও দর্শকরা মুগ্ধ! কার্টুন এমন এক ধরনের শিল্প, যেখানে ভাষা কোনো বাধাই নয়।

‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স’ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা দ্বিতীয় কার্টুন সিরিজ। ১৯৯০ সালের দশকে নির্মিত এবং প্রচারিত সিরিজটির মোট ১১৩টি পর্ব প্রচারিত হয়েছিল তিন বছর ধরে। আলাদা তিনটি সিজনজুড়ে দেখানো হয় ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। এই সিরিজের সিক্যুয়াল প্রচারিত হয়েছে ‘দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার্স অব ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ নামে।  

মূল সিরিজ ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স’ তৈরি করেছিল হান্না-বারবারা কার্টুনস। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালে তাদের কাছ থেকে সিরিজটির স্বত্ব কিনে নেন টেড টার্নার। এরপর টার্নার,  তৃতীয় রবার্ট লারকিন ও বারবারা পাইল মিলে বাকি দুটি সিজন তৈরি করেন।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট সিরিজটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের টিবিএস চ্যানেলে। এর সম্প্রচার শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং শেষ হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৫ ডিসেম্বর। এর সিক্যুয়াল দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার্স অব ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট প্রচারিত হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালের ১১ মে পর্যন্ত।

সিক্যুয়ালটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছিলেন হান্না বারবারা ও টেড টার্নার। শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক এবং আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান হিসেবে কার্টুন সিরিজটি তৈরি করা হয়েছিল।  

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটে চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন ডেভিড কোবার্ন। এ ছাড়া আরেকটি চরিত্র ছিল গায়া নামের। তিনি ছিলেন এদের সবার প্রেরণা। এই চরিত্রটি নেওয়া হয়েছিল গ্রীক উপকথা থেকে, যেখানে গায়া হলো পৃথিবীর প্রতীক। সমুদ্রের মাঝখানে হোপ আইল্যান্ডে ছিল গায়ার বাস। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতেন এই নারী।

গল্প

পৃথিবীকে দূষণ, অপরাধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে পৃথিবীতে পাঁচজন কিশোর-কিশোরীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই পাঁচজন হচ্ছেন প্ল্যানেটিয়ার্স। আর তাদের মিলিত শক্তিতে উদয় হন ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট।

এই পাঁচজন প্ল্যানেটিয়ার্সের চরিত্র নির্মাতারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তৈরি করেছেন। এই পাঁচ কিশোর-কিশোরী এসেছেন সম্পূর্ণ পাঁচ মহাদেশ, গোত্র ও জাতি থেকে। আর সবার কাছেই রয়েছে একটি বিশেষ আংটি এবং প্রতিটি আংটির আলাদা ক্ষমতা।

এসব ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে আর্থ (পৃথিবী), ফায়ার (আগুন), উইন্ড (বাতাস), ওয়াটার (পানি) ও হার্ট (হৃদয়)। এর মধ্যে হৃদয় হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক, যা দিয়ে বোঝানো হয়েছে পৃথিবীতে ভালোবাসা না থাকলে সব শক্তিই বৃথা।

এই পাঁচ শক্তিকে ক্রমিক অনুযায়ী আকাশে ছুড়তে হতো আর্থ, ফায়ার, উইন্ড, ওয়াটার ও হার্ট। সব শক্তির সমন্বয়ে তৈরি হতেন ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। আর সে সময়ে ভেসে আসত একটি দরাজ গলা, ‘লেট আওয়ার পাওয়ার কম্বাইন’। এর পরেই পর্দায় আবির্ভূত হতেন ত্রাতা ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট সিরিজের নির্মাতা পাইল বলেছেন, ১৯৮৯ সালে যখন তিনি গল্পটি নিয়ে ভাবছিলেন তখন বিভিন্ন মানুষের সাথে দেখা হয়। আর সেসব চরিত্র থেকেই তিনি পাঁচটি চরিত্র বেছে নেন কার্টুনের জন্য।

প্ল্যানেটিয়ার্স

কার্টুন সিরিজটির মূল আকর্ষণ ছিল এর পাঁচ প্ল্যানেটিয়ার্স, চলো জেনে নিই তাদের পরিচয়।

১. কোয়াম (Kwame) : পশ্চিম আফ্রিকার অধিবাসী কোয়ামের কাছে ছিল আর্থ পাওয়ার। আফ্রিকার এক আদিবাসী পরিবারে বেড়ে উঠেছে সে। পৃথিবীকে সবুজ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাই কোয়ামের একমাত্র উদ্দেশ্য। কার্টুন সিরিজটিতে কোয়ামকে পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যে সব সময় গাছের যত্ন নেয়। এই চরিত্রটির কণ্ঠ দিয়েছিলেন লেভার বার্টন।

২. গি (Gi) : এশিয়ান বংশোদ্ভূত গি-এর কাছে ছিল ওয়াটার পাওয়ার। সিরিজে গি-র চরিত্রটি ছিল একজন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীর। সমুদ্র ও সামুদ্রিক প্রাণীদের দূষণ থেকে রক্ষা করাই ছিল গি-র মূল উদ্দেশ্য। গি-র চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন জেনিস কায়াওয়ে।

৩. হুইলার (Wheeler) : গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে মাথা গরম হুইলারের। আর তার শক্তিও তাই আগুনের। ফায়ার আংটি ছিল হুইলের আঙুলে। হুইলারের চরিত্রটি ছিল আমুদে এক কিশোরের, যে প্রায়ই ঠাট্টার ছলে লিংকাকে প্রেম নিবেদন করত। হুইলারের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন জয়ি দেদিয়ো।

৪. লিংকা (Linka) : লিংকার জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়নে। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের ভাঙনের পর নির্মিত সিক্যুয়াল সিরিজে লিংকাকে পূর্ব ইউরোপের নাগরিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লিংকার ছিল উইন্ড পাওয়ার। প্রাণিবিদ্যা বিশেষ করে পাখিবিদ্যায় লিংকা ছিল বিশেষজ্ঞ। পরিবেশদূষণ ঠেকানো এবং পাখিদের আবাস রক্ষায় সে সব সময় সোচ্চার ছিল। ইংরেজি এবং রুশ দুই ভাষাতেই সে ছিল পারদর্শী। এই চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কাথ সুসি।

৫. মা-তি (Ma-Ti) : ব্রাজিলের অ্যামাজনের গভীর বনে এক ইন্ডিয়ান ওঝার কাছে বেড়ে উঠেছে মা-টি। তার কাছে রয়েছে হৃদয়ের শক্তি। মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে সে। আগে থেকেই অনেক কিছু আঁচ করতে পারে। গ্রুপের মধ্যে সবার ছোট ছিল মা-তি। এই চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্কট মেনভিল।