শহীদ মিনারকে জানো

Looks like you've blocked notifications!

ছোট্ট রিমি বাবার সাথে বেড়াতে বের হলো। বাবার হাত ধরে সে হাটে আর রাস্তায় যা চোখে যা পড়ে তা জিজ্ঞেস করে ।

এটা কি, ওটা কি? এটা কীভাবে হোল। ওটা কীভাবে হলো। আরো কত কী। আসলে ছোটদের জানার কোনো শেষ নেই।প্রতিটা ব্যাপারে ওদের আগ্রহ অনেক বেশি। রিমির বাবাও তাই খুব সুন্দর করে সব বুঝিয়ে বলে।তারা হাঁটতে হাঁটতে ঢাকা মেডিকেলের সামনে এসে পড়ল, সেখানে রিমির বাবার চোখ পড়ল শহীদ মিনারের ওপর। রিমির বাবা শহীদ মিনারের একপাশে মেয়েকে নিয়ে বসল, বাবা রিমিকে বলল, জানো রিমি এটির নাম কি?

রিমি বলল, কী নাম বাবা?

এর নাম হলো শহীদ মিনার। এটা হলো ভাষা শহীদের প্রতি নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিতে অমর করে রাখার উদ্দেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের প্রাঙ্গণে এই স্তম্ভ নির্মিত হয়। যা বর্তমানে ‘শহীদ মিনার’ নামে পরিচিত।

রিমি বলল, ভাষা আন্দোলন কী বাবা?  

ভাষা আন্দোলন হলো, এই যে তুমি, আমি যে ভাষায় কথা বলছি এটাই ভাষা। এটার জন্যই আন্দোলন করেছে আমাদের দেশের মানুষরা। এটি আমাদের বাংলা ভাষা। মানে মায়ের ভাষা। জানো মামনি আমাদের দেশে কিছু শত্রু ছিল তারা চায়নি আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। কারণ তারা ছিল উর্দুভাষী। যুদ্ধে হেরে গিয়ে অবশেষে শত্রুরা ভয় পেয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা আমাদের দিয়ে দেন। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এর পরিকল্পনা, নির্মাণকাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা নিজেরা সম্পন্ন করে।বর্তমানে শহীদ মিনারের পূর্ব দক্ষিণ কোণে শহীদের রক্ত ভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির  নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর গায়ে শহীদ সৃতিস্তম্ভ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণের পর পরই এটি সবার নজরে আসে। প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। আর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে শহীদ মিনার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতীক স্বরূপ হয়ে ওঠে। প্রতিবছর এখানে দলে দলে হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মান জানাতে ফুল হাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। আর গানের সুরে সুরে বলে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।” বুঝতে পেরেছ?

জী বাবা বুঝতে পেরেছি। রিমি তখন বলল, আমরা ফুল দিব না বাবা?

হ্যাঁ অবশ্যই দিব। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ভোর বেলা আমি, তুমি আর তোমার মা একসাথে খালি পায়ে  ফুল হাতে এখানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসব। এবার চল অন্য জায়গায় ঘুরে আসি। বাবা মেয়ে দুজনেই আবার নতুন কিছু দেখতে উঠে পড়ল।