আমি মালালা বলছি
মৃত্যুর উপত্যকা
বিদায় সংগীত। মধুরতম কণ্ঠ ও নিস্তব্ধ গ্রামের সীমান্তবর্তী তালেবানরা সব কণ্ঠ রুখে দিয়েছে
রেডিও মোল্লা
তালেবানরা যখন আমাদের গ্রামে আসে তখন আমার বয়স ১০। মনিরা ও আমি টোয়াইলাইটের বই পড়ে ভ্যাম্পায়ার হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছিলাম। মনে হতে লাগল, তালেবানরা রাতের বেলা ভ্যাম্পায়ারের মতোই এসেছে। ছুরি ও কালাশনিকভ নিয়ে দলে দলে তারা প্রথমে ঊর্ধ্ব সোয়াতে মাত্তার পাহাড়ি অঞ্চলে আত্মপ্রকাশ করল। শুরুতে তারা নিজেদের তালেবান বলত না এবং তাদের ছবিতে দেখা পাগড়ি পরা এবং কালো কালিসদৃশ চোখওয়ালা আফগান তালিবানের মতো দেখাত না। তারা ছিল লম্বা জটাওয়ালা চুল-দাড়ি, সালওয়ার-কামিজের ওপর কেমোফ্লেজ ওয়েস্টকোট এবং গোড়ালির অনেক ওপরে পায়জামা পরা লোক। তাদের পায়ে থাকত জগিংসু বা সস্তা প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, মাঝেমধ্যে চোখের জন্য গর্তওয়ালা মোজা মাথায় পরত এবং পাগড়ির কিনারে নোংরাভাবে নাক ঝাড়ত। ‘শরীয়ত ইয়া শাহাদাত’ ‘শরীয়তের আইন অথবা শাহাদাতবরণ’ লেখা কালো ব্যাজ বা কালো পাগড়ি তারপা পরত, তাই মানুষ তাদের ‘তর পাতকি’ বা কালো পাগড়ি ব্রিগেড বলত। তারা এত কালো এবং অপরিচ্ছন্ন ছিল যে, বাবার এক বন্ধু তাদের ‘গোসল এবং নাপিত বঞ্চিত ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করত।
তাদের নেতা ছিল ২৮ বছর বয়সী ফজলুল্লাহ যে সোয়াত নদী পার হওয়ার কপিকল চেয়ার পরিচালনা করতেন এবং ছেলেবেলার পোলিওর কারণে ডান পা আছড়ে আছড়ে চলতেন। সে টিএনএসএমের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সুফি মোহাম্মদের মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছিল এবং তাঁর মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ২০০২ সালে জঙ্গিনেতাদের গ্রেপ্তারকালে সুফি মোহাম্মদ যখন গ্রেপ্তার হলেন, ফজলুল্লাহ সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। ভূমিকম্পটার কিছু আগেই ফজলুল্লাহ সোয়াত নদীর ওপারে মিঙ্গোরা থেকে অল্প কয়েক মাইল দূরে ‘ইমাম দেরি’ নামের ছোট একটা গ্রামে আত্মপ্রকাশ করে তাঁর অবৈধ বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন
আমাদের গ্রামে বেশির ভাগ নিরক্ষর বা কোনো টিভি না থাকায় বেশির ভাগ খবর রেডিওর মাধ্যমে পেতাম। দ্রুতই সবার মুখে মুখে রেডিও স্টেশনটির কথা ছড়িয়ে গেল। স্টেশনটার নাম হয়ে গেল মোল্লাহ এফএম এবং ফজলুল্লাহর নাম হলো রেডিও মোল্লা। প্রতি রাতে ৮টা থেকে ১০টা এবং সকালে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সেটা প্রচারিত হতো।
শুরুতে ফজলুল্লাহ অনেক জ্ঞানী ছিলেন। তিনি নিজেকে ইসলামের পুনর্গঠক ও কুরআনে ব্যাখ্যাকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। আমার মা খুবই ধর্মপরায়ণ ছিলেন এবং শুরুতে ফজলুল্লাহকে তাঁর পছন্দ হলো। তিনি তাঁর স্টেশনে মানুষকে ভালো অভ্যাস রপ্ত করতে উৎসাহিত করতেন এবং তাঁর দৃষ্টিতে যেসব অভ্যাস খারাপ সেগুলো ত্যাগ করতে বলতেন। তিনি বলতেন ছেলেদের দাড়ি রাখা উচিত কিন্তু ধূমপান ও তামাক চিবানো বাদ দেওয়া উচিত। তিনি বলতেন হেরোইন ও চরস ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি মানুষকে অজু করার সঠিক পদ্ধতি শেখাতেন কোন অংশ প্রথমে ধুতে হয়, গোপনাঙ্গ কীভাবে ধুতে হয়-সেটাও তিনি মানুষকে বলতেন।
মাঝেমধ্যে তাঁর কণ্ঠ যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ হতো, কেউ কিছু করতে না চাইলে গুরুজনরা যে রকম কণ্ঠে তাঁকে কাজটি করতে বলেন সেই রকম এবং মাঝেমধ্যে সেই কণ্ঠ থাকত ভয়ঙ্কর ও অগ্নিপূর্ণ। ইসলামের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রায়ই ফুঁপিয়ে কাঁদতেন। সাধারণত তিনি কিছুক্ষণ কথা বলতেন, এরপর তাঁর সহকারী শাহ্ দওরান আসতেন, যে সাইকেলে করে বাজারে নাশতা বিক্রি করতেন। তাঁরা মানুষকে গান না শোনা এবং সিনেমা ও নাচ না দেখতে সাবধান করে দিলেন। এ ধরনের পাপ কাজই ভূমিকম্পের কারণ, ফজলুল্লাহ বজ্রকণ্ঠে বললেন এবং মানুষ যদি না থামে তবে তারা আবার স্রষ্টার গজব ডেকে আনবে। মোল্লারা প্রায়ই দেশে কোরআন-হাদিস শেখানোর সময় ভুল ব্যাখ্যা করেন, কারণ খুব কম লোকই মূল আরবিটা বোঝে। ফজলুল্লাহ এই অজ্ঞানতার সুযোগ নিলেন।
‘আবা, সে কি ঠিক বলছে?’ আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম। ভূমিকম্পটার ভয়াবহতা আমার মনে পড়ল। না জানি, বাবা জবাব দিলেন। সে শুধু মানুষকে বোকা বানাচ্ছে।
বাবা বলতেন যে স্টাফ কক্ষে সারাক্ষণ রেডিও স্টেশনটা নিয়েই কথা হতো। তত দিনে আমাদের স্কুলে প্রায় সত্তরজন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিল, প্রায় চল্লিশজন পুরুষ এবং ৩০ জন নারী। কোনো কোনো শিক্ষক ফজলুল্লাহবিরোধী ছিল, কিন্তু অনেকেই ছিল তার পক্ষে। লোকে ভাবত যে সে পবিত্র কুরআনের একজন ভালো ব্যাখ্যাকারী এবং তার ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রশংসা করতেন। তাঁর ইসলামি আইন ফিরিয়ে আনার কথা সবাই পছন্দ করত কারণ পাকিস্তানি বিচারব্যবস্থা নিয়ে সবাই হতাশ ছিল। আমরা পাকিস্তানের অংশ হওয়ার পর এই বিচারব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হয়েছিল। জমি নিয়ে বিবাদ, যা আমাদের এলাকায় খুবই সাধারণ ছিল, সহজেই মীমাংসা হয়ে যেত কিন্তু এখন আদালতে আসতেই ১০ বছর লাগে। সবাই চাইত, উপত্যকায় আসা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তারা চলে যাক। ব্যাপারটা এমন হলো যে সবাই ভাবল ফজলুল্লাহ্ সেই ওয়ালির সময় থেকে আমাদের রাজকীয় প্রদেশটা পুনর্গঠন করবেন।
ছয় মাসের মধ্যেই মানুষ তাদের টিভি, সিডি ও ডিভিডি ফেলে দিতে লাগল। ফজলুল্লাহর লোকেরা সেগুলো বড় বড় স্তূপ করে রাস্তার ওপর রেখে আগুন ধরিয়ে দিত। ঘন কালো ধোঁয়ার মেঘ আকাশে পৌঁছে যেত। শত শত সিডি এবং ডিভিডির দোকানের মালিকরা স্বেচ্ছায় দোকান বন্ধ করে দিল এবং তালেবানরা তাদের ক্ষতিপূরণ দিল। আমি ও আমার ভাইরা টিভি খুব ভালোবাসতাম তাই বেশ চিন্তিত ছিলাম, কিন্তু বাবা নিশ্চয়তা দিলেন, যে আমরা টিভি ফেলছি না। নিরাপত্তার সাথে ওটা আমরা কাবার্ডে ঢুকিয়ে রাখলাম এবং নিচু ভলিউমে শুনতাম। তালেবানরা মানুষের ঘরে দরজায় কান লাগিয়ে শুনত, জোর করে ঢুকত এবং টিভি রাস্তায় আছাড় মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলত। আমাদের পছন্দের বলিউড সিনেমা ফজলুল্লাহ ঘৃণা করতেন এবং ইসলামবিরোধী বলে নিন্দা করতেন। শুধু রেডিও শোনার অনুমতি ছিল এবং তালিবানদের গান বাদে সব ধরনের সংগীত হারাম ঘোষিত হলো।
একদিন বাবা হাসপাতালে তাঁর এক বন্ধুকে দেখতে গিয়ে দেখলেন, অনেক রোগীই ফজলুল্লাহর বক্তৃতার ক্যাসেট শুনছে। তারা বাবাকে বলল, ‘মাওলানা ফজলুল্লাহর সাথে তোমার দেখা করা উচিত। সে অনেক বড় আলেম।
‘তিনি আসলে হাইস্কুল থেকে ঝড়েপড়া ছাত্র এবং তাঁর আসল নামও ফজলুল্লাহ্ নয়, বাবা প্রতিবাদ করে বলতেন, কিন্তু তারা শুনত না। মানুষ ফজলুল্লাহর কথা এবং ধর্মীয় ভাববিলাসিতাকে মেনে নেওয়া শুরু করলে বাবা বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকলেন। তিনি বলতেন, ‘এটা হাস্যকর যে এই কথিত পণ্ডিত অশিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।’
দূরবর্তী দুর্গম এলাকাগুলোয় যেখানে ভূমিকম্পের সময় সরকারের টিকিটিও দেখা না যাওয়া সত্ত্বেও টিএনএসএম স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্য করেছিল, সেখানে ফজলুল্লাহ বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল। কোনো কোনো মসজিদে তারা রেডিওর সাথে সংযুক্ত স্পিকার লাগিয়ে দিল, যাতে গ্রামে ক্ষেতে সবাই তার কথা শুনতে পারে। তাঁর অনুষ্ঠানের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ সন্ধ্যায় আসত, যেখানে তিনি মানুষের নাম ধরতেন। তিনি বলতেন, ‘অমুক সাহেব চরস পান করতেন, কিন্তু এটা পাপকাজ হওয়ার কারণে ত্যাগ করেছেন’ বা ‘ক সাহেব দাড়ি রেখেছেন, তাঁকে আমি অভিনন্দন জানাই, অথবা, ‘খ সাহেব স্বেচ্ছায় তাঁর সিডির দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।’ তিনি বলতেন, এরা পরকালে পুরস্কৃত হবেন। মানুষ রেডিওতে নিজের নাম শুনতে পছন্দ করত; তাদের কোনো প্রতিবেশী পাপী ছিল তা শুনতেও তারা পছন্দ করত এবং বলত ‘তমুক সাহেবের কথা শুনেছ?’
মোল্লা এফএম সেনাবাহিনীকে নিয়ে ঠাট্টা করতেন। ফজলুল্লাহ পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তাদের ‘বিধর্মী’ বলতেন এবং বলতেন, তারা শরীয়ত আইনবিরোধী। তিনি বলতেন যে তারা যদি ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা না করে, তাঁর লোকেরা ‘জোর করে তা করবে এবং কর্মকর্তাদের ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।’ তাঁর অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল সামন্ত প্রথায় খানদের অবিচার। খানদের নিন্দিত হতে দেখে গরিব মানুষ খুশি হলো। তারা ফজলুল্লাহকে এক ধরনের রবিন হুড মনে করত এবং বিশ্বাস করত, তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করলে খানদের জমি গরিবদের দিয়ে দেবেন। কোনো কোনো খান পালিয়ে গেল। বাবা ‘খানত্ব’-এর বিপক্ষে, কিন্তু তিনি বললেন যে তালিবানরা আরো জঘন্য।
বাবার বন্ধু হিদায়াতুল্লাহ পেশাওয়ারে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং আমাদের সাবধান করে দিলেন, ‘জঙ্গিরা এভাবেই কাজ করে। তারা মানুষের মন জয় করতে চায়, তাই তারা প্রথমে স্থানীয় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দায়িত্বে থাকা লোকদের টার্গেট করে এবং এভাবেই নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পায়। ওয়াজিরিস্তানে অপহরণকারী ও ডাকতদের ধাওয়া করে তারা এটাই করেছিল। ক্ষমতায় বসার পর তাড়িয়ে দেওয়া অপরাধীদের মতোই তারা আচরণ করতে লাগল।’
ফজলুল্লাহর ব্রডকাস্টগুলো প্রায়ই নারীদের প্রতি লক্ষ করে হতো। তিনি অবশ্যই জানতেন এখানকার অনেক পুরুষ দক্ষিণে কয়লা খনিতে বা উপসাগরে নির্মাণকাজে বাহিরে গেছে। মাঝেমধ্যে তিনি বলতেন, ‘পুরুষরা এখন বাইরে যাও। আমি মহিলাদের সাথে কথা বলছি।’ এরপর তিনি বলতেন, ‘মহিলাদের উচিত ঘরের দায়িত্ব পালন করা। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে, কিন্তু তখন তাদের নেকাব পরতে হবে।’ মাঝেমধ্যে তাঁর লোকরা ‘অধঃপতিত’ নারীদের লজ্জা দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া ফ্যান্সি পোশাক প্রদর্শন করত।
স্কুলে বান্ধবীরা বলত যে মারিয়াম ম্যাডাম নিষেধ করা সত্ত্বেও তাদের মায়েরা মোল্লা এফএম শোনে। বাসায় আমাদের শুধু দাদার ভাঙ্গা রেডিওটা ছিল, কিন্তু মায়ের বান্ধবীরা সবাই শুনত এবং মাকে বলত। তারা ফজলুল্লাহর লম্বা চুল, ঘোড়ায় চড়ার কায়দা, নবীজীর মতো আচরণের প্রশংসা করত। মহিলারা তাদের স্বপ্ন তাঁকে বলত এবং তিনি তাদের জন্য দোয়া করতেন। মা এই গল্পগুলো উপভোগ করতেন, কিন্তু বাবা আতঙ্কিত হয়ে গেলেন।
আমি ফজলুল্লাহর কথায় বিভ্রান্তিতে ভুগতে লাগলাম। ছেলেদের বাইরে যেতে হবে এবং মহিলাদের সারাদিন ঘরে কাজ করতে হবে পবিত্র কুরআনে এটা লেখা নেই। স্কুলে ইসলাম শিক্ষা ক্লাসে আমরা ‘নবীজীর জীবনচরিত্র’ নামের রচনা লিখতাম। আমরা শিখতাম যে নবীজীর (সা.) প্রথম স্ত্রী ছিলেন খাদিজা (রা.) নামের একজন ব্যবসায়ী। তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর, নবীজীর (সা.) চেয়ে ১৫ বছরের বড়। তাঁর আগেও বিয়ে হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তিনি নবীজীকে (সা.) বিয়ে করেন। আমার নিজের মাকে দেখেও আমি বুঝতে পারি, পশতুন নারীরা খুবই শক্তিশালী। তাঁর মা, আমার নানি, নানা দুঘর্টনায় শ্রোণি ভেঙ্গে আট বছর বিছানায় পড়ে থাকার সময় আট সন্তানকেই লালন-পালন করেছেন।
একটি লোক বাইরে কাজে যায়, মজুরি পায়, বাড়ি ফেরে, খায়, ঘুমায়। সে এটাই করে। আমাদের লোকরা ভাবে, অর্থ উপার্জন এবং নির্দেশ দিয়ে বেড়ানোই ক্ষমতা। তারা ভাবে না, যে নারী সারাদিন সবার খেয়াল রাখে এবং তাদের সন্তান জন্ম দেয়, তার হাতে ক্ষমতা আছে। আমাদের বাসায়, বাবা ব্যস্ত থাকায় মা-ই সব ব্যবস্থা করতেন। মা-ই ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, স্কুলের পোশাক ইস্ত্রি করতেন, নাশতা তৈরি করতেন এবং আদব-কায়দা শেখাতেন। মা-ই বাজারে দোকানে যেতেন, রান্না করতেন। এই সবই তিনি করতেন।
তালিবানের প্রথম বছর আমার দুটো অস্ত্রোপচার হয়েছিল-একটা অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ, অন্যটা টনসিল অপসারণ। খুশালেরও অ্যাপেন্ডিক্স সরাতে হয়েছিল। মা-ই আমাদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন; বাবা শুধু আমাদের জন্য আইসক্রিম এনেছিলেন। তবু মা বিশ্বাস করতেন যে কুরআনে লেখা আছে মহিলাদের বের হওয়া উচিত নয় এবং অনাত্মীয় পুরুষের সাথে কথা বলা উচিত নয়। বাবা তাঁকে বলতেন, ‘পেকাই, শুধু নেকাবের মধ্যেই পর্দা নেই, পর্দা হলো হৃদয়ে।’
ফজলুল্লাহর কথায় অনেক নারী এতই আলোড়িত হলো যে তাঁকে তারা অর্থ এবং সোনা দিয়ে দিল, বিশেষত দরিদ্র গ্রাম বা গৃহস্থবাড়িতে, যেখানে স্বামীরা বাইরে কাজ করে। মহিলাদের বিয়ের চুড়ি ও হার দেওয়ার জন্য টেবিল পাতা হয়েছিল এবং মহিলারা লাইন ধরে তা করত অথবা তাদের পুত্রদের পাঠাত। কেউ কেউ সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে দিত, বিশ্বাস করত আল্লাহ এতে খুশি হবেন। সে ইমাম দেরিতে বিশাল লাল-ইট বসানো হেডকোয়ার্টাস নির্মাণ করলেন, তাতে মাদ্রাসা এবং মসজিদ সংযুক্ত করলেন, এবং একে সোয়াত নদী থেকে রক্ষা করার জন্য মাটির বাঁধ দিলেন। কেউ জানে না তিনি কোথায় সিমেন্ট এবং লোহার বার পেলেন, কিন্তু কর্মী ছিল স্থানীয়। প্রতিটা গ্রাম পালাক্রমে একদিন একদিন করে সেটা নির্মাণে তাদের লোক পাঠাল। একদিন আমাদের এক উর্দু শিক্ষক নওয়াব আলী বাবাকে বললেন, ‘আমি কাল স্কুলে আসব না।’ বাবা কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সে বোঝাল, ফজলুল্লাহর ভবন নির্মাণে কাল আমাদের গ্রামের পালা।
‘ছাত্রদের শেখানোই আপনার প্রধান দায়িত্ব’- বাবা বললেন। নওয়াব আলী জবাব দিল, ‘না, এটা আমাকে করতে হবে।’
বাবা ফুঁসতে ফুঁসতে বাড়ি ফিরলেন। ‘মানুষ যদি স্কুল বা রাস্তা নির্মাণে অথবা প্লাস্টিক মোড়কগুলো নদী থেকে তুলতেও এভাবে এগিয়ে আসত, আল্লাহর কসম পাকিস্তান এক বছরের মধ্যে স্বর্গ হয়ে যেত।’ তিনি বললেন, ‘তারা দান বলতে শুধু মসজিদ আর মাদ্রাসাই বোঝে।’
কয়েক সপ্তাহ পর সেই একই শিক্ষক এসে বাবাকে বললেন, মাওলানা পছন্দ করেন না বলে তিনি মেয়েদের আর পড়াবেন না।
বাবা তাঁর মানসিকতা বদলানোর চেষ্টা করলেন। ‘নারী শিক্ষকই মেয়েদের পড়াবে, এ কথায় আমি একমত, বাবা বললেন, ‘কিন্তু তার আগে মেয়েদের শিক্ষক বানানোর জন্য তো তাদের শিক্ষাদান করা প্রয়োজন।’
একদিন সুফি মোহাম্মদ কারাগার থেকে ঘোষণা দিলেন, মেয়েদের জন্য মহিলা মাদ্রাসাতেও কোনো শিক্ষা দেওয়া উচিত নয়। ‘কেউ যদি ইহিতাসে আমাকে এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে যে ইসলামে মহিলা মাদ্রাসার বৈধতা আছে, সে এসে আমার দাড়িতে মূত্রত্যাগ করতে পারে’, তিনি স্কুল প্রশাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগলেন এবং স্কুল ছেড়ে দেওয়া মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে লাগলেন। ‘বেগম অমুক স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং সে বেহেশতে যাবে, তিনি বলতেন, অথবা, ‘ক গ্রামের খ সাহেবা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে। তাকে আমার অভিনন্দন। আমার মতো যে মেয়েরা এখনো স্কুলে যায় তাদের সে মহিষ এবং ভেড়া সম্বোধন করলেন।
আমি এবং আমার বন্ধুরা বুঝতেই পারলাম না, এতে কী সমস্যা। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তারা কেন মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে চায় না ?’
‘তারা কলম ভয় পায়’, বাবা উত্তর দিলেন। এরপর লম্বা চুলওয়ালা এক অঙ্ক শিক্ষকও মেয়েদের পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। বাবা তাঁকে বরখাস্ত করলেন, কিন্তু কিছু শিক্ষক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে অফিসে প্রতিনিধি পাঠাল। ‘স্যার, এটা করবেন না’, তাঁরা অনুরোধ করলেন। ‘খারাপ সময় চলছে। তাকে থাকতে দিন, আমরা তাঁর হয়ে কভার করে নেব।’
প্রতিদিনই নতুন নতুন ডিক্রি আসতে লাগল। ফজলুল্লাহ বিউটি পার্লার এবং নাপিতের দোকান বন্ধ করে নাপিতদের বেকার করে দিলেন। আমার বাবার শুধু গোঁফ ছিল এবং তিনি জিদ ধরে রইলেন যে তালেবানদের জন্য তিনি দাড়ি রাখবেন না। তালেবানরা বলল, মহিলাদের বাজারে যাওয়া উচিত না। আমি চীনাবাজারে না যেতে পারলেও কিছু যায় আসে না। আমি কেনাকাটা উপভোগ করতাম না, কিন্তু আমাদের স্বচ্ছলতা কম থাকলেও মা সুন্দর সুন্দর জামা পছন্দ করতেন। মা সবসময় আমাকে বলতেন, ‘চেহারা লুকাও-লোকজন তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’ আমি জবাব দিতাম, ‘তাতে কিছু যায়-আসে না। আমিও তাদের দিকে তাকাচ্ছি- এতে মা রেগে যেতেন।
মা ও তাঁর বান্ধবীরা বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে কেনাকটা করতে না পেরে মন খারাপ করতে লাগলেন, কারণ তখন আমরা সৌন্দর্য চর্চা করি, পরীবাতি দ্বারা সজ্জিত দোকান থেকে চুড়ি ও মেহেদি কিনি। সব বন্ধ হয়ে গেল। বাজারে গেলে মহিলাদের আক্রমণ করা হবে না, কিন্তু তালেবানরা চিৎকার করে ভয় দেখাবে যত দিন না তারা বাসায় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একজন তালিবান পুরো গ্রামটাকেই সন্ত্রস্ত করে তুলতে পারে। আমরা শিশুরাও রেগে ছিলাম। সাধারণত ছুটির সময় কিছু ছবি মুক্তি পায়, কিন্তু ফজলুল্লাহ ডিভিডির দোকান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ সময় মা ফজলুল্লাহর ব্যাপারে বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন। বিশেষত যখন থেকে তিনি শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো শুরু করলেন এবং জোড় দিয়ে বললেন যারা স্কুলে যায় তারা দোজখে যাবে।
এরপর ফজলুল্লাহ ‘শুরা’ নামক স্থানীয় আদালত পরিচালনা করা শুরু করলেন। মানুষ এটা পছন্দ করল কারণ বিচারকার্য দ্রুত হতো, যেখানে পাকিস্তানি আদালতে বছরের পর বছর অপেক্ষা হয় এবং শুনানির জন্য ঘুষ দিতে হয়। মানুষ ব্যবসা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বিরোধ-সব সমস্যা সমাধানের জন্য ফজলুল্লাহর কাছে গেল। এক লোক বাবাকে একদিন বলল, ‘আমার ৩০ বছরের পুরনো একটি সমস্যা এখানে একবারেই সমাধান হয়ে গেছে।’ আমার বাবাকে ওই লোক বলল, ফজলুল্লাহর ‘শুরা’-তে ডিক্রিকৃত শাস্তির মধ্যে ছিল জনসমক্ষে চাবুক মারা, যা আমরা আগে দেখিনি। বাবার এক বন্ধু তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি দেখেছেন, শুরায় দুই নারীকে অপহরণে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন ব্যক্তি জনসমক্ষে চাবুক খাচ্ছে। ফজলুল্লাহর সেন্টারের কাছে মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। শুক্রবারের নামাজের পর শত শত লোক চাবুকের আঘাত দেখতে জড়ো হলো এবং প্রতিটা আঘাতের পর ‘আল্লাহু আকবার! আল্লাহ মহান’ বলে চিৎকার করছিল। মাঝেমধ্যে একটি কালো ঘোড়ার পিছে ফজলুল্লাহকে দেখা যাচ্ছিল।
তাঁর লোকজন পোলিও ড্রপ দেওয়া থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরত রাখল। তারা বলল, টিকাদান হলো মুসলিম নারীদের বন্ধ্যাকরণের জন্য মার্কিনিদের কূটচাল, যাতে সোয়াতের লোক মরে শেষ হয়ে যায়। ‘রোগের আক্রমণের আগেই তার উপশম শরীয়তের আইনে বৈধ নয়’, ফজলুল্লাহ বলল রেডিওতে। ‘সোয়াতে এই টিকার এক ফোঁটাও কোনো শিশু খাবে না।’
ফজলুল্লার লোকজন তার ডিক্রির বিরোধীদের খোঁজ রাখার জন্য রাস্তায় টহল দিতে লাগল, যেমনটা আমরা শুনেছিলাম আফগানিস্তানে তালিবান মোরালিটি পুলিশের নামে। তারা ‘ফ্যালকন কমান্ডোজ’ নামের স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিল, যারা পিক-আপ ট্রাকের ওপর মেশিনগান নিয়ে বসে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত।
কেউ কেউ খুশিই ছিল একদিন হঠাৎ ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে বাবার দেখা হয়ে গেল। ‘ফজলুল্লাহ একটা কাজ ভালো করেছে মহিলাদের চীনাবাজরে যেতে দিচ্ছে না, এতে আমাদের পুরুষদের টাকা বাঁচে’, তিনি বললেন। অল্প কিছু লোক প্রতিবাদ করল। বাবা অভিযোগ করলেন যে বেশি ভাগই আমাদের স্থানীয় নাপিতের মতো যে একদিন বাবার কাছে গজগজ করে বলছিল যে তার কাছে মাত্র আশি রুপি আছে তার আগের আয়ের দশ ভাগের এক ভাগেরও কম। ঠিক তার আগের দিনই সে এক সাংবাদিককে বলছিল, তালিবানরা ভালো মুসলিম।
মোল্লা এফএমের এক বছর পার হওয়ার পর ফজলুল্লাহ আরো আগ্রাসী হয়ে উঠল। ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষদিকে বাজাউরের মাদ্রাসায় মার্কিন ড্রোন হামলায় তার ভাই মাওলানা লিয়াকত এবং তার তিন ছেলে মারা যায়। ১২ বছরের শিশু বালক এবং সোয়াতিসহ আশিজন নিহত হয়। হামলায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই এবং লোকজন প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করল। ১০ দিন পর আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইসলামাবাদ থেকে সোয়াতে আসার রাস্তায় দরগাই-এর আর্মি বারাকে ৪২ জন পাকিস্তানি সেনা মারা যান। তখন পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলা প্রায় ছিলই না-ওই হামলা মোট ছয়টা হয়েছিল-এবং সেটাই ছিল পাকিস্তানি জঙ্গি দ্বারা পরিচালিত সর্ববৃহৎ হামলা।
ঈদে আমরা সাধারণত ছাগল বা ভেড়া উৎসর্গ করি। কিন্তু ফজলুল্লাহ বললেন, ‘এই ঈদে দুই-পাওয়ালা প্রাণী কোরবানি হবে।’ শিগগিরই তাঁর কথার অর্থ বোঝা গেল। তাঁর লোকজন ধর্মনিরপেক্ষ এবং জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলের লোকজন বিশেষত আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) কর্মী এবং খানদের হত্যা করা শুরু করল। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমার বাবার এক বন্ধু আশিজন মুখোশধারী বন্দুকধারী ব্যক্তির মাধ্যমে নিজ গ্রাম থেকে অপহৃত হন। তাঁর নাম ছিল মালাক বাখত বাইদার। তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দেহটা পাওয়া গিয়েছিল। হাত-পা সবকিছু ভাঙ্গা ছিল। সোয়াতে ওটাই প্রথম টার্গেটেড কিলিং এবং লোকে বলত সে তালিবানের লুকিয়ে থাকা লোকদের খুঁজে বের করতে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিল বলেই এটা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে রইল। প্রদেশীয় সরকার তখনো মোল্লা পার্টিরাই চালাচ্ছিল এবং ইসলামের জন্য যুদ্ধরত বলে কেউ দাবি করলে তাঁর সমালোচনা করা হতো না। শুরুতে আমরা ভাবতাম, সোয়াতের সর্ববৃহৎ শহর মিঙ্গোরায় আমরা নিরাপদ। কিন্তু ফজলুল্লাহর প্রধান কার্যালয় ছিল মাত্র কয়েক মাইল দূরে এবং তালেবানরা আমাদের বাড়ির আশাপাশে না থানা সত্ত্বেও তারা বাজারে, রাস্তায় এবং পাহাড়ে ছিলেন। বিপদ ঘনিয়ে আসছিল।
ঈদে অন্যান্য বারের মতোই গ্রামের বাড়িতে গেলাম। আমি আমার জ্ঞাতিভাইয়ের গাড়িতে ছিলাম এবং রাস্তা ঘুরে যাওয়া একটা এলাকায় নদীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় একটা তালিবান চেকপয়েন্টে আমাদের থামতে হলো। আমি মায়ের সাথে পেছনে বসেছিলাম। আমার জ্ঞাতিভাই তাঁর ক্যাসেটগুলো তাড়াতাড়ি আমাদের পার্সে লুকাতে দিয়ে দিল। তালেবানরা কালো কাপড় পরে ছিল এবং হাতে ছিল কালাশনিকভ। তারা বলল, ‘বোনেরা তোমরা লজ্জা ডেকে আনছ। তোমাদের বোরখা পরা উচিত।’
ঈদের পর স্কুলে ফিরে এসে , দেখি, গেটের সাথে টেপদিয়ে একটি চিঠি লাগানো আছে। ‘জনাব আপনি যে স্কুলটা চালাচ্ছেন সেটা পশ্চিমা এবং বিধর্মী’, সেখানে লেখা ছিল, ‘আপনারা মেয়েদের পড়ান এবং একটি অ-ইসলামিক ইউনিফর্ম দিয়েছেন। এটা থামান, নতুবা আপনি ঝামেলায় পড়বেন এবং আপনার সন্তানরা আপনার জন্য কাঁদবে।’ স্বাক্ষর করা ছিল ‘ইসলামের ফেদায়িন’।
বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন, ছেলেদের স্কুলড্রেস শার্ট, ট্রাউজার থেকে সালওয়ার-কামিজে রূপান্তর করবেন-ঝোলা পায়জামার মতো ট্রাউজার এবং লম্বা শার্ট। আমাদের ইউনিফর্ম ছিল রয়েল ব্লু সালওয়ার কামিজ এবং সাদা দোপাট্টা বা মাথায় দেওয়ার ওড়না এবং স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় মাথা আবৃত রাখার পরামর্শ দেওয়া হলো।
বাবার বন্ধু হিদায়াতুল্লাহ তাঁকে শক্ত থাকার পরামর্শ দিলেন। ‘জিয়াউদ্দিন, তোমার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে, তুমি তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করতে পারবে।’ তিনি বললেন, ‘জীবন শুধু অক্সিজেন গ্রহণ আর কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তালেবানের সবকিছু মেনে নিয়ে তুমি সেখানে থাকতে পার, আবার তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে পার।’
হিদায়াতুল্লাহর কথা বাবা আমাদের বললেন। এরপর তিনি স্থানীয় খবরের কাগজ দৈনিক আজাদীতে একটা চিঠি লিখলেন। ইসলামের ফেদায়িন (ইসলামের জন্য আত্মত্যাগকারীদের উদ্দেশ্যে, এটা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সঠিক পন্থা নয়।’ তিনি লিখলেন, ‘দয়া করে আমার বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি করবেন না, কারণ আপনারা যে আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তারা প্রতিদিন সেই আল্লাহর কাছেই দোয়া করে। আপনারা আমার প্রাণ নিতে পারেন কিন্তু আমার স্কুলের বাচ্চাদের মারবেন না।’ বাবা খবরের কাগজটা দেখে খুবই অখুশি হলেন। চিঠিটা ভেতরের একটা পৃষ্ঠায় কোনোমতে ছাপা হয়েছিল এবং তারা আশাতীতভাবে বাবার নাম ঠিকানা ছেপে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক মানুষ বাবাকে অভিনন্দন জানাল। ‘তুমি স্থির পানিতে প্রথম পাথরটা ছুড়েছ’, তারা বলল, ‘এখন আমরা কথা বলার সাহস পাব।’
(চলবে)