আমি মালালা বলছি

টফি, টেনিস বল এবং সোয়াতের বুদ্ধ

Looks like you've blocked notifications!

প্রথমে তালেবান আমাদের গান কেড়ে নিল, তার পর আমাদের বুদ্ধ এবং এর পর আমাদের ইতিহাস। স্কুল থেকে ট্রিপে যাওয়া ছিল আমার অন্যতম প্রিয় কাজ। সোয়াতের মতো স্বর্গে থাকার ভাগ্য আমাদের হয়েছিল, যেখানে বেড়ানোর অনেক কিছু আছে—জলপ্রপাত, হ্রদ, স্কি রিজোর্ট, ওয়ালির প্রাসাদ, বুদ্ধমূর্তি, সোয়াতের আখুন্দের সমাধি। প্রতিটি স্থানেরই কাহিনী ছিল। আমরা পূর্ববর্তী সপ্তাহগুলোয় বেড়ানো নিয়ে কথা বলতাম এবং বহুল প্রতীক্ষিত দিনটি এলে আমরা সুন্দর সুন্দর জামা পরে হাঁড়ি হাঁড়ি মুরগির মাংস এবং ভাত নিয়ে বাসে চড়ে বসতাম। কেউ কেউ ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতাম। দিন শেষে বাবা পালাক্রমে আমাদের পাথরের ওপর দাঁড় করিয়ে সারা দিন কী দেখেছি, তা বর্ণনা করতে বলতেন। ফজলুল্লাহ আসার পর আমরা আর স্কুল ট্রিপে যেতাম না। মেয়েদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।

তালেবান আমাদের বুদ্ধমূর্তি এবং স্তূপা ধ্বংস করে দিয়েছিল, যেখানে আমরা খেলতাম, যেগুলো হাজার বছর ধরে টিকে ছিল এবং কুশান রাজাদের আমল থেকে যেগুলো আমাদের ইতিহাসের অংশ ছিল। তারা বিশ্বাস করত, মূর্তি বা চিত্রাঙ্কন হারাম, পাপকাজ এবং তাই নিষিদ্ধ। এক কালো দিনে তারা জেহানাবাদ বুদ্ধের মুখটা ডিনামাইট দিয়ে ফাটিয়ে দিল, যেটা মিঙ্গোরা থেকে আধঘণ্টার দূরত্বে একটি পর্বতের পাশে খোদাই করা হয়েছিল এবং ২৩ ফুট উঁচু ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলেন, আফগান তালেবানের গুঁড়িয়ে দেওয়া বামিয়ানের বুদ্ধের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটা। তারা এটা দুবারে ধ্বংস করেছিল। প্রথমবার তারা ড্রিল দিয়ে পাথরে গর্ত করে ডিনামাইট ভরে দিয়েছিল, কিন্তু তা কাজ করেনি। কয়েক সপ্তাহ পর ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবরে তারা আবার চেষ্টা করে। এবার তারা বুদ্ধের চেহারা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যে মুখ সপ্তম শতক থেকে উপত্যকাটা দেখছিল। তালেবান আমাদের চারুকলা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের শত্রু হয়ে উঠল। সোয়াত জাদুঘর হেফাজতের উদ্দেশ্যে তাদের সংগ্রহ সরিয়ে ফেলল। তারা পুরোনো সবকিছু ধ্বংস করে ফেলল, কিন্তু নতুন কিছুই আনল না। তারা খনিসহ পান্না পর্বত দখল করে নিল এবং তাদের বিশ্রী অস্ত্রগুলো কিনতে সুন্দর পাথরগুলো বিক্রি করে দিল। আমাদের মূল্যবান গাছগুলো যারা লাকড়ির জন্য কেটে ফেলত, তাদের কাছ থেকে তারা অর্থ নিত এবং তাদের ট্রাক পার করানোর জন্য আরো অর্থ নিত।

রেডিও কাভারেজটা উপত্যকা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ল। আমাদের যদিও টেলিভিশন ছিল, তারা কেবল চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। মনিরা ও আমি আমাদের প্রিয় বলিউড অনুষ্ঠান ‘শারারাত’ বা ‘মেকিং মিসচিফ’ আর দেখতে পারতাম না। মনে হতে থাকল, তালেবান আমাদের কিছুই করতে দিতে চায় না। তারা ক্যারম খেলাও বন্ধ করে দিল, যেখানে কাঠের বোর্ডের ওপর টোকা দিয়ে ঘুঁটি খেলতাম আমরা। আমরা কাহিনী শুনতাম যে তালেবান বাচ্চাদের হাসির শব্দ শুনে হঠাৎ ঘরে ঢুকে যেত এবং বোর্ডটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলত। আমাদের মনে হলো, তালেবান আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছোট পুতুল মনে করে এবং কী করতে হবে, তা কীভাবে পোশাক পরতে হবে তা-ও তারা শিখিয়ে দেবে। আমার ধারণা, আল্লাহ আমাদের ও রকম করতে চাইলে তিনি সবাইকে আলাদা করে সৃষ্টি করতেন না।

একদিন আমরা দেখতাম, আমাদের শিক্ষিকা মিস হামেদা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মাত্তার ছোট্ট শহরে তাঁর স্বামী পুলিশ ছিলেন এবং ফজলুল্লাহর লোকজন আকস্মিক আক্রমণে তাঁর স্বামীসহ অনেক পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে। আমাদের উপত্যকায় সেটাই ছিল প্রথম তালেবান হামলা। দ্রুতই তারা বহু গ্রাম দখল করে ফেলল। ফজলুল্লাহর টিএনএসএমের সাদা-কালো পতাকা পুলিশ স্টেশনে উড়তে থাকল। জঙ্গিরা মেগাফোন নিয়ে গ্রামে ঢুকত এবং পুলিশ পালিয়ে যেত। অল্প সময়ের মাঝেই তারা ৫৯টি গ্রাম দখল করে নিজেদের সমান্তরাল প্রশাসন স্থাপন করে ফেলল। পুলিশরা প্রাণ নিয়ে এতই ভয়ে ছিল যে তারা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিল।

এত কিছু ঘটার পরও কেউ কিছু করল না। সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। বাবা বলতেন, মানুষ ফজলুল্লাহর দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েছে। কেউ কেউ উন্নত জীবনের আশায় তার দলে যোগ দিল। বাবা তাদের মতবাদের পাল্টা জবাব দিতে চাইলেন, কিন্তু সেটা কঠিন ছিল। তিনি মজা করে বলতেন, ‘আমার কোনো এফএম রেডিও বা জঙ্গি নেই।’ তিনি এমনকি রেডিও মোল্লার নিজ গ্রামে ঢুকে একটি স্কুলে বক্তৃতা দেওয়ার সাহস করেছিলেন। অস্থায়ী সেতুরূপে ব্যবহৃত পুলিতে ঝোলানো ধাতুর বাক্সে করে তিনি নদী পেরিয়েছিলেন। পথে তিনি মেঘছোঁয়া ভীষণ কালো ধোঁয়া দেখলেন। প্রথমে তিনি কোনো ইটভাটার কথা ভাবলেন, কিন্তু কাছে যেতেই পাগড়ি পরা দাড়িওয়ালা লোকদের দেখলেন, যারা টিভি এবং কম্পিউটার পোড়াচ্ছে। সেই স্কুলে বাবা লোকজনকে বলল, ‘আমি দেখলাম, তোমাদের গ্রামবাসী এসব পোড়াচ্ছে। তোমরা কি বোঝ না, এতে শুধু জাপানের কোম্পানিগুলোরই লাভ হবে, তারা এসব জিনিস আরো বেশি তৈরি করবে?’

কেউ একজন এসে তাঁকে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘এভাবে আর কখনো কথা বলবেন না, এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের মতোই কর্তৃপক্ষ কিছুই করল না।

মনে হতে লাগল, পুরো দেশটা পাগল হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের বাকি অংশকে অন্য কিছু হাত করে রেখেছিল—তালেবান আমাদের রাজধানী ইসলামাবাদের ঠিক মধ্যখানে পৌঁছে গিয়েছিল। আমরা খবরে ‘বোরখা ব্রিগেড’-এর ছবি দেখতে লাগলাম, আমাদের মতো মহিলা এবং যুবতীরা বোরখা পরে লাঠি হাতে ইসলামাবাদের প্রাণকেন্দ্রে বাজারে সিডি ও ডিভিডির দোকানে আক্রমণ করছে।

মেয়েগুলো ছিল আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ মহিলা মাদ্রাসা জামিয়া হাফসার ছাত্রী, আর মাদ্রাসাটি ছিল ইসলামাবাদের লাল মসজিদের অংশ। ১৯৬৫ সালে নির্মিত মসজিদটির নামকরণ হয়েছিল এর দেয়ালের লাল রং থেকে। আইএসআইয়ের প্রধান কার্যালয় এবং জাতীয় সংসদ থেকে মাস কয়েক ব্লক দূরে এই মসজিদে অনেক সরকারি কর্মকর্তা এবং মিলিটারি প্রার্থনা করতে যেতেন। মসজিদটায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য দুটো আলাদা মাদ্রাসা ছিল, যেগুলো আফগানিস্তান এবং কাশ্মীরে যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে বছরের পর বছর ব্যবহৃত হয়েছে। আবদুল আজিজ ও আবদুর রাশিদ দুই ভাই এটা চালাত এবং আবদুর রাশিদ কান্দাহারে মোল্লা ওমরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল, সেই বিন লাদেনের মতাদর্শ ছড়ানোর কেন্দ্র হয়ে উঠল এটা। ভাইয়েরা তাদের জ্বালাময়ী বক্তৃতার জন্য বিখ্যাত ছিল এবং বিশেষত, নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর তারা হাজার হাজার সমর্থক পেয়েছিল। প্রেসিডেন্ট মোশাররফ আমেরিকাকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সহযোগিতা করতে রাজি হন, আর তখনই মসজিদটা সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বিস্তৃত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠল। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে মোশাররফের গাড়িবহর উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে আবদুর রাশিদ অভিযুক্ত হয়। অনুসন্ধানকারীরা বলল, ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলো লাল মসজিদে মজুদ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সে কয়েক মাস পরই মুক্তি পেয়ে যায়।

মোশাররফ ২০০৪ সালে ওয়াজিরিস্তানে সেনা পাঠালেন, ফলে ফাটা এলাকায়ও সামরিক অভিযান শুরু হয়। তখন আবদুল আজিজ ও আবদুল রাশিদ এ অভিযানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। ইসলামী বিচারব্যবস্থা সমৃদ্ধ নিজস্ব আদালত স্থাপন করে। এ সময় জঙ্গিরা পুলিশ অপহরণ করা শুরু করল এবং সরকারি ভবনে লুটতরাজও চালায়।

কী করা উচিত, তা মোশাররফ সরকার জানে বলে মনে হলো না। সম্ভবত সেনাবাহিনী মসজিদটার সঙ্গে সংযুক্ত বলেই এমনটা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেল যে মানুষ ভাবতে লাগল, জঙ্গিরা রাজধানী দখল করে নেবে। এটা প্রায় অবিশ্বাস্য, ইসলামাবাদ সাধারণত খুবই শান্ত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে, দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আলাদা। শেষ পর্যন্ত জুলাইন মাসের ৩ তারিখের সন্ধ্যায় ট্যাংক এবং অস্ত্রধারী কর্মচারীদের নিয়ে কমান্ডোরা মসজিদ ঘিরে ফেলল। তারা এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিল এবং সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ এবং বন্দুকের শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠল। সৈন্যরা মসজিদ ঘিরে দেয়ালে গর্ত করে ফেলল এবং কম্পাউন্ডে হামানদিস্তা বর্ষণ করতে লাগল। কামানওয়ালা হেলিকপ্টার ওপরে চক্কর দিতে লাগল। লাউডস্পিকারে করে তারা মেয়েদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাল।

মসজিদের অনেক জঙ্গি এর আগে আফগানিস্তান বা কাশ্মীরে যুদ্ধ করেছে। তারা নিজেদের ঘেরাও করে ফেলল, কংক্রিটের বাঙ্কার এবং বালুর বস্তার ব্যারিকেডে থাকল তারা এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবকরা বাইরে জড়ো হয়ে মেয়েদের ফোন করে বেরিয়ে আসতে বললেন। কেউ কেউ রাজি হলো না, বলল যে তাদের শিক্ষকরা শিখিয়েছেন, শহীদ হওয়া অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার।

পরদিন সন্ধ্যায় মেয়েদের ছোট একটা দলের আগমন ঘটল। তাদের মধ্যে বোরখা পরে ছদ্মবেশে ছিল আবদুল আজিজ, সঙ্গে তার মেয়ে। কিন্তু তার স্ত্রী ও ছোট ভাই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভেতরে থাকল এবং বাইরের সৈন্যদলের সঙ্গে জঙ্গিদের নিয়মিত গুলিবিনিময় হতে থাকল। জঙ্গিদের কাছে স্প্রাইটের বোতল দিয়ে তৈরি পেট্রলবোমা ও আরপিজি ছিল। ৯ জুলাই পর্যন্ত এই অবরোধ চলল এবং সেদিন স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার এক লুকিয়ে থাকা জঙ্গির গুলিতে নিহত হলো। মিলিটারি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে কম্পাউন্ড আক্রমণ করল।

এ অভিযানের নাম তারা দিয়েছিল অপারেশন সাইলেন্স, যদিও অনেক শব্দ হয়েছিল। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এমন যুদ্ধ আর কখনো হয়নি। আবদুর রাশিদ ও তার অনুসারীদের একটা বেজমেন্টে খুঁজে পেয়ে হত্যা না করা পর্যন্ত কমান্ডোরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সব কক্ষ তল্লাশি চালায়। ১০ জুলাই অবরোধের সমাপ্তির পর দেখা গেল, কয়েকজন সৈন্য এবং বেশ কিছু শিশুসহ প্রায় ১০০ মানুষ মারা গেছে। খবরে ধ্বংসস্তূপের লোমহর্ষক ছবি দেখা গেল, সবখানে রক্ত এবং ভাঙা কাচ আর মৃতদেহ। আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে আমরা দেখতে লাগলাম। ওই দুই মাদ্রাসার কিছু ছাত্র সোয়াতি ছিল। আমাদের রাজধানী এবং মসজিদে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে? মসজিদ আমাদের জন্য একটি পবিত্র স্থান।

লাল মসজিদ অবরোধের পরই সোয়াতে তালেবান পাল্টে গেল। আমার জন্মদিন হওয়ার কারণে সেদিনটা আমার মনে আছে, ১২ জুলাই সেদিন ফজলুল্লাহ তার আগের ঠিকানাগুলোর চেয়ে খুবই আলাদা একটা ঠিকানা রেডিওতে ঘোষণা দিল। সে লাল মসজিদ আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করল এবং আবদুর রাশিদ হত্যার শোধ নেওয়ার শপথ করল। এর পর সে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

এটাই ছিল সত্যিকারের সমস্যার শুরু। ফজলুল্লাহ এখন লাল মসজিদের নামেই হুমকি দিতে পারবে এবং তালেবানের পক্ষে তার সমর্থন একত্র করতে পারবে। কয়েক দিন পর তারা সোয়াতের উদ্দেশে আগমনকারী এক যুদ্ধজাহাজের দলকে আক্রমণ করে ১৩ সৈন্যকে মেরে ফেলল। বিরূপ প্রতিক্রিয়াটা শুধু সোয়াতেই ছিল না। বাজাউরে তাদের স্বগোত্রীয় লোকেরা বিশাল প্রতিবাদ করল এবং সারা দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলার স্রোত বয়ে গেল। আশার আলোর একটা রশ্মিই শুধু দেখা যাচ্ছিল—বেনজির ভুট্টো ফিরে আসছিলেন। মার্কিনরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিল, তাদের মিত্র জেনারেল মোশাররফ তালেবানের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারকারী হওয়ার জন্য খুবই অজনপ্রিয়, তাই তারা একটি অসম্ভাবিত ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য দালালি করতে লাগল। পরিকল্পনা ছিল যে মোশাররফ তার ইউনিফর্ম ত্যাগ করে সিভিলিয়ান প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবে এবং বেনজিরের দলের সমর্থন নেবে। এর বিনিময়ে সে বেনজির এবং তাঁর স্বামীর নামে করা দুর্নীতির মামলাগুলো বাতিল করে নির্বাচন দিতে রাজি হবে। যেটার ফলাফল, সবার ধারণা অনুযায়ী, বেনজিরের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। আমার বাবাসহ কোনো পাকিস্তানিই মনে করল না যে এই পরিকল্পনায় কাজ হবে, কারণ মোশাররফ ও বেনজির একে অপরকে ঘৃণা করত।

আমার দুই বছর বয়স থেকেই বেনজির নির্বাসনে ছিল, কিন্তু বাবার কাছে তার সম্পর্কে আমি এত কিছু শুনেছি যে তার ফেরা নিয়ে আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম এবং আমাদের আবার একজন নারী নেত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বেনজিরের কারণে আমার মতো মেয়েরা কথা বলার এবং রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারে। সে ছিল আমাদের রোল মডেল। সে ছিল একনায়কতন্ত্রের অবসানের এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার প্রতীক এবং বাইরের পৃথিবীর কাছে আশা ও শক্তির বার্তা। সে ছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কথা বলা একমাত্র রাজনৈতিক নেত্রী এবং মার্কিন সৈন্যদলকে সে বিন লাদেনের উদ্দেশে পাকিস্তানে তল্লাশি চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছিল।

কেউ কেউ অবশ্যই সেটা পছন্দ করেনি। ২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবরে আমরা আঠার মতো টিভির সামনে বসে রইলাম, নয় বছর নির্বাসনের পর করাচিতে প্লেনের সিঁড়ি বেয়ে বেনজির যখন পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম পা রাখলেন, তিনি তখন কাঁদছিলেন। ছাদখোলা বাসে চড়ে তিনি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শতসহস্র মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় জমাল। সারা দেশ থেকে তারা এসেছে এবং অনেকের কোলেই ছোট বাচ্চা। কেউ কেউ সাদা ঘুঘু উড়িয়ে দিল এবং এদের একটি এসে বেনজিরের কাঁধে বসল। ভিড় এত বেশি ছিল যে বাস হাঁটার গতিতে চলছিল। কিছুক্ষণ পরই আমরা দেখা থামিয়ে দিলাম, কারণ বোঝাই যাচ্ছিল পুরোটা শেষ হতে কয়েক ঘণ্টা লাগবে।

আমি মধ্যরাতের ঠিক আগেই শুয়ে পড়েছিলাম, যখন জঙ্গিরা আক্রমণ করল। বেনজিরের বাস কমলা শিখায় ডুবে যাচ্ছে। আমি পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাবা খবরটা আমাকে দিলেন। তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা এতটাই হতভম্ব ছিলেন যে রাতে ঘুমাতে যাননি। সৌভাগ্যবশত, বেনজির বেঁচে যান, কারণ বিস্ফোরণের ঠিক আগে আগেই পা দুটোকে শান্তি দিতে ধাতব আচ্ছাদানসমৃদ্ধ একটি কম্পার্টমেন্টে নেমে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫০ জন মানুষ মারা যায়। আমাদের দেশে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ বোমা বিস্ফোরণ। মৃতদের অনেকেই ছিল বাসের চারপাশে। মানবশিকল তৈরি করা শিক্ষার্থী। তাদের বলা হয় বেনজিরের জন্য শহীদ। স্কুলে সেদিন সবাই বশীভূত হয়ে ছিল, এমনকি যারা বেনজিরবিরোধী ছিল, তারাও। আমরা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আবার তাঁর বেঁচে যাওয়ার জন্য স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞও ছিলাম।

সপ্তাহখানেক পর জিপ ও হেলিকপ্টারের বিকট শব্দ করতে করতে সোয়াতে সেনাবাহিনী এলো। হেলিকপ্টার যখন প্রথম এলো, তখন আমরা স্কুলে ছিলাম এবং খুবই উত্তেজিত ছিলাম। আমরা বাইরে দৌড়ে গেলাম এবং তারা আমাদের দিকে টফি ও টেনিস বল ছুড়ে দিল। আমরা ওগুলো ধরার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকলাম। সোয়াতে হেলিকপ্টার কদাচিৎ দেখা যায়, কিন্তু আমাদের বাসাটা সেনাবাহিনীর স্থানীয় প্রধান কার্যালয়ের কাছে হওয়ায় মাঝেমধ্যে আমাদের বাসার ওপর দিয়ে উড়ে যেত। কে কত বেশি টফি তুলতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা প্রতিযোগিতা করতাম।

একদিন রাস্তা থেকে এক লোক এসে আমাদের বলল, মসজিদে ঘোষণা হয়েছে যে পরদিন কারফিউ হবে। আমরা জানতাম না, কারফিউ কী জিনিস এবং তাই উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমাদের প্রতিবেশী সাফিনাদের বাসার দেয়ালে একটি ফুটো ছিল। সেটা দিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতাম। আমরা দেয়ালে টোকা দিলে তারা দেয়ালের কাছে আসত। ‘কারফিউটা কী?’ আমরা তাদের জিজ্ঞেস করলাম। তারা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার পর আমরা খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কায় রুম থেকেও বের হইনি। পরে এই কারফিউই আমাদের জীবন অধিগ্রহণ করল।

আমরা শুনলাম, তালেবানের মুখোমুখি হওয়ার জন্য মোশাররফ তিন হাজার সেনা পাঠিয়েছে আমার উপত্যকায়। তারা কৌশলগতভাবে যত সরকারি এবং ব্যক্তিগত ভবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করল, সব দখল করল। তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, সোয়াতে যা হচ্ছে, পাকিস্তানের বাকি অংশ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সেদিনই এক আত্মঘাতী বোমারু সোয়াতে একটি আর্মি ট্রাকে হামলা করে ১৭ জন সৈন্য এবং তেরো সিভিলিয়ানকে হত্যা করল। এর পর সারা রাত আমরা ‘দার দার দার’ শব্দ শুনতে লাগলাম, পাহাড়ের ওপর থেকে কামান আর মেশিনগানের শব্দ। ঘুমানো খুবই কঠিন ছিল।

পরদিন টিভি খবরে আমরা শুনলাম, উত্তরের পাহাড়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। স্কুল বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বাসায় বসে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম কী ঘটছে। মিঙ্গোরার বাইরে যুদ্ধটা হলেও আমরা বন্দুকের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। সেনাবাহিনী বলল, তারা একশর বেশি জঙ্গিকে হত্যা করেছে; কিন্তু নভেম্বরের ১ তারিখ প্রায় ৭০০ তালেবান খোয়াজাখেলায় এক সৈন্যদলকে বিধ্বস্ত করে ফেলল। প্রায় ৫০ জন ফ্রন্টিয়ার কর্পস ছেড়ে পালাল এবং ৪৮ জনকে আটক করে ঘোরানো হলো। ফজলুল্লাহর লোকজন তাদের ইউনিফর্ম এবং অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে তাদের অপমান করল এবং ফেরার জন্য প্রত্যেককে ৫০০ রুপি করে দিল। এরপর তালেবান খোয়াজখেলায় দুটো পুলিশ স্টেশন দখল করে মাদিয়ানে গিয়ে আরো পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিল। দ্রুতই মিঙ্গোরার বাইরের সোয়াতের সিংহভাগ এলাকা তালেবান দখল করে নিল।

নভেম্বরের ১২ তারিখ মোশাররফ আরো হেলিকপ্টার গানশিপ নিয়ে ১০ হাজার সৈন্যকে আমাদের উপত্যকায় পাঠানোর আদেশ দিলেন। সবখানেই আর্মি। তারা এমনকি গলফ কোর্সেও ক্যাম্প করল, তাদের বড় বন্দুকগুলো পাহাড়ের পাশে অবস্থান করিয়ে দিল। এর পর তারা ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালাল, যা সোয়াতের প্রথম যুদ্ধ বলে পরিচিত। এই প্রথম সেনাবাহিনী ফাতা-এর বাইরে তাদের নিজেদের লোকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাল। ভিড়ের মধ্যে কথা বলছে, এমন অবস্থায় পুলিশ তাকে একবার গ্রেপ্তার করতে চাইল, কিন্তু হঠাৎ বালুঝড় উঠল এবং সে পালিয়ে গেল। এটা তার রহস্যময়তা এবং আধ্যাত্মিক ক্ষমতার পক্ষে প্রমাণ জোরালো করল। জঙ্গিদল এত সহজে হাল ছাড়ল না; বরং তারা আগে এগিয়ে গিয়ে ১৬ নভেম্বর শাংলার মূল শহর আলপুরি দখল করল। আবারও কোনো যুদ্ধের চেষ্টা ছাড়াই স্থানীয় পুলিশ পালিয়ে গেল। সেখানকার মানুষ বলল, যোদ্ধাদের মধ্যে চেচেন ও উজবেক ছিল। আমরা শাংলায় আমাদের পরিবারের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলাম, তবে বাবা বলছিলেন যে তালেবানের জন্য গ্রামটা খুব দুর্গম এবং স্থানীয় লোকজন এটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা তালেবানের দূরে রাখবে। পাকিস্তানি আর্মির আরো অনেক লোক এবং ভারী অস্ত্র থাকায় তারা দ্রুতই উপত্যকাটা পুনর্দখল করল। তারা ফজলুল্লাহর প্রধান কার্যালয় ইমাম দেরিও দখল করে নিল। জঙ্গিরা জঙ্গলে পালিয়ে গেল এবং ডিসেম্বরের শুরুতেই আর্মি জানাল, তারা বেশির ভাগ এলাকা মুক্ত করে ফেলেছে। ফজলুল্লাহ পাহাড়ে ফিরে গেল। কিন্তু তারা তালেবানকে তাড়াতে পারেনি। বাবা ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, ‘এটা টিকবে না।’

শুধু ফজলুল্লাহর দলই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল না, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানজুড়ে নানা উপজাতীয় গোষ্ঠীর বিভিন্ন জঙ্গিদলের অভ্যুদয় ঘটেছিল। সোয়াত যুদ্ধের সপ্তাহখানেক পরেই আমাদের প্রদেশ থেকে ৪০ তালেবান নেতা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে বৈঠক করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। তারা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তান তালেবানের ব্যানারে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নিল এবং দাবি করল, তাদের ৪০ হাজার যোদ্ধা আছে। বাইতুল্লাহ মেহসুদ নামের এক মধ্যবয়সী লোককে তারা নেতা বানাল, যে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছে। ফজলুল্লাহ ছিল সোয়াত সেক্টরের প্রধান।

আমরা ভেবেছিলাম, আর্মি এলে যুদ্ধ থেমে যাবে; কিন্তু আমরা ভুল ভেবেছিলাম। আরো অনেক কিছুই বাকি ছিল। তালেবান শুধু রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য এবং পুলিশদেরই টার্গেট করেনি, যারা পর্দা করে না, ভুল দৈর্ঘ্যের দাড়ি রাখে বা ভুল ধরনের সালোয়ার-কামিজ পরে, তারাও তালেবানের টার্গেট।

২৭ ডিসেম্বর বেনজির ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির লিয়াকতবাগ উদ্যানে একটি নির্বাচনী র‍্যালির ঘোষণা দেন, যে পার্কে আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। উচ্চ স্বরে জয়ধ্বনিত জনগণের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘আমরা চরমপন্থা এবং জঙ্গিবাদকে মানুষের শক্তি দিয়ে পরাস্ত করব।’ তিনি একটি বিশেষ বুলেটপ্রুফ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারে ছিলেন এবং গাড়িটা পার্ক ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি সিট ছেড়ে সানরুফের মধ্যে মাথা গলিয়ে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। হঠাৎ বন্দুকের শব্দ হলো এবং একটা বিস্ফোরণ ঘটল। এক আত্মঘাতী বোমারু তাঁর বাহনের পাশে নিজেকে উড়িয়ে দিল। বেনজির গড়িয়ে নিচে পড়লেন। মোশাররফ সরকার পরে জানাল, তিনি ছাদের হ্যান্ডেলের সঙ্গে মাথায় বাড়ি খেয়েছেন, অন্য লোকেরা বলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

খবরটা যখন প্রচারিত হচ্ছিল, তখন আমরা টিভি দেখছিলাম। আমার দাদি বললেন, ‘বেনজির শহীদ হবে, যার অর্থ সম্মানজনক মৃত্যু লাভ করবে। আমরা সবাই তার জন্য কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলাম। যখন তার মৃত্যুর খবর পেলাম, আমার হৃদয় আমাকে বলল, তুমি কেন সেখানে গিয়ে নারী অধিকারের জন্য লড়াই করো না? আমরা গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম এবং এখন মানুষ বলছে, ‘বেনজির নিহত হয়েছে, তাহলে কেউই আর নিরাপদ নয়।’ মনে হতে লাগল, আমার দেশটার সব আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

মোশাররফ টিটিপি নেতা বাইতুল্লাহ মেহসুদকে বেনজিরের মৃত্যুর জন্য দায়ী করল এবং তার ও তার সহযোগী এক জঙ্গির মধ্যে হামলা-সংক্রান্ত আলোচনার একটি আটককৃত ফোনকলের প্রতিলিপি প্রকাশ করল। বাইতুল্লাহ দায় অস্বীকার করল, যা তালেবানের জন্য অস্বাভাবিক।

আমাদের ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন কারি সাহেব, যিনি বাসায় এসে আমাকে এবং অন্য স্থানীয় বাচ্চাদের কোরআন পড়াতেন। তালেবান যখন এসেছে, তত দিনে আমি পুরো কোরআন শরিফ পড়া শেষ করেছি, যাকে আমরা বলি ‘খাতামুল কোরআন’ এবং আমার ধর্মনেতা দাদা খুবই খুশি হলেন। আমরা আরবিতে পড়ি, এবং বেশির ভাগ লোকই আয়াতগুলো মানে জানে না। কিন্তু আমি অর্থও শেখা শুরু করলাম। আমাকে আতঙ্কিত করে দিয়ে এক কারি সাহেব বেনজিরের গুপ্তহত্যার যথার্থতা যাচাই করার চেষ্টা করলেন। তার হত্যাকাণ্ড হয়েছে, খুবই ভালো হয়েছে, সে বলল। ‘সে বেঁচে থাকলেও কোনো কাজের ছিল না। সে ঠিকমতো ইসলাম অনুসরণ করছিল না। সে বেঁচে থাকলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতো।’

আমি হতভম্ব হয়ে ঘটনাটা বাবাকে জানালাম। আমার আর কিছু করার নেই। কোরআন শেখার জন্য আমরা এই মোল্লাদের ওপর নির্ভরশীল’, তিনি বললেন। ‘কিন্তু তুমি তাঁর কাছে শুধু আক্ষরিক অর্থটাই শেখো; তার বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা অনুসরণ করো না। স্রষ্টা যা বলেন তা-ই শেখো। তাঁর কথা হলো দৈব বার্তা, যার ব্যাখ্যা করার জন্য তুমি স্বাধীন।’