ছিল বিজ্ঞান, এখন অপবিজ্ঞান

Looks like you've blocked notifications!

বিজ্ঞান এমন একটি বিষয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়, তাতে যোগ হয় নতুন সব তত্ত্ব। হাজার হাজার বছর ধরে অসংখ্য বিজ্ঞানীর মেধা আর পরিশ্রমের ফসল আজ আমরা ভোগ করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের যেমন নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর তথ্য-প্রমাণের অভাবে। এগুলোই হলো স্যুউডোবিজ্ঞান বা অপবিজ্ঞান। বর্তমানে এসব অপবিজ্ঞান গুরুত্বহীন এবং ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও একসময় এই বিজ্ঞানের অনেক কদর ছিল। এমনকি এখনো অনেকে অপবিজ্ঞানকে একেবারে খারিজ করে দিতে চান না। তো, জেনে নেওয়া যাক অপবিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু তথ্য।

১. ফ্রেনোলজি

সম্ভবত স্যুউডোবিজ্ঞানের শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফ্রেনোলজি। মানুষের মাথার খুলির গঠন দেখে তাঁর প্রতিভা, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি নির্ধারণের এই তত্ত্বের আবিষ্কারক জার্মান চিকিৎসক ফ্রাঞ্জ জোসেফ। উনিশ শতকের দারুণ জনপ্রিয় এই শাখা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে ১৮১০ থেকে ১৮৪৬ সালের ভেতর। যুক্তরাষ্ট্রসহ আফ্রিকার বহু দেশে কালোদের পদানত করে রাখার জন্য ফ্রেনোলজি ব্যবহার করা হতো। ফ্রেনোলজির মাধ্যমে তখনকার বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন যে, সাদা চামড়ার মানুষের তুলনায় কালোরা নিম্ন বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী বিধায় তাঁদের দাস হিসেবে পদানত রাখাই উত্তম। যদিও বর্তমানে ফ্রেনোলজিকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত হিসেবে গণ্য করা হয়।

২. হোমিওপ্যাথি

বিস্ময়কর হলেও সত্য, হোমিওপ্যাথিকেও অপবিজ্ঞানের কাতারে ফেলা হয়। যদিও এখনো এটি অনেকের কাছে নির্ভরযোগ্য একটি বিদ্যা, তবে বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই একে বাতিল করে দিয়েছেন। ১৭৯৬ সালে জার্মান বিজ্ঞানী স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর প্রবর্তন করেন। তাঁর এই বিদ্যার মূলকথা ছিল, যে দ্রব্য সুস্থ মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করে, তা অসুস্থ মানুষের দেহে ঠিক উল্টো কাজ করবে, অর্থাৎ প্রতিষেধকের কাজ করবে। পরবর্তী গবেষণায় অবশ্য প্রমাণিত হয়েছে, এটি সম্পূর্ণভাবেই একটি ভ্রান্ত বিদ্যা।

৩. হিপনোসিস

হিপনোসিস বা সম্মোহন বিদ্যাকেও আধুনিক বিজ্ঞানীরা অপবিজ্ঞান হিসেবে গণ্য করেন। প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তে এর প্রচলন ছিল। তবে ফ্রাঞ্জ মেস্মের, জেমস ব্রাইড প্রভৃতি বিজ্ঞানী বিশ্বব্যাপী তা জনপ্রিয় করে তোলেন। দাবি করা হয়, সম্মোহিত অবস্থায় মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিতে পারে। মনে করতে পারে, এমন সব ঘটনা, যা কি না সাধারণ অবস্থায় তাঁর মনে থাকে না। প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডসহ পরবর্তী মনোবিজ্ঞানীরা হিপনোসিসের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে থাকলে ক্রমে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।

৪. হরোস্কোপ

এটি জ্যোতির্বিদ্যার একটি শাখা। হাত দেখা অনেকের কাছেই খুব বিশ্বাসযোগ্য বিষয় হলেও বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই একে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছেন। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের অবস্থান ইত্যাদি বিচার করে একজন মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ, জন্মসহ নানা তথ্য নির্ধারণ করা হয় হরোস্কোপ বা জ্যোতিষীবিজ্ঞানের মাধ্যমে। প্রাচীন গ্রিক, চীন আর ভারতীয় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই বিদ্যা কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় নিজের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। অবশ্য এখনো বহু দেশেই হাত দেখা বিদ্যায় বিশ্বাস রাখেন এমন লোকের দেখা পাওয়া যায়।

৫. প্যারাসাইকোলজি

হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের কাছে ‘প্যারাসাইকোলজি’ শব্দটি খুবই পরিচিত। টেলিপ্যাথি, পূর্বপরিচয়, পুনর্জন্ম প্রভৃতি প্যারানরমাল ব্যাপার নিয়েই প্যারাসাইকোলজির গবেষণা। কার্ল জেনার, জোসেফ রাইনের মতো বিজ্ঞানীরা এর সূচনা করেন। বিশেষ করে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের ভেতর এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। তবে মূলধারার বিজ্ঞানীরা প্যারাসাইকোলজিকে অপবিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করেন। কারণ, প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় গবেষণা চালানোর পরও উল্লেখযোগ্য কিছুই এই শাখা আবিষ্কার করতে পারেনি। বর্তমানে মূলত কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান শাখাটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।