বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর চার ঘটনা

Looks like you've blocked notifications!

যুদ্ধ সব সময়ই ভয়াবহ। কিন্তু কিছু কিছু সময় যুদ্ধ মানুষকে এমন অবস্থায় নিয়ে যায়, যখন সে তার সীমা ছাড়িয়ে যায়, জন্ম দেয় ভয়াবহ সব ঘটনার। মানবতার ইতিহাসে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বীভৎসতার চরম আখ্যান। এই দুই যুদ্ধে এমন সব ঘটনা ঘটেছে, যা ভাবতে গেলেও অন্তরাত্মা কেঁপে যাবে অনেকেরই। ওয়ার হিস্টোরি অনলাইন অবলম্বনে এমনই কিছু ঘটনা নিয়ে এই আয়োজন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বাচ্চা তৈরির কারখানা

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, হিটলার চেয়েছিল আর্য জাতিদের নিয়ে এক বিশুদ্ধ জার্মানি গড়তে। আর্য তারাই, যারা সাদা চামড়া, স্বর্ণকেশী, নীল চোখের অধিকারী এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী। হিটলারের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল—ইউরোপিয়ান ইহুদি, সমকামী, মানসিক রোগী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নির্মূল করে একটি বিশুদ্ধ জার্মানি তৈরি করা; যেখানে কেবল আর্য জাত কর্তৃত্ব করবে। এই পরিকল্পনা সার্থক করার উদ্দেশ্যে হিটলারের গ্যাস চেম্বার তৈরি এবং ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তো সবাই জানে।

এই তথাকথিত ‘বিশুদ্ধ’ জার্মানি গড়ার লক্ষ্যে হিটলার বেশ কিছু সংখ্যক আর্য শিশুকে বিলাসবহুল প্রাসাদে বড় করার কর্মসূচি নেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘লেবেন্সবর্ন প্রোগ্রাম। প্রাথমিকভাবে নাৎসি বাহিনীকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল অধিকৃত এলাকা, যেমন—পোল্যান্ডের নারীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার। এর ফলে পোল্যান্ডের নারীদের অনেকেই নাৎসিদের সন্তান জন্ম দেন। মা ও শিশুকে এরপর বিলাসবহুল প্রাসাদে স্থানান্তরিত করা হয়।

এ প্রক্রিয়া ছিল খুবই ধীরগতির। একটি নতুন ব্যাচ পেতে অনেক সময় লেগেছিল। এ কারণে নাৎসিরা বাধ্য হয়ে সেসব শিশুকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে অপহরণ করে, যারা স্বর্ণকেশী এবং নীল চোখের অধিকারী। পোল্যান্ড সরকারের দাবি অনুযায়ী, ‘লেবেন্সবর্ন প্রোগ্রাম’-এর অধীনে প্রায় দুই লাখ শিশুকে অপহরণ করা হয়।

অসউইজের সাইকোপ্যাথ ইরমা গ্রিজ

ইরমা গ্রিজের নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতা কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। তার জন্ম জার্মানির রেচেন শহরে ১৯২৩ সালে। ১৯৪২ সালে তিনি নাৎসি বাহিনীতে যোগ দিয়ে ক্রমান্বয়ে ‘অসউইজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’- এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী মহিলা গার্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইরমা বন্দিদের ভিন্ন ভিন্ন ভয়ংকর সব উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে আনন্দ পেতেন। তার দায়িত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডের জন্য বন্দি বাছাই করা।

ইরমা সব সময় নিজের সঙ্গে দুটি ক্ষুধার্ত কুকুর রাখতেন। তার ছিল ধারালো পেরেকযুক্ত একটি বেল্ট, যেটি দিয়ে বন্দিদের অনবরতই পেটাতেন। ইরমার এই নৃশংসতার কথা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা তাকে ‘অসউইজ-এর হায়েনা’ নামে কুখ্যাতি এনে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে, ইরমা গ্রিজকে তার নির্মমতার জন্য মাত্র ২২ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

নাগিরেভের হত্যাযজ্ঞ

বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর সব ঘটনা যে শুধু নাৎসিরাই ঘটিয়েছে, তা নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এমন ঘটনা ঘটেছে হাঙ্গেরির নাগিরেভ নামের ছোট একটা গ্রামে। যুদ্ধে নাগিরেভ গ্রামকে ব্যবহার করা হয় যুদ্ধবন্দিদের রাখার কাজে। বিশ্বযুদ্ধে নাগিরেভের স্থানীয় পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারকে রেখে গ্রাম ছাড়তে হয়। এমন সময় স্থানীয় পুরুষদের রেখে যাওয়া স্ত্রীদের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের পাহারা দেওয়া সৈনিকদের প্রেম হয়। এ সময় অনেক মহিলা অবৈধ সন্তান গর্ভধারণ করে ফেলে এবং গর্ভপাতের জন্য শরণাপন্ন হয় ‘নাগিরেভের অ্যাঞ্জেল’ নামে মহিলাদের একটি দলের কাছে, যার প্রধান ছিলেন ‘ওয়াইজ ওমেন’ নামে পরিচিত সুজানা ফেজকাস।

সুজানা এই স্ত্রীদের গর্ভপাত করার পাশাপাশি আর্সেনিক বিষ জোগান দেন। স্ত্রীরা তাদের পরকীয়ার কথা গোপন রাখতে তাদের মা-বাবা, এমনকি সন্তানদের খাবারের সঙ্গে আর্সেনিক মিশিয়ে হত্যা করে। অনেকে তাদের নতুন প্রেমিকের কাছে যাওয়ার জন্য যুদ্ধফেরত স্বামীকেও একইভাবে হত্যা করে। ১৯১৪ থেকে ১৯২৯ সালের মাঝে এমনভাবে প্রায় ৩০০ মানুষকে হত্যা করা হয়।

মানুষখেকো আর্মি

বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল অনেক গুজব ও প্রচারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও জাপানের মাঝে ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন অনেক প্রচারণা করা হয়। আমেরিকানদের মাঝে গুজব ছিল, জাপানিরা বর্বর ও অসভ্য। তাদের পরাজিত করতে হলে তাদের শিকার করতে হবে। আমেরিকানরা এই অপারেশনের নাম দেয় ‘জাপানি শিকার’।

জাপানিদের বর্বরতার উদাহরণ হিসেবে জাপানিরা মানুষখেকো বলে প্রচারণা চালানো হয়। জাপানের চিচিজিমা দ্বীপে আমেরিকান বিমানের ওপর হামলা চালানো হয়। বিমানে থাকা নয়জনের মাঝে আটজন বন্দি হয়, একজন পলায়ন করে। তার বলা গল্পে জাপানিদের আমেরিকান সৈন্যদের মাংস দিয়ে বানানো স্যুপের কথা শোনা যায়। তবে এটি পুরোই গুজব নাকি এতে কিছুটা সত্যতা ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জাপানিদের এই বর্বরতার কথা শুনে আমেরিকান বাহিনী ভয়ংকর হয়ে ওঠে। যুদ্ধে জাপানিদের পরাজয় হয়। অনেক আমেরিকান সৈন্য মৃত জাপানিজ সৈন্যের মাথার খুলি ট্রফি হিসেবে নিজের কাছে রেখে দেয়। জাপানি দ্বীপ থেকে পালানো সৈন্যটি পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন স্বয়ং জর্জ ডব্লিউ বুশ সিনিয়র!