দেনমোহরের টাকা পেতে…
কুমিল্লার দেবীদ্বারের বাসিন্দা জরিনা আক্তার (ছদ্মনাম)। দরিদ্র কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনে বড় হয়েছেন। বাবাই ছিলেই সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি। বাবা গরিব হওয়ায় বিয়ের প্রস্তাব আসছিল না। এই দোলাচলের মধ্যেই একদিন ঢাকার সাভার থেকে সুমন আহমেদ নামের এক ছেলের পক্ষ থেকে জরিনার পরিবারে প্রস্তাব আসে।
জরিনার বাবা সেই প্রস্তাব পেয়ে মেয়েকে গাড়িচালক সুমন আহমেদের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে দেন। এরপর কিছুদিন জরিনার সংসার ভালো চললেও পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ।
জরিনার স্বামীর আগে স্ত্রী ও সন্তান ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্বামী সুমনের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে সুমন তাঁকে তালাক দেন। এরপর প্রতিকার পেতে জরিনা শরণাপন্ন হন আইনজীবীর।
সেই আইনজীবী তাঁকে দেনমোহরের টাকা পেতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করতে বলেন। সেই মামলা করতে পাঁচ হাজার টাকা দরকার বলে জানান। কিন্তু অসচ্ছল জরিনা বিষয়টি নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে যান। তিনি চিন্তা করেন মামলা কীভাবে করবেন, টাকা তো নেই। তখন প্রতিবেশীর কাছ থেকে টাকা ধার করে আইনজীবীকে দিয়ে আদালতে মামলা করেন।
মামলা করার পর জরিনা মামলার বিবাদী তাঁর সাবেক স্বামীর ঠিকানায় সমন পাঠান। সেই সমন জারি করতে গিয়ে প্রসেসারভারকে (জারিকারক) টাকা দিতে হয়। এরপর বিবাদী সমন পেলেও আদালতে হাজির হননি। এরই মধ্যে জরিনা তিন-চারবার আদালতে হাজির হয়েছেন। প্রতিবারই আইনজীবীকে হাজিরার খরচ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় জরিনার।
সর্বশেষ মামলাটি একতরফা শুনানির পর্যায়ে গেলে বিবাদী সুমন আদালতে হাজির হয়ে মামলায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর বিবাদী তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এতে বাদী মামলা চালাবেন কি না, তা নিয়ে হতাশায় পড়ে যান।
এ বিষয়ে জরিনা সাংবাদিকদের বলেন, ৫০ হাজার টাকার কাবিনের (দেনমোহর) মামলা করতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। একে তো রায় কবে হবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, এর মধ্যে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অল্প টাকার দেনমোহরের মামলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যবস্থা হলে ভালো হতো বা তারিখ খুব কম দিয়ে নিষ্পত্তি করে দিলে সবাই উপকার পেত। এ টাকা উদ্ধারের জন্য টাকা ও সময় অনেক নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জরিনার আইনজীবী মাহফুজুর রহমান জানান, একটি পারিবারিক মামলা করতে গেলে আর্জি লেখা, নোটিশ তৈরি, ওকালতনামা, সরকারকে কোর্ট ফি, সমন জারিসহ অনেক টাকা খরচ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মামলা ফাইলিং করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টাকা দিতে হয়। তিনি জানান, নোটিশ জারি করার জন্য জারিকারককে টাকা না দিলে নোটিশ জারি করে না। আর এতে মামলা বিলম্ব হয়।
এই আইনজীবী বলেন, পারিবারিক আদালতে করা মামলায় অল্প দেনমোহরের ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি বা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ভুক্তভোগীরা টাকা তুলে দিতে পারে। এতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাবে।
ঢাকার নিম্ন আদালত ও আদালতের সরকারি আইনি সহায়তা সেবা (লিগ্যাল এইড সার্ভিস)–এর প্যানেল আইনজীবী মুনজুর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, অল্প দেনমোহরের মামলা ও হতদরিদ্রদের মামলা পরিচালনার জন্য লিগ্যাল এইড সার্ভিস রয়েছে। সরকার বিনা খরচে আইনজীবী নিয়োগ করে এ মামলা পরিচালনা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড পাওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে। তিনি জানান, যাদের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকার নিচে, যারা প্রতিবন্ধী, পঙ্গু বা অসহায়, তারা এই সুবিধা পাবে।