ফেসবুকে দণ্ডনীয় অপরাধ এড়াতে কী করবেন

Looks like you've blocked notifications!
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত আইন মেনে। ছবি : ব্র্যান্ডওয়াচ

ইন্টারনেটের সুবাদে সারা পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আমরা খুব সহজে মনের ভাব আদান-প্রদান করতে পারি। আর ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো ফেসবুক। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারে উপকারিতার পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীনও হচ্ছে অনেকে। কেউ আবার না বুঝে অথবা বুঝে অপব্যবহার করছে ফেসবুককে ফলে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে ফেঁসে যাচ্ছে তারা। এ আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী কেউ এ অপরাধে অভিযুক্ত হলে  জামিন অযোগ্য সাত বছর থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড  হতে পারে। একইসঙ্গে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানাও হতে পারে।

তথ্যপ্রযুক্তি  আইন  

ইন্টারনেটে বিভিন্ন মাধ্যমের অপব্যবহার রোধে সরকার ২০০৬ সালে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন পাস করে। কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার রোধে সরকার ২০১৩ সালে তথ্য প্রযুক্তি আইনকে (আইসিটি) সংশোধন করেছে। ওই আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে পারবেন।

আইনের ২১ ধারায় বলা হয়, কোনো অপরাধী, ব্যক্তি বা সংগঠনের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটার বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা অথবা অপরাধ-সংশ্লিষ্ট স্থির ও ভিডিওচিত্র অপরাধের আলামত হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আদালতে উপস্থাপন করতে পারবেন।  এ বিষয়ে সাক্ষ্য আইনে যাই থাকুক না কেন, মামলার স্বার্থে তা আদালতের গ্রহণযোগ্য হবে। এ ছাড়া এ আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করলে তিনি সব্বোর্চ্চ ১৪ বছর এবং কমপক্ষে সাত বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একইসঙ্গে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এ আইনে আরো বলা হয়, ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ বা ইন্টারনেটের যেকোনো মাধ্যমের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আলাপ-আলোচনা এবং এ সম্পর্কিত স্থির ও ভিডিও চিত্র আদালতে আমলযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এ আইনের ৫৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রচার বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা বা অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হাইলে তাহার এই কাজ হইবে অপরাধ।”

ফেসবুকে যা অপরাধ হিসেবে গণ্য

ফেসবুকে তথ্য যোগযোগ ও প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী যেসব কাজ দণ্ডনীয়-

১. ফেসবুকে মিথ্যা ও অশ্লীল এমন কোনো কিছু ব্যবহার করা যাবে না, যা কোনো ব্যক্তি পড়ে, দেখে ও শুনে নীতিভ্রষ্ট হতে পারে।

২. কোনো স্ট্যাট্যাস বা ট্যাগের কারণে কারো মানহানি ঘটে এমন কোনো কিছু করা যাবে না।

৩. এমন কোনো কিছু লেখা যাবে না যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।

৪. এমন কিছু লেখা ও ট্যাগ করা যাবে না যার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

৫. এমন কোনো কিছু লেখা যাবে না যার মাধ্যমে কারো জাত, বর্ণ ও ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাত লাগতে পারে।

করণীয়

কোনো ব্যক্তি যদি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা টুইটার আইডি তৈরি করে মূল ব্যবহারকারীকে বিব্রত বা হয়রানি করে এবং এতে ওই ব্যক্তি যদি আশঙ্কা করেন যে তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পেশাগত ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন তাহলে তিনি (ভুক্তভোগী) থানায় জিডি করতে পারেন। সাধারণ ডায়েরি করা থাকলে, কারো নাম ব্যবহার করে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে সে জন্য ভুক্তভোগী দায়ী থাকবেন না। যেহেতু তিনি আগেই থানায় জিডি করে রেখেছিলেন। আপনি যদি এ ধরনের সমস্যায় পড়েন এবং সমস্যা যদি বড় ধরনের কিছু হয় তাহলে আপনিও তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে মামলা করতে পারেন।