বাংলাদেশকে গভীরভাবে জানল নিউইয়র্কের পরবর্তী প্রজন্ম
আবিবা ইমাম দ্যুতির কণ্ঠে হৃদয় ছোঁয়া গান, জারিন মাইশার গলায় ‘আমি বাংলায় গান গাই’; অপর্ণা আমিনের কণ্ঠে মনে দাগ কাটে জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গানে। মিলনায়তনজুড়ে তখন পিনপতন নীরবতা।
আর সাইফ যখন ইংরেজিতে একটি প্রেমের গান ধরল, তখন উপস্থিত কিশোর-তরুণদের মধ্যে সেকি উচ্ছ্বাস! বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে সাফোয়ানের কবিতা আবৃত্তির সময় সবার মধ্যে শিহরণ বয়ে গেল। নিজের লেখা কবিতায় জনম সাহা ছড়িয়ে দিল আত্মবিশ্বাস। হাজার মাইল দূরে বসে এভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা একঝাঁক আগামী প্রজন্ম।
নিউইয়র্কের খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক সংগঠন ‘অঙ্কুর’-এর উদ্যোগে ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’ নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এই অনুষ্ঠানে অর্ধশত কিশোর-কিশোরী-তরুণ অংশ নেয়। নিউইয়র্ক ছাড়া পাশের দুটি স্টেট থেকেও অংশ নেয় অনেকে। সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকরাও। তবে অনুষ্ঠানটির অতিথি, বক্তা সবকিছুই ছিল আগামী প্রজন্ম। তাদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশটির উন্নয়ন অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর জন্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুল বাতেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। গান দুটিতে কণ্ঠ মেলান উপস্থিত সবাই। বাংলাদেশের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় এরপর। ডা. ফেরদৌস খন্দকার একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিশুদের কাছে বাংলাদেশকে আরো গভীরভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে জানান আমেরিকা সম্পর্কেও।
ফেরদৌস খন্দকার বলেন, “মাঝেমধ্যে নিজের কাছে কেমন যেন অপরাধী লাগে এই ভেবে যে, আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে প্রিয় দেশটাকে ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছি না। তাই ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’ নামে এই উদ্যোগ। পর্যায়ক্রমে নিউইয়র্ক ছাড়াও অন্যান্য স্টেটেও আমরা যাব। সবাইকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলব, বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাব।’
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন এ সময় এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা, বাংলাদেশকে আরো গভীরভাবে জানা ও বোঝার সুযোগ পাবে।’
কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। সাংবাদিক ও লেখক শামীম আল আমিনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় শিশু, কিশোর, তরুণ ও তাদের মা-বাবারা কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশ নিয়ে আগামী প্রজন্মের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, জরিপের ফলাফল দ্রুতই প্রকাশ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে প্রবাসে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম নিজেদের শেকড় সম্পর্কে কতটা জানে, কী ভাবে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সবাইকে উপহার ও সনদপত্র দেওয়া হয়।