সিডনিতে ‘কালার অব বাংলাদেশ’ মেলা নিয়ে সমালোচনা

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত ‘কালার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক মেলার সমালোচনা করেছেন প্রবাসীরা। গত ২০ জানুয়ারি ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ নামক একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করে|
মেলায় দর্শনার্থী ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাত ৯টার পর মেলা জমে ওঠে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের প্রথম মেলা হিসেবে দর্শকের ছিল বাড়তি আকর্ষণ। মেলাকে সাজানো হয়েছে দেশি রঙে। কিন্তু মেলার শেষ পর্বের আকৰ্ষণ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মধ্যে ফ্যাশন শো শুরু হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রবাসী দর্শকরা। পরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়।
ফ্যাশন শোর পরিচালক তানহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা আসলে আমার গান না। আমার সব গান আমি ই-মেইলে দিয়েছি, সেটার প্রমাণ আছে| তারপর এই ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী| আমার সব কষ্ট বৃথা হয়ে গেল।’
ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আল নোমান এর নেতৃত্বে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় আগতদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মার্ক কুরি, জেহাদ দীপ, ক্যান্টারবেরি-ব্যাংকটাউন সিটি কাউন্সিলর ডেপুটি মেয়র নাদিয়া সালেহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ শাহে জামান টিটু, কাউন্সিলর বিলাল হায়েক ও কাউন্সিলর নাজমুল হুদা।
বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া প্রেসিডেন্ট শেখ শামিমুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে আমি তো অনুষ্ঠানে ছিলাম না। তবে এটা আমার কাছে বিস্ময়! কীভাবে ফ্যাশন শোর মধ্যে জাতীয় সংগীত আসে?’
নিউসাউথ ওয়েলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শফিক বলেন, ‘জাতীয় সংগীতের বিকৃতভাবে উপস্থাপন মেনে নেওয়া যায় না। কেবল আমি না, কোনো বাংলাদেশি এটা সমর্থন করে না।’
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা গামা আব্দুল কাদির বলেন, ‘জাতীয় সংগীতকে অপমান কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের পৃথক মত থাকতে পারে। কিন্তু এটা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আপডেট বিডি নিউজের সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমার জন্মের ইতিহাসে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা দেখি নাই। এটা আমাদের কাছে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়, যেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন রাখার অবকাশ নাই।’
মেলার অন্যতম আয়োজক ও বৈশাখী টিভির অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধিকে এই প্রতিবেদক ফোন দিলে তিনি ধরেননি। পরে খুদে বার্তায় ফোন দেবেন বলে জানান।
কমিউনিটি লিডার ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গাউসুল আলম শাহাজাদা বলেন, ‘আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি| এই দেশ আমাদের অনেক কষ্টের। লাখ লাখ বাংলাদেশির রক্তে আমাদের স্বাধীনতা আমি এটা মেনে নিতে পারি না।’
দর্শকদের মধ্যে ছিলেন স্বরলিপি সারা নামের এক নারী। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো: “মেলার আয়োজকদের ক্ষমা কি চাইতে হবে? বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সাথে বিদেশি পোশাকে মডেলিং কেন? এই পোশাক তো প্রতিদিন দেখি এই দেশে, আনাচেকানাচে দেখি। দেখি না জামদানি শাড়ি, বড় লাল পাড়ের শাড়ি—আমাদের ঐতিহ্যগুলো। কী দেখালাম আমাদের সন্তানদের এই মেলায়?
আমি আমার দেশের লাল-সবুজ নিয়ে কথা বলছিলাম।কথার মাঝে বলল, ‘মা তোমার দেশ কি অনেক সুন্দর?’ আয়োজকরা বারবার বলছিল, সব শেষে জাতীয় সংগীত। মেয়েকে বললাম জাতীয় সংগীত শোনার সময় কথা বলবে না। দাঁড়িয়ে সম্মান জানাবে। মেয়ে বলল, আচ্ছা মা। আরো অনেক কথা।”
মেলা কমিটির আহ্বায়ক নোমান শামীম এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, জাতীয় সংগীত কোনোভাবে অবমাননা করা হয়নি। টেকনিক্যালি ভুলের কারণে এই সমস্যা হয়েছে, যেটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে উনি কেন কেউ মেনে নেবে না।
নোমান শামীম বলেন, ‘আমি আহ্বায়ক হিসেবে এবং একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার দেশ এবং এই জাতীয় সংগীতের অবমাননা মেনে নেব না।’