‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছেন শামীম

Looks like you've blocked notifications!

‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর বর্ষপূর্তিতে এবার নিউইয়র্কে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠান। ‘ট্রিবিউট টু জর্জ হ্যারিসন, রবি শংকর অ্যান্ড আদার ফ্রেন্ডস’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানটি হবে ১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে ‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ নামে একটি সংগঠন।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে ভারতীয় কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাসহ অনেক বিশিষ্টজন।

সংগীত পরিবেশন করবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান। এ ছাড়া গান গাইবেন শাহ মাহবুব, মাহী। আবৃত্তি করবেন নজরুল কবীর। নৃত্যে থাকবেন জেরিন মাইশা। তবলায় তপন মদকের সঙ্গে সেতার বাজাবেন ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ সারোদ বাজানো ওস্তাদ আলী আকবর খানের নাতি মোর্শেদ খান অপু। অনুষ্ঠানে ১৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হবে।  

ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডমের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. ফেরদৌস খন্দকার জানিয়েছেন, “‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের সহায়তার উজ্জ্বলতম উদাহরণ। বিশেষ করে আমরা যাঁরা আমেরিকায় থাকি, তাঁদের কাছে এটি একটি গর্বের নাম। কেননা এই দেশেই আয়োজন করা হয়েছিল কনসার্টটি, যাতে অংশ নিয়েছিল হাজারো মানুষ। তার চেয়েও বড় কথা, সেদিনের জগদ্বিখ্যাত তারকাদের অংশগ্রহণে কনসার্টটির প্রভাব ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনের সেই কনসার্টটির অন্যতম আয়োজক ছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবি শংকর। সঙ্গে ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীরা। কনসার্টটির বর্ষপূর্তির এই দিনে তাই সেইদিনের সব তারকার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যই এই আয়োজন।”

‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি বন্ধু সহায়তা দিয়েছেন, তাদের বিভিন্ন সময় স্মরণ করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’—এমনটা জানিয়ে সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন বলেন, ‘একই সঙ্গে ইতিহাসের গৌরবের এসব অধ্যায় ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তারই অংশ হিসেবে দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর ওপরে বড় আকারে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছেন তিনি।

শামীম কনসার্ট-সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, নিয়েছেন সাক্ষাৎকারও। জর্জ হ্যারিসন, রবি শংকরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। সেইসঙ্গে সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত এবং দর্শক হয়ে গিয়েছিলেন এমন মানুষকে খুঁজে বের করে আরো সাক্ষাৎকার নিতে চান। তিনি বলেন, ‘সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সংগীতশিল্পী বব ডিলন সেদিন গান করেছিলেন। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই আমি।’ তার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর কথা উল্লেখ করে শামীম এ ক্ষেত্রে সবার সহায়তা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশি নন, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের সঙ্গে নানানভাবে সংশ্লিষ্ট যে কারোই সাক্ষাৎকার নিতে চাই আমি। কারো কাছে যদি সহায়তার দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে তিনি সেটা চেয়েছেন। এ জন্য একটি ই-মেইল ঠিকানাও দিয়েছেন তিনি। www.amin.one007@gmail.com

বড় এই কাজটিতে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দরকার উল্লেখ করে শামীম বলেন, ১ আগস্টের সেই অনুষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন দেশজুড়ে চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বিপুল বিক্রমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলার সর্বস্তরের জনতা। সে সময় দিনে দিনে গড়ে ওঠে বিশ্ব জনমত। বাঙালির ন্যয়সংগত দাবির প্রতি সমর্থন জানাতে থাকে অগণিত বিবেকবান মানুষ। নানাভাবে তারা বাড়িয়ে দেয় সহায়তার হাত। পাশে দাঁড়ানোর, তেমনি একটি অসাধারণ ও অসামান্য উদ্যোগের নাম ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট, রোববার।

মানবতার বিপর্যয় দেখে অনেকের মতো কেঁদে উঠেছিল এক মানবতাবাদী মানুষের হৃদয়। তিনি পণ্ডিত রবি শংকর। ভারতীয় এই বাঙালি সেতারবাদকের তখন জগৎজোড়া খ্যাতি। তিনি তখন বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে বন্ধু জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে কথা বলেন। শরণার্থী মানুষগুলোকে সহায়তা করতে একটি কনসার্ট আয়োজনের কথা বলা হয়। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে খুব বেশি সময় নেননি জর্জ হ্যারিসন। মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এই আয়োজনটি করে ফেলেন। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, রিঙ্গো স্টারসহ অনেকে। রবি শংকরের সঙ্গে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সরোদবাদক আলি আকবর খানও ছিলেন অগ্রভাগে। তবলায় ছিলেন আল্লা রাখা আর তানপুরায় কমলা চক্রবর্তী। কনসার্ট থেকে পাওয়া অর্থ পরে ইউনিসেফের মাধ্যমে শরণার্থীদের সাহাযার্থ্যে ব্যবহৃত হয়।