বৈশাখে সামিনায় মুগ্ধ নেদারল্যান্ডসবাসী

Looks like you've blocked notifications!
নেদারল্যান্ডসে পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল (মধ্যে) ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী।

নেচে-গেয়ে, বর্ণিল সাজে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করল নেদ্যারল্যান্ডসের প্রবাসী বাঙালিরা। এই উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেন ঢাকা থেকে উড়ে যাওয়া জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। তাঁর উপস্থাপনা ও সংগীত মুগ্ধ করে সবাইকে। 

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশটির বাংলাদেশ হাউসে ১৭ এপ্রিল এই উৎসবে যোগ দেন প্রায় ৭০০ অতিথি। দর্শকের কাতারে ছিলেন ওয়াজেনারের মেয়র, হেগের ডেপুটি মেয়র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইরান, তিউনিসিয়া, বসনিয়া ও হারজেগোভিনার রাষ্ট্রদূত এবং ক্রোয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, লুক্সেমবার্গসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। নেদারল্যান্ডসের প্রবাসী বাঙালিদের পাশাপাশি বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বাঙালিরা অংশ নেন এই উৎসবে।

বর্ষবরণের বর্ণছটায় বাংলাদেশ হাউস নামে পরিচিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় সম্পূর্ণ দেশীয় আঙ্গিকে। অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে ছিল স্থানীয় শিল্পীদের সংগীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি। দ্বিতীয় পর্বে ছিল জনপ্রিয় শিল্পী সামিনা চৌধুরীর মন-মাতানো পরিবেশনা। নেদারল্যান্ডসে বসন্তের এই রাঙা প্রভাতে উপস্থিত সবাই নিজেদের রাঙান লাল-সাদা রঙের পোশাকে। নারীদের হাতে ছিল মেহেদি, পায়ে আলতা। শিশুরা রাঙিয়েছিল তাদের মুখমণ্ডল। 

ওয়াজেনারের মেয়র তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের রঙিন সংস্কৃতি তাঁকে মুগ্ধ করেছে বলে মন্তব্য করেন। 

দ্য হেগের ডেপুটি মেয়র নেদারল্যান্ডসে পয়লা বৈশাখের মতো আকর্ষণীয় উৎসবের প্রচলন করায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান। কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে রবিঠাকুরের ভাষায় তিনি সবাইকে পহেলা বৈশাখের মূল মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল প্রবাসী বাঙালিদের স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত বেলাল উল্লেখ করেন যে ইউরোপ-আমেরিকার প্রবাসীরা যেমন স্বাধীন, তেমনি এই স্বাধীনতা অন্যের স্বাধীনতাকে সম্মান জানানোর দীক্ষা দেয়। তিনি বিশ্ব মানবতার সেবায় খোলা মনে আলোচনার আহ্বান জানান।   
রাষ্ট্রদূত পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রবাসী বাঙালিদের বিশ্ব সমাজে তাঁদের ভূমিকা মূল্যায়নের আহ্বান জানান। আজকের সমস্যাগুলো যেমন দেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নয়, তেমনি তার সমাধানও দেশের অভ্যন্তরে সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে সবার গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

রাষ্ট্রদূত সবাইকে মনে করিয়ে দেন যে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস এবং স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। 

‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এই মন্ত্রের কথা উল্লেখ করে এবং পয়লা বৈশাখের মর্মকথা ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এরা উভয়ই মানবিকতার মন্ত্রে গাঁথা। এ জন্য যেখানে আমরা ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’কে উদযাপন করছি, সেখানে তিনি সবাইকে বাস্তব জীবনে মানবিকতার চর্চা করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা সবার প্রশংসা কুড়ায়। বাঙালি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরা যেখানে সুরে সুরে মুগ্ধ করেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের, সেখানে নেপালি নৃত্যশিল্পী যোগ করেন বাড়তি রং। 

তবে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল দূতাবাসের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে আসা বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরীর পরিবেশনা। নানা রঙের বাহারি পোশাকে সজ্জিত ছোট্ট শিশুরা সামিনার গানের সঙ্গে নাচের সুযোগ হাতছাড়া করেনি। 

স্থানীয় কমিউনিটির সদস্যরা তাঁদের স্টলে পসরা সাজায় নানা রকম দেশীয় পিঠা-পুলি ও খাবারের। দূতাবাসের পরিবেশিত মধ্যাহ্নভোজের মেন্যুতে বিভিন্ন খাবারের মধ্যে ছিল রকমারি ভর্তা-ভাজি ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পরিবেশন করা হয় অতিথিদের। 

এলাকাজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয় শুধু ‘শুভ নববর্ষ’ যেন প্রবাসী বাঙালিদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ছিল এমন একটি দিনের জন্য।