আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে ইজতেমার প্রথম পর্ব

Looks like you've blocked notifications!
টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে মুসল্লিরা। ছবি : ফোকাস বাংলা

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) শেষ হচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বে তাবলীগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে।

আয়োজকসূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। 

গত দুদিন টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। মোনাজাতের আগেও হবে হেদায়েতি বয়ান।

ইজতেমার এ পর্বে শিল্পনগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দলে দলে ছুটে আসেন টঙ্গীর তুরাগতীরে।

ইজতেমার বয়ান

ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক, ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা।

বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যারা দুনিয়াতে দ্বীনের ওপর চলবে, ঈমানকে সুন্দর ও মজবুত করবে, আমলকে সুন্দর করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে কামিয়াবি দান করবেন। ঈমান ও আমল ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হওয়া যাবে না। ঈমান আমলের পাশাপাশি নামাজকে সুন্দর করতে হবে। আল্লাহকে পেতে হলে নামাজ পড়তে হবে। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে এবং জান্নাত লাভের মাধ্যম হলো নামাজ।

আরও বলা হয়, পরকালে শান্তি পেতে চাইলে ভালো আমল করতে হবে।

ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের বয়ান শোনেন। বয়ানে ওলামায়ে কেরাম বলেন, দাওয়াতের মেহনত হলো নবুওয়াতি মেহনত। এ মেহনত খুলুসিয়াত ও আজমতের সঙ্গে যারা করবে তাদের যেকোনো আমলের ফজিলত বহুগুণ বেড়ে যায়।

বয়ানে বলা হয়, পরকালের চিরস্থায়ী সুখ শান্তির জন্য আমাদের প্রত্যেককে দুনিয়াতে জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের কাজে জানমাল দিয়ে মেহনত করতে হবে। ঈমান আমলের মেহনত ছাড়া কেউ হাশরের ময়দানে কামিয়াব হতে পারবে না।

ইজতেমায় আগত ৭ মুসল্লির মৃত্যু

ইজতেমায় এসে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাত মুসল্লির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার উসমানপুর এলাকার হাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে হুমায়ুন কবীর (৬৫), বার্ধক্যজনিত কারণে আর গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া গ্রামের ভিক্ষু হাজীর ছেলে আবদুস ছোবহান (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ঝিনাইদহ সদর থানার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আ ফ ম জহুরুল আলম (৬২) ও ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫)।

যৌতুকবিহীন বিয়ে

এবারের ইজতেমায় যৌতুকবিহীন শতাধিক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইজতেমা আয়োজক কমিটি গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) আসরের পর এই গণবিয়ের আয়োজন করে। বিয়ে পরিচালনা করেন মাওলানা জোহায়েরুল হাসান।

তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে বর ও কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প চালু করেছে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ। ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে মন্নু টেক্সটাইল মিলস-সংলগ্ন নির্ধারিত স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র এলাকায় ইবনে সিনার এ মেডিকেল ক্যাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

আছে র‍্যাবের চিকিৎসা কেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য পোর্টেবল অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ইজতেমায় স্থাপিত মেডিকেল সেন্টারের মোবাইলফোন নম্বরে (০১৭৭-৭৭২০০৪৫) যোগাযোগ করা জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা, ওষুধপত্র সরবরাহে স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে অস্থায়ী ছয়টি কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রয়োজনে জরুরি অ্যাম্বুলেন্সের বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তুরাগ নদীর উত্তর পাশে এবং রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় দক্ষিণ পাশে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।