মহামারিতে উচ্ছ্বাসে ভাটা, ত্যাগের মহিমা নিয়ে ঈদ

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত। ছবিটি মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে আবারও এসেছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। বাঙালি সমাজে ‘কোরবানির ঈদ’ নামেও পরিচিত এই উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে। বুধবার সকালে ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা তা অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক অতিমারি।

করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধকল্পে গত বছরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁরা পৃথক বাণীতে মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেন।

এদিকে এবারও হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ময়দানের ঈদের জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদুল আজহা ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেছেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ‘আজহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদুল আজহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা।

কঠিন এ সময়ে দেশের আপামর জনগণের প্রতি কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

ত্যাগ-ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্রবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণকে সব সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখছে।

ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কোরবানির শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে : রওশন

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কোরবানির শিক্ষা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বারন্বিত হবে।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালবাসা, অবিচল আনুগত্য ও আকুণ্ঠ আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অতুলনীয়।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সোমবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।

সকাল ৭টা থেকে বায়তুল মোকাররমে জামাত

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূচি অনুযায়ী, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।

দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়  অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক, মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।

চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম  মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, মুকাব্বির থাকবেন ক্বারী মো. ইসহাক।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ  জামাতের ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান, মুকাব্বির থাকবেন মো. শহীদুল্লাহ। এই পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

ঢাবিতে জামাত সকাল ৮টায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে ও ফজলুল হক মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৮টায় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

এ দিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যম যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধাশ্রম, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে।

কোরবানির ইতিহাস

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহপাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ঈদের দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন।

নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কোরবানির ঈদ হওয়ায় অন্যান্যবারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।