আনন্দ-উৎসবে বড়দিন উদযাপিত

Looks like you've blocked notifications!
বড়দিন উপলক্ষে নেত্রকোনায় গির্জায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। ছবি :এনটিভি

সারা বিশ্বে আজ রোববার উদযাপিত হয়েছে শুভ বড়দিন। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এ দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মাবলম্বী মানুষ যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করেন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।

ভজন দাস, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে শুভ বড়দিন।

জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উৎসব পালন করেন। বিভিন্ন গির্জায় ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব, ধর্মীয় সংগীত ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে নানা আয়োজনে উদযাপন করছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।

এম মুনীর চৌধুরী, নড়াইল : বাংলাদেশ খ্রিস্টান মিশন নড়াইল চার্চে বড়দিনের কেক কাটেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য কর্মকর্তরা।

নড়াইল খ্রিস্টান চার্চ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দানিয়েল সুজিত বোসের সভাপতিত্বে বড়দিনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পাস্টর হিউবার্ড বিশ্বাস। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল প্রার্থনা, বাইবেল পাঠ, বড়দিনের গান ও প্রভুর প্রসাদ বিতরণ।

এম. আর. মুর্তজা, মাদারীপুর : সকালে বিশেষ প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও প্রীতিভোজের মধ্য দিয়ে জেলার ১৭টি ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট গির্জায় দুদিনব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন শুরু হয়। এর মধ্যে আছে প্রার্থনা, নগর কীর্তন, আলোচনা সভা, প্রীতিভোজ ও কবিগান।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ক্যাথলিক চার্চ, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, এজি চার্চ ও ফেলোশিপসহ অন্যান্য চার্চ থেকে শনিবার রাত ৯ টায় পৃথকভাবে বের করা হয় নগর কীর্তন। নগর কীর্তন চলবে সারা রাত। কীর্তনে অংশ নিয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের জনগণ। এ উপলক্ষে গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। গির্জা এলাকায় বসছে মেলা।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সরোয়ার হোসেন বড় দিনের নির্বিঘ্ন করতে জেলার প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা : সকাল থেকে মাগুরা শহরের দরিমাগুরা চার্চে অনুষ্ঠিত হয় জেলার প্রধান আয়োজন। সেখানে অনুষ্ঠিত প্রার্থনা সভা পরিচালনা করেন মাগুরা চার্চের পালক হেমন্ত রায়। এ বছর মাগুরা জেলায় ১২টি চার্চে ধর্মীয় সঙ্গীত, বাইবেল পাঠ, প্রার্থনা, প্রশংসা আরাধনা ও কেক কেটে বড়দিন পালন করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে চার্চগুলোতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। 

কাকন রেজা, শেরপুর : শেরপুরের পাহাড়ি জনপদে উৎসবের আনন্দে উদযাপিত হয়েছে শুভ বড়দিন।

এ উপলক্ষে সকাল থেকেই শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গ্রামগুলোতে হয়েছে প্রার্থনা, নগর কীর্তন, প্রীতিভোজসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। 

জেলার বাবেলাকোনা, দিঘলাকোনা, খাড়ামোড়া, গজনী ও মরিয়মনগরসহ ৩০টিওর অধিক গ্রামে নৃগোষ্ঠীর মানুষ গির্জা এবং ধর্মীয় উপাসনায়গুলোতে রাতের প্রথম প্রহরেই কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে বড়দিন উদযাপনের সূচনা করে।

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান : বান্দরবানে নানা আয়োজনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে উৎসবমুখর পরিবেশে কেক কেটে, যিশুখ্রিস্টের গুণকীর্তন, সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে বান্দরবানের ফাতিমা রানী ক্যাথলিক চার্চ, কেন্দ্রীয় গির্জা ব্যাপটিস্ট চার্চ, লুসাইবাড়ী, লাইমীপাড়া, ফারুকপাড়া, গেজমনিপাড়া এবং রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা উপজেলায় পাহাড়ি পল্লীগুলোতে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বড়দিন উৎসব উদযাপন করেছেন।

জেলা সদরের গেজমনিপাড়ায় বড়দিনের উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে কেক কাটেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পাবত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তংঞ্চগ্যা, ক্যাসাপ্রু মারমা, ফিলিপস ত্রিপুরা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াছিন আরাফাত, সদর উপজেলার ইউএনও সুজন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, সমাজসেবা কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার, সফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খ্রিস্টান নেতা ফিলিপস ত্রিপুরা জানান, জেলায় সমবেত প্রার্থনা, সংগীত এবং কেক কাটার মাধ্যমে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালন করা হয়েছে। উৎসব চলবে আরো কয়েকদিন। বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজারেরও অধিক নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ঐতিহ্যবাহী নানা পোশাকে নেচে-গেয়ে এবং প্রার্থনার মাধ্যমে বড়দিন উৎসবে মেতেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা। পাহাড়ি খ্রিস্টানপল্লীগুলোতে চলছে খাওয়া-দাওয়ার আনুষ্ঠানিকতাও।

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : ফরিদপুরে  উৎসাহ- উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। এই উপলক্ষে আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের মিশন হাউসে ধর্মীয় গান ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে উপাসনা শুরু হয়।

শোভাযাত্রা শেষে ধর্মীয় গান পরিবেশনসহ বাইবেল পাঠ ও বড়দিনের তাৎপর্য তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে বক্তারা দেশে দেশে হানাহানি বন্ধ করে সবাই সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন চার্চের প্রধান উপদেষ্টা রেভা ডি পি মুন্সী, উপদেষ্টা মি. পল শ্যামল হালদার, পালক, বিদ্যুৎ সরকার, সম্পাদক আলফ্রেড সজল দাস, জন ডি হালদার, স্টিভ তুর্য বাড়ৈ প্রমুখ।

এর আগে রাতে ৫২ পাউন্ড কেক কেটে বড় দিনের শুভসূচনা করা হয়। এ ছাড়া আলোকসজ্জা ও প্রসাদ বিতরণে আয়োজন করা হয়।

নাসির আহমেদ, গাজীপুর : যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের খ্রিস্টানপল্লী-খ্যাত নাগরী এলাকার মানুষ। সেন্ট নিকোলাস গির্জায় সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সকালে শুরু হয় যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উৎসব। আগত সব শ্রেণি-পেশার যিশুভক্তরা সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য বিনিময় করেন।

বড়দিন উপলক্ষে গাজীপুরের খ্রিস্টানপল্লী নাগরীর সেন্ট নিকোলাস গির্জায় আয়োজন করা হয় বৃহৎ প্রার্থনা সভা। 

সকালে গির্জায় ঘণ্টাধ্বনি, সমবেত প্রার্থনা ও প্রচলিত রীতিনীতির মধ্যদিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়।  এ সময় বর্ণিল সুরের মূর্ছনায় যিশু স্মরণে প্রার্থনা সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বিপুলসংখ্যক যিশুভক্ত নারী-পুরুষ ও শিশু ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নিয়ে প্রভু যিশুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জীবন-যাপন এবং  দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করেন।

শাহজাহান সিরাজ মিঠু, জয়পুরহাট : শুভ বড়দিন উপলক্ষে জয়পুরহাট শহরতলির খনজনপুর মিশন, পলিবাড়ির ওয়েস্ট মিশন-বাংলাদেশ, সদর উপজেলার ভানাইকুশলিয়া মিশন, পাঁচবিবি উপজেলার বাজিতপুরের সেভেনথ ডেজ অ্যাডভেনটিস মারানাথা সেমিনারি, মহীপুরের পাথরঘাটা মিশনসহ বিভিন্ন এলাকার গির্জায় দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা : শুভ বড়দিন উপলক্ষে নগরীর প্রতিটি গির্জায় সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা কেক বিনিময়ের পর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নোনাডাঙ্গা গির্জায় গিয়ে ফাদারের হাতে কেক তুলে দেন ও  শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

খুলনা সিটি কপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান  মনি ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু  একই গির্জায় ফাদারের কাছে কেক প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

মো.  মাসুদ পারভেজ, নোয়াখালী : গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বড়দিনের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল উৎসব। এর পরেই প্রার্থনা করেন পুরোহিত ফাদার লিন্টু এ রয়।

বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সর্ববৃহত্তম ধর্মীয় উপাসনালয় জেলা শহরে সোনাপুর লুর্দের রানির গির্জায় বিভিন্ন ধর্মীয় র্কমসূচির মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে সাজানো হয়েছে ওই গির্জাকে।

জেলা শহরে সোনাপুর লুর্দের রানির গির্জায় উপাসনা সঙ্গীত, কীর্তনসহ ও ধর্মীয় নামাজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঘরে ঘরে সাজানো হয়েছে ক্রীসমাস ট্রি। তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার, কেক। খ্রিস্টানপল্লী লালপুর সোনাপুর, উত্তর লক্ষ্মীপুর এওজবালিয়া দেবীপুর দিনভর বড়দিনের আনন্দে মেতে উঠেছে।

এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা : ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আয়োজনে পাবনায় পালিত হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার গির্জা আলোকসজ্জা, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, গোশালা তৈরি, পিঠা তৈরি, খ্রিস্টানদের বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জাসহ নানা আয়োজন করা হয়।

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা। প্রার্থনা পরিচালনা করেন পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক এ্যালবার্ট আশিস সরকার। প্রার্থনায় দেশের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। প্রার্থনা শেষে বড়দিনের কেক কাটা হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে বড়দিন উদযাপন করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।

জাহিদুর রহমান, সাভার : রোববার সকালে সাভারের রাজাসন এলাকায় ধরেন্ডা ক্যাথলিক চার্চে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা শুভ বড়দিন উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা উৎসব পালন করেছে।

এ সময় ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা পরিচালনা করেন রেফা ফাদার ক্যালভার্ট ডি রোজারিও।

অন্যদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাভারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান, পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি প্রমুখ।

বড়দিন উপলক্ষে ধরেন্ডা গির্জা সেজেছে নতুন রূপে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধরেন্ড গির্জায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।