দেশে দেশে রোজা

তুরস্কে সেহরি-ইফতারে পারিবারিক বন্ধন

Looks like you've blocked notifications!

রমজান মাসে তুরস্কের পরিবারগুলোর সদস্যরা সবাই একসাথে মিলিত হন। এ মাস উপলক্ষেই তাঁরা খাবারের জন্য একটু বেশি সময় কাটান। রোজা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার যেমন সুযোগ হয়, তেমনি দারুণ মজার সব খাবারেরও স্বাদ নেওয়া হয়।

তুর্কিরা সাধারণত ইফতারে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পছন্দ করে। সে কারণেই তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার খাওয়ার জন্য রমজান মাসই হলো সবচেয়ে ভালো সময়।

তবে মজার ব্যাপার হলো, শুধু সন্ধ্যায় ইফতারের মধ্যেই তুর্কিদের রমজানের আয়োজন শেষ হয়ে যায় না। ইফতারের পর রাতের খাবারেও চলে বিশেষ আয়োজনের ধারাবাহিকতা।

রোজার শুরুতে সেহরিকে তুর্কি ভাষায় বলে ‘সাহুর’। সুবেহ সাদিকের আগের এই আহারে সাধারণত ভারি খাবার বর্জন করেন তাঁরা। সেহরিতে কম লবণযুক্ত খাবার খান তাঁরা। এতে করে সারাদিন পানির তৃষ্ণা কম পায়। এ সময় তাদের খাবার টেবিলে থাকে কাজানদিবি, কাশকাভাল পনির, ঠাণ্ডা স্লাইস করা জিহ্বার মতো খাবার।

সেহরিতে তুর্কিরা একটি মাংস ও একটি সবজি জাতীয় খাবার রাখেন। এ ছাড়া পিলাভ বা নুডুলস ধরনের খাবারও থাকে তালিকায়। সঙ্গে থাকে ফলের রস এবং চা।

সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারি থেকে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত চলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে ঐতিহ্যবাহী সব খাবার খাওয়া। চলুন দেখে নিই রমজানের সন্ধ্যায় ইফতারিতে কী কী খাবার অবশ্যই থাকে তুরস্কের মানুষের খাবার টেবিলে-

তাজা পাইড রুটি, তাজা খেজুর, কালো এবং সবুজ জলপাই, তার্কিশ সাদা পনির, তাজা কাসার পনির, পুরনো কাসার পনির, মশলাদার গরুর মাংসের পাতলা স্লাইস, মসলাদার সসেজ, মিষ্টি মাখন, ফল, মধু, প্রচুর পরিমাণে টমেটো ও শশা।

রেসিপি : পাইড রুটি

পুরো রমজান মাসজুড়েই তুরস্কের মানুষ খেয়ে থাকেন হাতে বানানো তাজা পাইড রুটি। পুরো তুরস্কের সব বেকারিই গরম গরম এই রুটি তৈরি করে।

রুটি তৈরি করতে যা লাগবে :

ময়দা : চার কাপ

ইনস্ট্যান্ট ড্রাই ইস্ট : এক প্যাকেট

উষ্ণ পানি : সোয়া কাপ

উষ্ণ তরল দুধ : হাফ কাপ

নরম মাখন বা মার্জারিন : এক টেবিল চামচ

জলপাই তেল : দুই টেবিল চামচ

চিনি : এক টেবিল চামচ

লবণ : এক চা চামচ

ডিমের কুসুম : একটি

দই : আধা কাপ

তিল : এক টেবিল চামচ

কালোজিরা : এক চা চামচ

যেভাবে তৈরি করবেন

বড় একটা পাত্রে ময়দা নিন। এবার পুরো এক প্যাকেট ইস্ট দিয়ে দিন। তারপর হাত দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন।

এরপর প্রথমে উষ্ণ পানি দিয়ে একটি কাঁটাচামচ দিয়ে মেশান। এরপর উষ্ণ দুধ দিয়ে একইভাবে মেশান।

নরম মাখন বা মার্জারিন ও জলপাই তেল দিয়ে মাখান। সবশেষে দিন চিনি আর লবণ। ভালো মতো মেশান।

এবার ১৫ মিনিট ধরে খামিরটি মাখুন। ১৫ মিনিট পর একটু ময়দা ছিটিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য আবার খামিরটি মাখুন।

এরপর খামিরটি একটি উষ্ণ স্থানে হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য ঢেকে রাখুন।

দুই ঘণ্টা পর খামিরটি ফুলে দ্বিগুণ হবে। এরপর রুটি বেলার পিঁড়িতে অল্প ময়দা ছিটিয়ে এর ওপর খামিরটি রেখে এটিকে ধারালো কোনো ছুরি দিয়ে দুই ভাগে কেটে নিন।

এবার প্রতি ভাগকে আধা ইঞ্চি পুরু করে পাতা, ডিম্বাকৃতি বা গোল আকারে গড়ে নিন। একটি ধাতব বেকিং ট্রেতে ময়দা ছিটিয়ে রুটির খামিরটি রাখুন।

এবার খামিরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি ধারালো ছুরি দিয়ে চিরে দিন। চাইলে ওপরে বিভিন্নভাবে চিরতে পারেন।

এবার অন্য একটি পাত্রে দই ও ডিমের কুসুম মেশান। একটি ব্রাশের সাহায্যে রুটির ওপর এই মিশ্রণ লাগান। এর ওপর তিল ও কালোজিরা ছড়িয়ে দিন।

ওভেনে রুটির ট্রের নিচের তাকে আরেকটি ট্রেতে পানি দিয়ে রাখুন। এবার প্রিহিট ওভেনে ৪৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধরে বেক করুন। রুটির ওপরের অংশ গাড় ও সোনালি বাদামি রং হয়ে এলে আপনার পাইড রুটি ওভেন থেকে বের করে গরম গরম পরিবেশন করুন।

ইফতারের পর রাতের খাবারেও চলে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ধারাবাহিকতা। এই তালিকায় থাকে কাজু তান্দির বা তন্দুর করা ভেড়ার মাংস, হানকার বেগেন্ডি, মানতি বা তুর্কির বিশেষ প্রক্রিয়ার রান্না করা ডাম্পলিংস, বাকালাভা। সঙ্গে থাকে নোনতা স্বাদের দই দিয়ে তৈরি পাণীয় আয়রান, শরবত, বিভিন্ন রকম ফলের রস।

এসব খাবারের মধ্যে হানকান বেগেন্ডি বেশ জনপ্রিয়। চলুন দেখে নিই এর রেসিপি।

যা লাগবে :

ছোট ছোট টুকরোয় কাটা গরুর মাংস : ৭৫০ গ্রাম

বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা করে নেওয়া : চার কাপ

পেঁয়াজ কুচি : একটি

টমেটো কুচি : একটি

লবণ : এক চা চামচ

গোলমরিচ গুঁড়া : আধা চা চামচ

চিনি : আধা চা চামচ

মাখন : তিন টেবিল চামচ

ময়দা : দুই টেবিল চামচ

দুধ : তিন থেকে চার কাপ

তার্কিশ কাসার পনির বা ইটালিয়ান পনির কুচি : ১/৩ কাপ

সাদা গোলমরিচ গুঁড়া : স্বাদমতো

থেঁতো করা রসুন : ১ থেকে ২ কোয়া

যেভাবে তৈরি করবেন

একটি ঢাকনাওয়ালা প্যানে পেঁয়াজ, টমেটো, মাংস, লবণ, গোলমরিচ আর চিনি মিশিয়ে নিন। প্রথমে বেশি তাপে রান্না করুন। কিছুক্ষণ পর তাপ কমিয়ে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে একটি ঘন সসের মতো তৈরি হবে। এর জন্য প্রায় এক ঘণ্টা রান্না করতে হবে।

মাংস রান্না হতে হতে বেগুনের মিশ্রণটা তৈরি করে নিন। বেগুন পুড়িয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। একটা পাত্রে মাখন গরম করুন। এরমধ্যে ময়দা দিন। ঘন ঘন নাড়ুন। খেয়াল রাখুন যেন পুড়ে না যায়। এরমধ্যে দুধ দিন ও ক্রমাগত নাড়ুন, যেন দলা বেঁধে না যায়। একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি হবে।

এই মিশ্রণে লবণ, গোলমরিচ এবং থেঁতো করা রসুন দিন। এই মিশ্রণটি গরম থাকবে কিন্তু ফুটতে দেবেন না। এবার এরমধ্যে বেগুন ও পনির দিয়ে নাড়ুন। এবারও একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি হবে।

চুলার তাপ সবচেয়ে কমিয়ে রাখুন। এই অবস্থায় মিশ্রণটি বুদবুদ ওঠা পর্যন্ত চুলায় রাখুন। ঘন একটি মিশ্রণ তৈরি হয়ে গেলে ভালোভাবে নেড়ে নিন।

সবশেষে পরিবেশন পাত্রে প্রথমে বেগুনের মিশ্রণ দিন। এর ওপর মাংসের মিশ্রণ দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।