সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির ঈদ আজ

Looks like you've blocked notifications!

চারদিকে আজ খুশির বার্তা। চারদিকে আজ আনন্দের ঝিলিক। এক মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশে আজ শনিবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে মুসলমান শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয় অন্য ধর্মাবলম্বী লোকজনও। ঈদুল ফিতর আমাদের বাঁধে সৌহার্দ্য, সাম্য ও ঐক্যের বন্ধনে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর ঘরে ঘরে বইছে ঈদের আনন্দ। শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইতোমধ্যে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ পালনের জন্য নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি গেছেন। অনেকে এখনো পথে আছেন।  

ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।  

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন নির্ধারণ ও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়কমন্ত্রী এবং জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।


বৈঠক শেষে ধর্মবিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ জুলাই, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। আলহামদুলিল্লাহ। এ অবস্থায় আগামীকাল ৩ শ্রাবণ, ১৪২২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জুলাই, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার থেকে ১৪৩৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাস গণনা করা হবে এবং সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর আগামীকাল উদযাপিত হবে।’

গতকাল শুক্রবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন অনেক মুসল্লি।

ঈদের দিন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বনানীর ঢাকা গেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়কদ্বীপগুলোতে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের আগের দিন থেকে টানা সাতদিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। 

ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। 

এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগ এবং নগরীজুড়ে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।

বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

রাজধানীতে ঈদের জামাত

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের সময়সূচি সকাল সাড়ে ৮টায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের বিশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা পর পর জামাত অনুষ্ঠিত হবে। 

ঈদ ঐক্যের বন্ধনে বাঁধে : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। 

বাণীতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ঈদ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। এদিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদুল ফিতরের আবেদন তাই চিরন্তন।

ঈদ ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পবিত্র ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।

মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদ শান্তি সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয় এবং সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সকল মানুষকে।

ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসুক, এ কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পবিত্র এ দিনে আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করছি।’

ঈদ মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করায় : খালেদা জিয়া 

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদ উপলক্ষে এক বাণীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ঈদুল ফিতর সমাজের সকল ভেদরেখা ও সীমানা অতিক্রম করে মানুষে মানুষে মহামিলন ঘটায় ও সৃষ্টি করে পরস্পরের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছাবোধ। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করায়।’ 

‘হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ ও তিক্ততার গ্লানি থেকে মানুষের মনকে এক স্বর্গীয় শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনা দান করে ঈদুল ফিতরের উৎসব। তাই আজকের এই উৎসবের দিনে প্রতিটি মুসলমান নর-নারী সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আনন্দকে একত্রে উপভোগ করতে হবে। ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর, পরিশুদ্ধ ও সংযমী করে গড়ার লক্ষ্যে মোমিন মুসলমানরা ব্রত নিয়ে থাকেন।’ 

খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘এই মর্মবাণী সামাজিক কদর্য, অন্যায় ও নিষ্ঠুর অসাম্যকে অতিক্রম করে এক নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধের প্রেরণা জাগায়। আর এই প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য।’