আপনার জিজ্ঞাসা

মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণের পর আখেরি মোনাজাত করেছিলেন?

Looks like you've blocked notifications!

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া।

জুমাবারের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৫৩৬তম পর্বে বিদায় হজে রাসূল (সা.) আখেরি মোনাজাত করেছিলেন কি না, সে সম্পর্কে টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।

প্রশ্ন : আমরা বিশ্ব ইজতেমায় অনেকেই বয়ান শোনার চেয়ে আখেরি মোনাজাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং সেখানে শরিক হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি। হুজুর মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে লাখ লাখ সাহাবির সামনে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পরে কি তিনি আখেরি মোনাজাত করেছিলেন? এ ব্যাপারে শরিয়ত কী বলে?

উত্তর : প্রথমত, বিশ্ব ইজতেমার নামে যা হচ্ছে, সেটা আসলে দোয়ার মজলিশ। এই মজলিশকে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ এভাবে বলা আসলে ঠিক নয়, কারণ এটি বিশ্ব ইজতেমা নয়। প্রকৃত বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে হজের ময়দান। আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে, আরাফার ময়দানে সারা দুনিয়া থেকে মানুষ আসে, তাই সেটি হবে বিশ্ব ইজতেমা। এটির বিকল্প দাঁড় করানোর চিন্তা যেন কেউ না করে। হজের সঙ্গে এর কোনো তুলনাই করা যাবে না। করলে এতে বেয়াদবি যেমন হবে, তেমনি গুনাহও হবে। এটি কোনো ক্রমেই করা যাবে না। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এ জাতীয় চিন্তা কারো থাকলে আল্লাহ তাঁদের মনকে শুদ্ধ করে দিন, তাঁরা যেন এর থেকে বেরিয়ে আসেন।

দ্বিতীয় হচ্ছে, ওয়াজ শোনার জন্য মানুষ জড়ো হতেই পারেন, রাসূলের (সা.) মজলিশেও মানুষ একত্র হতো। কেউ যদি ওয়াজ শোনার জন্য এসব মজলিশে যায়, আপনি বাধা দিতে পারবেন না। সেখানে আলেমরা আসেন, মানুষ তাঁদের ওয়াজ শোনেন। তাবলিগে এটি ছিল মূলত তাবলিগি ভাইরা কখন কী কাজ করবেন, দাওয়াতের কাজের জন্য বের হবেন, সেগুলো নির্ধারণের জন্য তাঁদের একটি ইজতেমা ছিল। ধীরে ধীরে এটা এখন জনসাধারণের ইজতেমায় পরিণত হয়েছে, এখন এটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে।

এই জাতীয় ইজতেমায় মানুষ যে ওয়াজ শুনতেই যায় তা কিন্তু নয়, কারণ সেখানে অনেক সময়ই ভিন্ন ভাষায় ওয়াজ হয়। মানুষ বুঝতেও পারে না কী ওয়াজ হচ্ছে। অনেকেই মনে করে, ওখানে গেলেই বুঝি তাঁর গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এটি ভাবলেই গুনাহের কাজ হয়ে যাবে। কারণ সেখানে শুধু গেলেই গুনাহ মাফ হবে না। তা ছাড়া সেখানে গিয়ে অতিরিক্ত সওয়াবের আশা করলেও গুনাহ হবে। সেখানে গিয়ে আপনি যদি বড় জামাতে নামাজ পড়েন,  তাহলে সেই কারণে আপনি সওয়াব পাবেন, এর বাইরে আর কোনো সওয়াবের আশা করা যাবে না। এই ইজতেমায় গেলে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে, এটি ধরে নিলেই আপনি সম্পূর্ণ গুনাহের ভেতর পড়ে যাবেন এবং অনেক সময় এটি শিরকের কারণও হয়ে যেতে পারে।

মনে রাখবেন, যেখানে রাসূলের সুন্নাতের গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, সেখানে যাবেন না।

আমাদের উচিত মানুষের ভুল ভেঙে দেওয়া। একটি জিনিস মনে রাখবেন, মোনাজাত হচ্ছে আল্লাহ এবং বান্দাদের মধ্যে গোপন কথা। এটি বান্দা শেষ রাতে বলবে, একান্তে বলবে, জুমার দিনে বলবে। সবার সঙ্গে করলে সেটা কীভাবে মোনাজাত হবে! এটি দোয়া হতে পারে। দোয়া যদি কেউ করে সেটি করতে পারে, কিন্তু তার আবার আখেরি মোনাজাত নাম দিয়ে মানুষকে আহ্বান জানিয়ে মানুষকে ভুলে মধ্যে রাখা, এটি খুবই খারাপ জিনিস। এই জন্য মানুষকে বলে দেওয়া উচিত যে এই বছর কোনো আখেরি মোনাজাত নেই, মানুষ যেন ভুলটি বুঝতে পারে।

অনেকে সারা জীবন হারাম খেয়েছে, ঘুষ খাচ্ছে, সুদ খাচ্ছে অথচ আখেরি মোনাজাতের জন্য তাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়ে, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে, সরকারি অফিস বন্ধ করে দিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছে, উম্মতের কাজগুলো বন্ধ করে দিয়ে সেখানে উপস্থিত হচ্ছে, এগুলো কিসের ভিত্তিতে! কিসের জন্য করছে !

তাঁরা তাঁদের অফিসগুলো শরিয়ত ভিত্তিতে চালাক, তাঁদের হক আদায় করুক, এটিই হবে তাঁদের দায়িত্ব। সেখানে সব মানুষ একত্র হয়ে আখেরি মোনাজাতের নামে যা চালু করেছে, সেটি অবশ্যই বেদাত। আপনি ঠিকই বলেছেন রাসূল (সা.) বিদায় হজে এ রকম কোনো মোনাজাত করেননি এবং এখনো হজের ময়দানে আমরা যখন একত্র হই, হাজিরাসহ আমরা সেখানে কোনো মোনাজাত করি না, কারণ এই জাতীয় মোনাজাত বেদাত। এভাবে মোনাজাত করা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে, গোপনে আপনি আল্লাহর কাছে মোনাজাত করবেন, কথা বলবেন। আপনি জানেন, আপনার কী অভাব। আল্লাহতায়ালা আপনার অভাব পূরণ করবেন। কিন্তু আরেকজন আপনার অভাব কীভাবে জানবে, জানার তো কোনো সুযোগ নেই। এই জন্য আল্লাহর কাছে রাতের আঁধারে বা যখন সুযোগ হয়, তখন বিনীত হয়ে দোয়া করবেন। দোয়া হচ্ছে ইবাদত আর হাত তুলে দোয়া করা হচ্ছে ইবাদতের প্রাণ এবং এটি হচ্ছে আদব। কিন্তু দোয়ার মজলিশ বসালে সেটি কিন্তু বেদাতে পরিণত হবে।