আপনার জিজ্ঞাসা

মৃত্যুর পর চল্লিশা করা কি ঠিক?

Looks like you've blocked notifications!

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৫৪তম পর্বে ই-মেইলে মৃত ব্যক্তির চল্লিশা করা সম্পর্কে ঢাকা থেকে জানতে চেয়েছেন আবদুল্লাহ। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।

প্রশ্ন : মৃত্যুর পর আমাদের মৃত ব্যক্তির জন্য অনেক কিছু করা হয়, যেমন : মিলাদ বা চল্লিশ দিনের সময় অনেক লোক খাওয়ানো। এ সম্পর্কে বলবেন?

উত্তর : খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। প্রথম কথা হচ্ছে, আমাদের আত্মীয়স্বজন যখন মারা যায়, সে হতে পারে মা, হতে পারে বাবা, হতে পারে স্ত্রী, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মানুষের মধ্যে কেউ হতে পারে। তাঁদের জন্য আমাদের করণীয় আছে। কারণ, তাঁরাও তো আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। পিতা-মাতা কত কষ্ট করে সন্তানকে লালন-পালন করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের মৃত্যুর পর সন্তানের করণীয় রয়েছে।

কিন্তু করণীয়টা না জানার কারণে আমাদের যেটা করা দরকার, সেটা না করে ভুল কাজ করে ফেলি। আমরা এমন কাজ করে ফেলি, যেটা করার মধ্যে আমাদের কোনো কল্যাণ নেই, তাঁদেরও কোনো কল্যাণ নেই। আমরা আবেগতাড়িত হয়ে বেদআতি কাজের মাধ্যমে চেষ্টা করি তাঁদের উপকার করার জন্য।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনের মধ্যে শিক্ষা দিয়েছেন, আল্লাহর নবী (সা.) তো কত সুন্দর করে বলে দিয়ে গেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়।’ অর্থাৎ তার আমল আর চলতে থাকে না, আমলনামার মধ্যে আর কোনো আমল যোগ হয় না। তিনটি ব্যতীত, প্রথমত সাদকায়ে জারিয়া। তাঁদের জন্য আমরা সাদকায়ে জারিয়া করতে পারি। যেমন—একটা স্কুল করে দিলেন, একটা মাদ্রাসা করে দিলেন, একটা টিউবওয়েল বসিয়ে দিলেন। নবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হয়েছে, হে আল্লাহর নবী (সা.), সবচেয়ে উত্তম সাদকা মৃত ব্যক্তির জন্য কোনটি? তখন নবী (সা.) বলেছেন যে, মানুষদের সুপেয় পানি পান করানোর ব্যবস্থা করা।

দ্বিতীয়ত, এমন জ্ঞান, যে জ্ঞান সে রেখে গেছে, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

সবশেষে নেক সন্তান, যে নেক সন্তান তার জন্য দোয়া করবে। সুতরাং নেক সন্তান পরিগঠন করতে হবে এবং হাদিসে এই দোয়ার কথাই মূলত বলা হয়েছে। অনেক সময় নিজে দোয়া না করে বাইরের থেকে বা লোক ভাড়া করে দোয়া করা হয়। তাহলে তো আপনি নেক সন্তান হতে পারলেন না। পিতা-মাতার জন্য দোয়া আপনি নিজেই করবেন।

নবী (সা.)-এর আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মারা যান, তাঁর কবরের মধ্যে কিছু কাজের প্রতিদান নিয়মিত যেতে থাকে।’ এখানে নবী (সা.) যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো, তিনি যখন কোনো গাছ রোপণ করেন এবং এর ফল মানুষ ভক্ষণ করবে, কোনো নদী যখন তিনি প্রবাহিত করে গেছেন এর থেকে মানুষ যখন উপকৃত হবে, কোনো একটি কোরআন বা কিতাব কাউকে দিয়ে গেছেন, এ বইয়ের মাধ্যমে যখন তিনি উপকৃত হবেন। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই কাজগুলো আমরা করব এবং তাদের জন্য দোয়া করব।

লোকজনকে খাওয়ানো যাবে, কিন্তু চল্লিশ দিনে চল্লিশা করা যাবে না। এটি রাসূল (সা.) বলেননি। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো সময় আত্মীয়স্বজন, লোকদের খাওয়াতে পারেন। কিন্তু সেটি চল্লিশ দিনেই হতে হবে, সেটি নির্ধারণ করা যাবে না। ইসলামে নিজস্ব ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো সময়ে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি আত্মীয়স্বজনকে খাওয়াতে পারেন। তবে সেটাকে ৪০তম দিনেই নির্ধারণ করা যাবে না।