ঠাকুরগাঁওয়ের দৃষ্টিনন্দন বালিয়া মসজিদ

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কিছু প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম মসজিদ হলো ঐতিহ্যবাহী বালিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বালিয়া জ্বীনের মসজিদ। শত শত বছরের পুরোনো কারুকার্যময় এই মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে আকর্ষণ হয়ে। মসজিদটির নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন এই মসজিদটি দেখতে। কালের সাক্ষী হয়ে মসজিদটি দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজ মহিমায়। আর উপজেলা প্রশাসন বলছেন ঐতিহ্যবাহী এসব জিনিস ধরে রাখতে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে উত্তর দিকে পঞ্চগড় মহাসড়ক ধরে ১০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই ভুল্লি বাজার। সেখান থেকেই প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে বালিয়া ইউনিয়নে ‘জিন মসজিদ’ নামে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি অবস্থিত। যা দেখতে প্রায় সময় ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
এখনো লোকমুখে আজও প্রচলন আছে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল এক রাতেই। জ্বিন-পরীরা সারারাত জেগে এই মসজিদ বানিয়েছে। অনেক রকমের কারুকার্যময় অলংকরণ ও পুরু দেয়াল গড়তে গড়তে রাত শেষ হয়ে যায়। দিনের আলোয় জ্বিন-পরীরা থাকে না, তাই গম্বুজের কাজ শুরু না করেই তারা চলে যায়। অসম্পূর্ণ থেকে যায় মসজিদটি ঠাকুরগাঁওয়ের প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে প্রচলিত আছে এমনই লোককাহিনী।
আরও পড়ুন : অনন্য স্থাপত্য আস-সালাম জামে মসজিদ
স্থানীয়রা বলছেন, মুঘল স্থাপত্য রীতিতে ১৯১০ সালে স্থানীয় জমিদার মেহের বকস চৌধুরী মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজ চলাকালে সেই বছরেই মারা যার তিনি। পরবর্তীতে তার ছোট ভাই মসজিদটি নির্মাণের জন্য আবারও উদ্যোগ নেয়। কাজ শেষ না হতে তিনিও মারা যান। এরপর প্রায় ১০০ বছর গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে মসজিদটি। পরে ২০১০ সালে মেহের বকস চৌধুরীর উত্তরাধিকার তসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় মসজিদটির সংস্কার কাজ হয়। স্থপতি সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশলের নকশায় নতুনভাবে গম্বুজ নির্মাণ করা হয় মসজিদটির। এরপর থেকেই মসজিদটিতে নামাজ আদায় শুরু করেন মুসল্লিরা।
মসজিদের ছাঁদে একই সাইজের তিনটি গম্বুজ ও আটটি মিনার আছে। যার মধ্যে চার কোণের চারটি মিনার বড় এবং বাকি চারটি ছোট। ভিত্তিসহ পুরো মসজিদটিই হাতে পোড়ানো ইট দিয়ে নির্মিত। মসজিদের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ইট কেটে কলস,ঘণ্টা, ডিশ, বাটি, আমলকি ও পদ্ম ইত্যাদি নকশা তৈরি করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দর্শনার্থীদের কাছে মসজিদটি আরো আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।