রম্য
কাজের বুয়া সমাচার
যারা ব্যাচেলর ও মেসে থাকেন, তাদের কাছে বুয়ার কদর সবচেয়ে বেশি। মেসে রান্না করতে গিয়ে বুয়ারা যেসব কাণ্ড কারখানা করেন, সে সংক্রান্ত একটি কম হাফ ডজন সত্য তথ্য তুলে ধরছেন হাস্যরস প্রতিবেদক।
১. বুয়া যখন রান্নার কাজে মেসে প্রবেশ করবেন, তখন মোটামুটি গোটা পাড়া জেনে যাবে। তিনি জোরে দরজা লাগাবেন, বাসনকোসন হাত থেকে ফেলে দেবেন, নানাভাবে উচ্চ শব্দের সৃষ্টি করবেন।
২. রান্নার কাজে লাগার আগে তিনি পান-সুপারি মুখে দেবেন। সেই পান-সুপারি বাধ্যতামূলকভাবে মেসের ব্যাচেলরদের সরবরাহ করতে হয়। কোনো কোনো বুয়ার জন্য দুধ চা বানানোর যাবতীয় উপাদান সরবরাহ করতে হয়।
৩. বুয়ারা নিজেদের অত্যন্ত প্রভাবশালী মনে করেন। তাঁদের ভাবটা থাকে এ রকম- যারা আমাকে মেসে রান্নার কাজ দিয়েছে, এটা কোনো বিষয়ই না। বরঞ্চ আমি যে রাঁধতে এসেছি, এটাই অনেক বড় বিষয়।
৪. কোনো মেসে মাস দুয়েক রান্নাবান্না করার পরই বুয়ারা বেতন বাড়ানোর আবদার করেন। এ ক্ষেত্রে, তাঁদের কথামতো বেতন না বাড়ালে তিনি ঘোষণা দেন, ‘মামা, আমি আগামী মাস থেকে আর কাজে আমু না।’
৫. প্রত্যেক বুয়ার কাছে তাঁর পূর্বের কর্মস্থল হচ্ছে ‘সেরা কর্মস্থল’। বর্তমান কর্মস্থলে তিনি কথায় কথায় বলবেন, ‘আগের মেসে আমি কত ভালা ছিলাম। বেশি টেহা দিত, সপ্তাহে ছুডিও দিত।’ অথচ, পূর্বের কর্মস্থল থেকে যে তিনি কর্মচ্যুত হয়েছিলেন, সেটা কখনোই বলবেন না।
৬. মেসে কোনোদিন রান্নার কোনো একটি জিনিস না থাকলে সেদিন আর রক্ষা নাই্। তিনি চিৎকার করে গোটা পাড়া মাথায় তুলবেন। ‘এ ক্যামন মেসরে বাবা। এরা ঠিকমতো বাজার করে না, রান্নার কিছু আনে না, কি রানমু, কি করমু, আমার হইছে মহাজ্বালা, একেকজন লাটসাহেব হয়ে গেছেন, বাজার করার সময় নাই, এই মেসে আমি আর নাইরে বাবা....’ এ ধরনের কথাবার্তা তখন বুয়ার মুখ থেকে শুনতেই হবে।
৭. কোনদিন যদি বুয়া রান্না করতে না আসেন, তবে তাঁকে কিছুই বলা যাবে না। যদি কেউ ‘আপনি না এলে আমরা খাব কী?’ বলে বসে, তবেই হয়েছে। বুয়ার কথার ঝাঁজে তার কান ঝালাপালা হয়ে যাবে।
৮. প্রত্যেক ব্যাচেলরের কাছে বুয়া হচ্ছেন অঘোষিত ‘খালাম্মা’। তবে একটু কমবয়সী বুয়াদের ‘খালাম্মা’ ডাকলে তারা ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আমারে কি আপনার বুড়ি মনে হয়? এইটুকুন বয়স আমার।’
৯. ‘গতকালের তরকারিতে লবণ বেশি ছিল খালা’ তরকারি নিয়ে বুয়াকে এ ধরনের কথা বললেই বিপদে পড়তে হয়। বুয়া এতে রেগেমেগে আগুন হয়ে তরকারিতে আরো বেশি করে লবণ দেন।
১০. প্রত্যেক বুয়ার হাতে চাইনিজ মোবাইল ফোন থাকে। সে ফোনের রিংটোন শুনে মেসের বাসিন্দাদের বুকে ধড়ফড়ানি শুরু হয়। হঠাৎ করে যদি উচ্চশব্দে ‘লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স..’ কিংবা ‘ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শুনে না....’ ধরনের রিংটোন বেজে ওঠে, বুকে তো ধড়ফড়ানি শুরু হবেই।
১১. যেদিন মেসে যাবতীয় জিনিসপত্র পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়ে বেশি মজুদ থাকে, সেদিন বুয়া কোনো খুঁত ধরতে না পারার রাগে পুড়েন। ওই সময় তাঁকে ‘খালাম্মা, ভালো আছেন?’ ধরনের কথাও বলা বিপজ্জনক। বললেই শুরু হবে, ‘আমি ভালা আছি কি না এইটা দিয়া আফনে কিতা করবাইন। আফনার ইতা জানার কাম কিতা। আজাইরা কথা কইয়া আমার সময় নষ্ট করবাইন না...।‘