রম্য গল্প
‘মুকুল ম্যান’
এক অদ্ভুত নামের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো কদিন আগে। প্রোফাইলে নাম ‘তদবির পার্টি’।
প্রোফাইল ছবি হিসেবে একটা তেলের বোতলের ছবি দেওয়া।
প্রথমে ভাবলাম, নতুন দলটল হবে কোনো। ইদানীং অনলাইন পত্রিকা আর রাজনৈতিক দলের মা-বাপ লাগে না। যখন-তখন হয়ে যাচ্ছে। পরে ভাবলাম না, রাজনৈতিক দল হলে তো ফেসবুকে পেজ খোলার কথা। অ্যাকাউন্ট খুলে জনে জনে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর কোনো কারণ নেই।
বুঝলাম, ঘাপলা আছে। আবার মজাও পাচ্ছি। ঢোকার আগ্রহ নিয়ে নক করলাম।
তদবির পার্টির মার্কাটা কী?
অপর প্রান্তেও যে একজন রসিকরাজ বসে আছেন, বুঝিনি। তিনি লিখলেন, মার্কা হচ্ছে তেলের শিশি।
তাই নাকি! মার্কা তেলের শিশি?
জি ভাই। খালি শিশি না। ভর্তি তেলের শিশি। তেলের শিশি ভাঙল বলে খোকার ওপর রাগ করো? / তোমরা যেসব বুড়ো খোকা তেল মেখে হাত দাগ করো। তার বেলা?
মার্কাটা তো বুঝলাম। কিন্তু পরেরটা বুঝিনি। ওটা কি গান ছিল?
না ভাই, গান না। ওটা হচ্ছে স্লোগান।
স্লো গান?
জি।
তাহলে এত দ্রুত গাইলেন কেন?
মানে!!
মানে, স্লো গান তো ধীরে ধীরে গাওয়া উচিত। স্লো গান, অর্থাৎ ধীরলয়ের গান।
ও বুঝছি। লোল।
লোল! এটা আবার কী জিনিস?
এইটা হইল ভাই কথার ঝোল। মজার কথায় ঝোল থাকে। আর ঝোল বোঝানোর জন্য লোল লিখতে হয়।
থামেন। থামেন। এত লোল ফালাইয়েন না। আমার সূচিবাই আছে। টিস্যু দিয়ে লোল মোছেন। তারপর বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আছে আপনার দলের?
না ভাই, ওসব লাগে না।
তাহলে আর কিসের দল হলো!
এইটা ভাই এক নেতার এক দল। ওয়ান ম্যান আর্মি। আমিই সব। ঘোষণা দিয়া তদবির করি। তদবিরে তকদির। তবে নিজের জন্য করি না। মানুষের জন্য করি। আমি মানুষের কথা বলিতে ব্যাকুল...
বাপরে। তা মানুষের কী কথা বলেন?
মানুষের মনের কথা। মন কী যে চায় বলো...। অনেকের মন অনেক কিছু চায়। কিন্তু মুখ ফুটে সেটা বলতে পারে না। যে কারণে অনেক মুকুল না ফুটেই ঝরে যায়। কিন্তু কেন?
কেন?
একটু তদবিরের অভাবে। একটু তদবিরের অভাবে শত শত ফুল না ফুটিতেই ঝরে যায়। পলাশ ফুটেছে। অন্যদেরও ফুটতে হবে। কারণ কবি বলেছেন, শত ফুল ফুটতে দাও। তাই তো আমি মুকুল ম্যানদের জন্য তদবির করি।
মুকুল ম্যান! এটা কি জিনিস?
ফোটার অপেক্ষায় মুকুল অবস্থায় যেসব মানুষ ঝুলে আছে, তারা হচ্ছে ‘মুকুল ম্যান’। আজকের মুকুল আগামীকালের ফুটন্ত গোলাপ। মাঝখানে একটু তদবিরের চর্চা। আমি সেই কাজটাই করি।
বাহ। আইডিয়া ভালো। তার মানে আপনি মানুষের জন্য তদবির করেন।
জি ভাই। মানুষ মানুষের জন্য। একটু তদবির কি করতে পারি না? ও বন্ধু...
আপনার পার্টিতে দেখছি কথার চেয়ে গান বেশি হয়। তা কোন কোন আইটেমের তদবির করেন?
সৃজনশীল শাখার সব ধরনের তদবির করি ভাই। যখন যার যে ধরনের তদবির দরকার। তবে সচিবালয়কেন্দ্রিক তদবিরে যাই না আর পার্সেন্টিজ খাই না।
খুবই ভালো। কিন্তু আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর কী কারণ, সেটা বুঝতে পারছি না।
এর পেছনেও আছে তদবির।
আমার কাছে! তদবির?
জি ভাই। আপনার নাম পলাশ। আপনি ফুল ফোটার বেদনা বুঝবেন।
ও আচ্ছা। তা কী তদবির?
আমার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের ছোট শালির উপস্থাপনা করার খুব শখ। তার গলা ভালো, বলাও ভালো। হাঁটা-চলা সেটাও ভালো। এখন শুধু তলা থেকে একটু পুশিং দরকার। সেই তদবির করার জন্য আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। প্লিজ একসেপ্ট।
তদবির পার্টির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর আসল উদ্দেশ্য এই পর্যায়ে পরিষ্কার হলো।
আমাকে অনেকক্ষণ চুপ দেখে অপর প্রান্তে অস্থিরতা।
কী হলো ভাই! প্লিজ একসেপ্ট।
হমম। ভাবছি কোনটা একসেপ্ট করব? ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নাকি তদবির?
আগে তদবির পার্টিরে করেন, তার পর তদবির। কান টানলে মাথা এমনিতেই আসবে। লোল।
কোনটা কান কোনটা মাথা? এত দেখি বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে গেল। আপনি যদি আবার সেই বাঁশে তেল মাখেন, তাহলে তো মহাবিপদ।
এবার লোকটা একটু বিরক্ত। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করানোতেই এত তদবির করতে হচ্ছে। আসল কাজে না জানি কত কী করতে হয়। তার বিরক্তি কথায় প্রকাশ পায়।
ভাই, আপনি কি একসেপ্ট করবেন?
কোনটা?
দুটাই।
দুটো যে করা যাবে না। যেকোনো একটা। ইউর চয়েজ।
ওকে। তাইলে তদবিরটাই করে দেন। কর্তার চেয়ে কর্ম বড়। লোল।
তাহলে কর্ম দিয়েই বড় হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। তাহলে তো আর তদবির করতে হয় না। লোল...
আমার মুখে লোল শুনে অপর প্রান্তের বোল বন্ধ হয়ে গেল।