রম্যরচনা
যেসব জায়গায় সময় বেঁধে দিলে সফলতা আসবেই
পয়লা বৈশাখে সরকার সন্ধ্যা ৬টার পর খোলা জায়গায় উৎসবের ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করে সফলতা পেয়েছে। গতবারের মতো কোনো লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেনি। দৈনন্দিন জীবনে এমন আরো কিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে সময় বেঁধে দিলে সফলতা আসার সম্ভাবনা আছে। সেগুলো নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
১. গার্লস স্কুল-কলেজের সামনে দাঁড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়া
গার্লস স্কুল-কলেজের সামনে প্রায়ই একদল যুবকের ভিড় দেখা যায়। এদের অনেকেই ইভ টিজিং করে থাকে। এ সমস্যা এড়াতে সরকার যদি নিয়ম করে সকাল ৯টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গার্লস স্কুল-কলেজের সামনে যুবকদের আড্ডা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তাহলে এই খাতেও সফলতা পাওয়া সম্ভব!
২. রাত ১২টার পর মোবাইলে কথা বলা বন্ধ
বেশির ভাগ মুঠোফোন সেবাদাতা কোম্পানি রাত ১২টার পর বিশেষ ধরনের অফার দিয়ে থাকে। কলরেট ২৫ পয়সা/ মিনিট পর্যন্ত ছাড় দিতে দেখা যায়। এসব লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অফিস করা লোকজন পর্যন্ত রাত জেগে মুঠোফোনে প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি কর্মজীবী লোকদের সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়। এই কষ্ট লাঘব করতে সরকার যদি রাত ১২টার পর মুঠোফোনে কথা বলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, সে ক্ষেত্রেও সফলতা আসবে বলে মনে করি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে না। দেশ আবার আগের মতো সুজলা-সুফলা জিপিএ ৫-এ ভরে যাবে!
৩. রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফেসবুক চালানো নিষেধ
কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়াই দেখা গেছে, রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ফেসবুকে পিক আওয়ার চলে! এ সময় স্ট্যাটাস দিলে কিংবা ছবি আপলোড দিলে দিনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া যায়। এই লাইক পাওয়ার আশাতেই অধিকাংশ মানুষ কাজকর্ম বাদ দিয়ে, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এ সময়ে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এভাবে সবাই মিলে কাজে ফাঁকি দিয়ে ফেসবুকিং করলে নিজেদেরই ক্ষতি। সরকার যদি আইন করে এ সময়ে ফেসবুক চালানো বন্ধ করে, তাহলে স্কুল-কলেজপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন!
৪. ঘুষ খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা
অধিকাংশ অফিস-আদালতেই টেস্ট ক্রিকেটের মতো দিনব্যাপী ঘুষ খাওয়া চলে। এতে দেশে দুর্নীতি বাড়ে, দেশ দুর্নীতিতে এগিয়ে যায়। পাশাপাশি যাদের ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা কাজ পাওয়ার আশায় অফিস-আদালতে ধরনা দিয়ে থাকেন। ঘুষ যারা দেয়, তাদের সিরিয়ালের কাছে সাধারণ সৎ মানুষ সিরিয়াল পায় না। এ সমস্যা দূরীকরণে অফিস-আদালতে একটা নির্দিষ্ট সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ‘ঘুষ আওয়ার’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে। এই তিন ঘণ্টা ছাড়া অন্য সময়ে কেউ ঘুষ নিতে পারবে না। ফলে সাধারণ লোকজন ঘুষ আওয়ার বাদ দিয়ে বাকি সময়ে এসে নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজ করতে পারবেন।
৫. ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া
‘ঢাকা’ আর ‘জ্যাম’ শব্দ দুটি একে অন্যের মায়ের পেটের ভাই! ঢাকার রাস্তায় জ্যাম ছাড়া চলতে পারা রূপকথার সমান। এই রূপকথা দেখার সৌভাগ্য শুধু ভিআইপিদের কপালেই জোটে! ভিআইপিরা যখন চলাচল করেন, তখন রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। ফলে তাঁরা জ্যাম ছাড়া নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন। কিন্তু এতেও মাঝেমধ্যে হালকা-পাতলা সমস্যা হয়। দেখা গেল, ভিআইপি চলছে; এর মধ্যে কোনো অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্যান্য জরুরি কোনো যানবাহন রাস্তায় নেমে পড়ে, যেটা ভিআইপিদের চলাচলে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করে। এ সমস্যা এড়াতে মানে ভিআইপিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতেই ভিআইপি চলাচলের সময় সেটা হতে পারে সকাল ১০টা, হতে পারে বিকেল ৫টা। রাস্তায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্য কোনো জরুরি, অজরুরি কোনো ধরনের যানবাহনই থাকতে পারবে না। এতে করে ভিআইপি এবং অ্যাম্বুলেন্সের রোগী উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে বলে আশা করা যায়!
৬. সন্ধ্যার পর টেলিভিশন দেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা
দেশের একশ্রেণীর মানুষ ভারতীয় সিরিয়ালের নেশায় আসক্ত। অধিকাংশ সিরিয়াল শুরু হয় সন্ধ্যার পরপর, যখন রান্নাবান্না করার সময় কিংবা পরিবারের সবাই খেয়েদেয়ে একসঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার সময়। অথচ এই সময়টা সিরিয়ালে বুঁদ থেকে কুটনামি শিখছে অনেকেই, প্রভাব পড়ছে পারিবারিক কলহে! তাই সরকার যদি নিয়ম করে পয়লা বৈশাখের মতো সন্ধ্যার পর এসব টেলিভিশন দেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, সেটা দেশ ও দশের নিরাপত্তার জন্য বেশ ভালোই হবে। উল্লেখ্য, এসব সিরিয়ালের পুনঃপ্রচার হয় দিনের বেলা। সে ক্ষেত্রে পুনঃপ্রচারের সময়টা বের করে সে সময়েও টেলিভিশন দেখা বন্ধ করতে হবে।