কোন জাদুতে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারদর লাগামহীন

Looks like you've blocked notifications!
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের লোগো তাদের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন বা ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারদর লাগামহীনভাবে বাড়ছে। মাত্র ১৫ কর্মদিবসে এই কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ। শেয়ার কারসাজির কারণে দর বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ার ধারণ করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা এই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুখবর নয় বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। যদিও এই কোম্পানির শেয়ারদর কেন বাড়ছে, তার প্রকৃত কারণ জানে না এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ কর্মদিবসে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ৩৫৪ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ১৯৫ টাকা। অপরদিকে, এই সময়ে ধারণ করা বিনিয়োগকারীদের (সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক) শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্য বেড়েছে ২১০ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ টাকা। সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। 

শেয়ারদর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব ইসতিয়াক আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শেয়ার দর বাড়ার কারণ আমাদের জানা নেই। দর বাড়ার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও আমাদের কাছে নেই।’ ইসতিয়াক আহমে আরও বলেন, ‘দর বাড়ার পেছনে আমাদের কোম্পানির কারো কোন হাত নেই। শেয়ার দর বাড়ার ব্যাপারে সম্প্রতি ডিএসইর কারণ দর্শানোর নোটিশের আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।’ 

এদিকে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে কোম্পানিটিকে সম্প্রতি ডিএসই কারণ দশানোর নোটিশ পাঠিয়েছিল। এর জবাবে কোম্পানিটি ডিএসইকে জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২২ টাকা। আজ সোমবার (২৫ মার্চ) কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়ায় ৫১ টাকা। গত ১৫ কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৯ টাকা বা ১৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ২৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৫টি। গত ৩ মাস মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ২৬৯ কোটি ২৬ লাখ ৫৬ হাজার ১০ টাকা। সোমবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ৬২৪ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার ২০৫ টাকা। ১৫ কর্মদিবস ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্য বেড়েছে ৩৫৪ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ১৯৫ টাকা। 

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের মোট শেয়ারের মধ্যে ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ ধারণ করেছে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সেই হিসেবে তাদের (সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ২১০ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৪ টাকা। লাগামহীনভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ার কারণ জানার জন্য রেগুলেটরদের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, একটি চক্র নতুন কোম্পানি পেলেই কারসাজি করে সেই কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ায়। এই কোম্পানির বেলাতে সেরকমটি হয়েছে বলেমনে করছেন তারা। গত ৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২২ টাকা। সোমবার এসে দাঁড়ায় ৫১ টাকা।

শেয়ারদর বাড়ার বিযয়টি খতিয়ে দেখছি জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে কমিশন। শেয়ারটির দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজ সোমবার লেনদেন শেষে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের পিই রেশিও অবস্থান করেছে ২৩ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। গত ৩ মার্চ পিই রেশিও ছিল ১৭ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। সেই হিসেবে কোম্পানিটির পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। তবে পিই রেশিও প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। 

সম্প্রতি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সমাপ্ত হিসাব অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ছয় পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ৩ টাকা ৬৫ পয়সা। গত ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য (প্রি-আইপিও) দাঁড়ায় ৫৯ টাকা ৬৮ পয়সা। পোস্ট-আইপিও শেষে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ৫০ টাকা ৬০ পয়সা।

২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৩৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালক ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে।