পুঁজি খোয়ানোর পথ বন্ধে রেগুলেটরদের কার্যকর পদক্ষেপ চান বিনিয়োগকারীরা
দেশের পুঁজিবাজারের সময় ভালো যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে চলছে সূচকের পতন। লেনদেনেও চলছে মন্দা। কমেছে বাজার মূলধনের পরিমাণও। চলছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দরপতন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভালো কোম্পানির শেয়ার বলে জানিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আবার পুঁজিবাজারের রয়েছে দীর্ঘ খরা। প্রতিদিনেই কমছে আমাদের পুঁজি। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজার প্রতি আস্থা এখন তলানিতে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ জরুরি। এই বিষয়ে পুঁজিবাজারের রেগুলেটরদের কার্যকর পদক্ষেপ চান তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৮ আগস্ট লেনদেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ৯২৪ পয়েন্ট। যা আজ বুধবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে। এই সময়ে ডিএসইএক্স কমেছে ৭৫৫ পয়েন্ট। গত ৮ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। সেই লেনদেন কমে আজ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। গত ৮ আগস্ট বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ তিন হাজার ৯১৩ কোটি টাকার শেয়ার। যা আজ মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে বাজারে মূলধন কমেছে ৪৩ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
অপরদিক গত ৪ আগস্ট ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যেখানে গত ১৬ অক্টোবর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই ধরনের লেনদেন গত দুই মাস ১৩ দিনের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন ছিল। অবশ্য সেখান থেকে কিছুটা বেড়ে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার। সেখান থেকে কমে আজ লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
মন্দা পুঁজিবাজারে পুঁজি হারিয়ে অনেকেই (বিনিয়োগকারী) হিমশিম খাচ্ছে জানিয়ে মতিঝিলের ছয় সিকিউরিটিজ হাউজের আট কর্মকর্তা বলেন, এতে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে লেনদেন করতে ভয় পাচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজার অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাই বোঝা যাচ্ছে না, কোন শেয়ার বাড়বে বা কোনটা কমবে। এছাড়া, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বেশ শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি আমাদের আস্থা দিন দিন তলানিতে।
সাম্প্রতিক পতনে পুঁজির প্রায় ২৫ শতাংশ হারিয়েছি জানিয়ে মতিঝিলের পুরান ডিএসইর ভবনের রয়েল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কামরুন নাহার বলেন, যত দিন যায়, ততোই পুঁজি হারানোর পথ প্রশস্ত হচ্ছে। কত হারাবো? এই হারানোর শেষ কোথায়?
লংকা বাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী তৌহিদ বলেন, বর্তমান সরকারের শুরুতে উত্থানে ছিল। এতে অতীতের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, নতুন করে বিনিয়োগ করি। কিন্তু সেই বিনিয়োগ করে এখন ফেঁসে গেছি। ইতোমধ্যে নতুন বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ হারিয়েছি।
জানা যায়, ডিএসই সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর)। একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ পয়েন্ট কমলো। আলোচিত এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবারের তুলনায় এদিন বাজারে মূলধন কমেছে পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। লেনদেন কমে আজ ৩২২ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
আজ পুঁজিবাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার পুঁজিবাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৬৬ হাজার ৬২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার। আজ সূচক ডিএসইএক্স ৭১ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৯ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে। আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ২৪১ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। আজ ডিএসইএস সূচক ১১ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৬২ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএস৩০ সূচক ৩১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৯২ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টির ও কমেছে ৩০৬টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ৪১টির।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংকের ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংকের ১২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, গ্রামীণফোনের ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, টেকনো ড্রাগসের আট কোটি ৮২ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের সাত কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ফার ইস্ট নিটিংয়ের ছয় লাখ ৪৮ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ছয় কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এদিন দর কমার শীর্ষে উঠে এসেছে এম এল ডায়িংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১২ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে ইফাদ অটোসের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।