ভৈরবে প্রস্তুত ‘বড় সাহেব’ ও ‘মাস্টার সাহেব’, শঙ্কা বিক্রি নিয়ে!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার রসুলপুরের খামারি শরীফুজ্জামান। তাঁর খামারে এবারের ঈদের বিশেষ আকর্ষণ ‘বড় সাহেব’ ও ‘মাস্টার সাহেব’। ফ্রিজিয়ান জাতের সাদাকালো বড় সাহেবের ওজন এক হাজার ৪০০ কেজি। খামার মালিক বড় সাহেবের দাম হাঁকছেন ১৮ লাখ। আর মাস্টার সাহেবের ওজন এক হাজার ২০০ কেজি। তার দাম চাওয়া হচ্ছে ১৬ লাখ। কালো রঙয়ের ‘মাস্টার সাহেব’ নামের গরুটি সাহিয়াল ও ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের। তাঁর এই গরু দুটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ খামারে ভিড় জমাচ্ছে।
এমন আরও একটি খামার রয়েছে একই উপজেলার খামারি আবুল হাসিম মিয়ার। তাঁর খামারে ব্রাহামক্রস ও দেশি জাতের মোট ৩২টি গরু ঈদের হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহামক্রস জাতের ‘রাজা’ ও ‘বাদশা’ নামের দুটি বড় ষাঁড় রয়েছে। রাজার ওজন ৯০০ কেজি। আর বাদশার ওজন ৭০০ কেজি। তিনি আশা করছেন রাজা ও বাদশাকে তিনি যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং চার লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এ ছাড়াও তিনি গয়াল জাতের ৩০টি ভেড়া প্রস্তত করেছেন ঈদে বিক্রির জন্য।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিকে সামনে রেখে ভৈরবের দুই হাজার খামারে সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী চলমান কঠোর লকডাউন এবং চোরাইপথে পাশের দেশ থেকে পশু প্রবেশ নিয়ে শঙ্কিত এখানকার খামারিরা।
খামারিরা ধারণা করছে, যদি পশুর হাটের অনুমতি সরকার না দেয় এবং চোরাইপথে গবাদিপশু দেশে আসে, তবে তাঁরা মুনাফার পরিবর্তে লোকসানের মুখে পড়বে।
ভৈরবে প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করেছেন এখানকার কৃষক ও খামারিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার খামারে সাড়ে ১০ হাজারেরও বেশি গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন তারা। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে, দেশীয় খাবার খাইয়ে পশুগুলোকে পালন করেছেন বলে দাবি খামারিদের।
শঙ্কা প্রকাশ করে উপজেলার ঘোড়াকান্দা এলাকার খামারি আবুল হাসিম, কালীপুরের মো. আক্তার হোসেন এবং আগানগরের মো. রুবেল মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান থাকায় কোরবানির পশুরহাট না বসলে এবং পাশের দেশ থেকে চোরাইপথে পশু প্রবেশ করলে তাঁরা লোকসানের মুখে পড়বে। তাই তাঁরা কোরবানির পশুর হাট বসতে লকডাউন শিথিল করা এবং ভিনদেশ থেকে পশু প্রবেশ বন্ধে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
কালিপুরের খামারি আক্তার হোসেন জানান, তাঁর খামারে ২৮টি ব্রাহামক্রস এবং দেশি জাতের ষাঁড় ও ২১টি খাসি তিনি কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তত করেছেন। তাঁর খামারে কালু নামের ৭০০ কেজি ওজনের একটি ব্রাহামক্রস জাতের ষাঁড় রয়েছে। যা চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। বাকিগুলোর প্রতিটি দুই লাখেরও বেশি বিক্রি করা যাবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।
উপজেলার আগানগরের খামারি মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘পুরোপুরি দেশীয় খাবার ও প্রাকৃতিক ঘাস-খড় খাইয়ে পালন করা তাঁর দেশি জাতের ২৪টি ষাঁড়ের প্রতিটি দেড় লাখ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাবে। এই ষাঁড়গুলো ছয়মাস আগে বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে তিনি এক লাখ টাকা করে কিনে লালন-পালন করেছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, ভৈরবে কোরবানির পশুর চাহিদা আট হাজারের মতো। এবার এখানকার খামারগুলোতে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি গবাদি পশু অতিরিক্ত আছে। তাদের তত্ত্বাবধানে এখানকার খামারিরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে পশুগুলোকে লালন-পালন করেছেন। তবে বর্তমানে কঠোর লকডাউনের কারণে পশু বিক্রিতে বাধা তৈরি হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
রফিকুল ইসলাম খান আরও জানান, বিগত তিন বছরের মতো এবারও দেশীয় পশুর মাধ্যমেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। ভিনদেশি পশু প্রবেশে সরকার যে কঠোর অবস্থানে আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।