ইসলামী ব্যাংকসহ এস আলমের ৬ ব্যাংকে ঋণসীমা বেঁধে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
বিতর্কিত ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয় ব্যাংককে ঋণ বিতরণের সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)। এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে এসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। একইসঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ও খেলাপি ঋণ রয়েছে, নগদ আদায় ছাড়া তা নবায়নও করা যাবে না।
গতকাল সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছয়টি ব্যাংককে চিঠি দিয়ে গতকাল ঋণসীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের ঋণের সক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এই ছয়টি ব্যাংকের তারল্য যখন প্রায় শূন্যের কোঠায়, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সেসময় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার মুদ্রা ছাপিয়ে এই ছয়টি ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এস আলম গ্রুপও ঋণের নামে এই টাকা লুট করে নেয়।
গত বুধবার (১৪ আগস্ট) অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপরই ছয়টি ব্যাংককে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন নতুন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর সার্বিক আর্থিক অবস্থার অবনতি রোধ এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ঋণসীমা বেঁধে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কৃষি বিনিয়োগ, কার্যকারী মূলধন এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ সুবিধা, প্রণোদনা প্যাকেজের অধীনে দেওয়া ঋণ, নিজস্ব ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ সুবিধা এবং শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে ঋণ এবং অন্যান্য পরোক্ষ ঋণ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এসব ঋণ ও ঋণ সুবিধা পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা সীমিত বকেয়া ঋণের অবস্থা নগদ সংগ্রহ ছাড়া কোনো গ্রাহকের বিদ্যমান ঋণ সুবিধা নগদ আদায় ছাড়া নবায়ন বা বাড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতার ঋণ আদায়ের তথ্য প্রতি মাসে জমা দিতে হবে প্রতিটি ব্যাংককে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এসব ব্যাংক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বেনামী ঋণ বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে।