এলিফ্যান্ট রোডে নন ব্রান্ডের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়

ছয়-সাতদিন পরেই ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের শপিং মলগুলোতে বাড়ছে কেনাকাটার ব্যস্ততা। এর মধ্যে শপিং মলগুলোর বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের চেয়ে নন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। ব্রান্ডের দোকানে এক দামে পোশাক বিক্রি হলেও নন ব্রান্ডের দোকানে দর কষাকষি হচ্ছে বেচাকেনায়। আজ সোমবার (২৪ মার্চ) এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন শপিং মলগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
ক্যাটস আই, মুনসুন রেইন, রিচম্যান, জেন্টল পার্ক, প্লাস পয়েন্টসহ এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা হয় আজ। তারা বলেন, এবারে বেচাবিক্রি কম। গতবার ঈদের আগে ঠিক এই সময় বেচাবিক্রির কারনে আমরা দম ফেরার সময় পেতাম না। কিন্তু এবারে অনেক অলস সময় কাটাতে হচ্ছে আমাদের। গত শুক্র-শনিবার মানুষের ভিড় ছিল জানিয়ে তারা বলেন, কিন্তু সেই তুলনায় কাঙ্খিত বেচাবিক্রি হয়নি। গতকাল শনিবারের মতো আজও মানুষের দোকানে সমাগম আছে। কিন্তু বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে।
বেচাকেনা কেন নেই এমন প্রশ্নে তারা বলেন, দিনদিন মানুষের ব্যয় বাড়ছে কিন্তু সেই তুলনায় আয় বাড়েনি। হতে পারে, এখন ক্রেতারা পোশাকের মান খুঁজছে না। মান খারাপ হলেও কম দামে সাধ্যমতো তাদের পছন্দের পোশাক কিনছে। অপরদিক বেচাকেনার ধুম দেখা যাচ্ছে নিউ এলিফ্যান্ট রোডের নন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে, এসব দোকানের বিক্রেতারা বলেন, বেচাবিক্রিতে সন্তোষজনক। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকেই বলেন, দিনদিন মার্কেটে মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে মানুষ তুলনায় বেচাবিক্রি হচ্ছে না।
জহির এসি মার্কেটে কথা হয় আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্যাটস আই, মুনসুন রেইন ও রিচম্যানের শোরুম ঘুরেছি। অনেক শার্টই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু যেটাই পছন্দ হচ্ছে, সেটাই আড়াই হাজার টাকার বেশি। এক দাম। অতি দামের কারণে কিনতে সাহস পায়নি। আরও বলেন, আলপনা প্লাজা ও আমেনা ম্যানশনের অনেক পোশাকের নরম্যাল দোকান ঘুরেছি। কয়েকটি দোকানের হাজার টাকার মধ্যে পছন্দের মতো শার্ট পেয়েছি।

পোশাকের দাম প্রসঙ্গে মুনসুন রেইনের বিক্রেতা শাকিল আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে একটি শার্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম তিন হাজার ২০০ টাকা। একটি প্যান্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম তিন হাজার ৬০০ টাকা। ক্যাটস আইয়ের বিক্রেতা মাকসুদ বলেন, আমাদের এখানে হাজার টাকায় শার্ট পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এখানে একটি শার্টের সর্বনিম্ন দাম ৯৯০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম আট হাজার টাকা। একটি প্যান্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম পাঁচ হাজার টাকা।
পোশাক কিনতে এসে ক্লান্ত মৃন্ময়ী। নিউ শপিং সেন্টারে সামনে তিনি বলেন, ছেলে ও স্বামীর জন্য প্যান্ট ও শার্ট কিনতে এসেছি। সামনে ছেলের পরীক্ষা ও স্বামী চাকরির সুবাদে ঢাকার বাইরে থাকে। তাই তাদের কেনাকাটা আমাকেই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন প্রায় সবারই পছন্দ জেন্টল পার্ক ও প্লাস পয়েন্টের পোশাক। এক ঘণ্টা ধরে ওই শোরুম দুটিতে ঘুরছি। পছন্দ মতো দামে প্যান্ট ও শার্ট মিলাতে পারিনি। যেই প্যান্ট ধরি, সেটার দামই আড়াই হাজার টাকা পড়ে যাচ্ছে। শার্টও দুই হাজার টাকার ওপরে।
কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতা জোনায়েদ শরীফ বলেন, বাজেটের মধ্যে পোশাক কেনার চেষ্টা করছি। কিন্তু মিলাতে পাচ্ছি না। ক্যাটস আই, জেন্টল পার্ক ও প্লাস পয়েন্টের শোরুম ঘুরেছি। অতি দামের কারণে কিনতে পারিনি। নিরুপায় হয়ে জিএম প্লাজা একটি পোশাকের দোকান থেকে দুটি শার্ট কিনেছি। এখানেও দাম বেশি নিয়েছে মনে হচ্ছে। কিন্তু ঈদের সময় এধরনের দাম, মেনে নিতে হবে। কিন্তু ব্রান্ডের দোকানগুলো থেকে অনেক কমে কেনা হয়েছে।

বাবার জন্য পাঞ্জাবির কিনতে আসা আইরিন হুমাইরার সঙ্গে কথা হয় মিলিতা প্লাজায়। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা হলো পাঞ্জাবি দেখছি। দামে মিলাতে পারছি না। তিগত বছরের চেয়ে এবারে পাঞ্জাবির দাম অনেক বেশি। একটু ভাল কাজ দেখে যেই পাঞ্জাবি পছন্দ হচ্ছে, তার দামই তিন হাজার টাকায় চলে যাচ্ছে। বাজেটের ধারে কাছে দামে পাঞ্জাবি মিলছে না।
আমাদের এখানে দুই হাজার নিচে শার্ট পাওয়া যায় না জানিয়ে জেন্টল পার্কের বিক্রেতা নোমান শাহরিয়ার বলেন, এখানে একটি শার্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার টাকার ওপরে। আর সর্বোচ্চ দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা। একটি প্যান্টের সর্বনিম্ন দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ দাম তিন হাজার ৬০০ টাকা। গ্যাবাডিন প্যান্টের দাম জিন্স প্যান্টের মতো। এখানে তিন হাজার টাকার নিচে কোন পাঞ্জাবি নেই। আর সর্বোচ্চ দাম সাত হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রান্ডের দোকানে হাজার টাকার নিচে কোন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। এসব দোকানে একটি শার্ট কিনতে গুনতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকার বেশি। কিছু ব্রান্ডের দোকানে দুই হাজার টাকার নিচে শার্ট পাওয়া যায় না। ব্রান্ডের যেকোন দোকানে জিন্স প্যান্ট দুই হাজারের নিচে নেই। গ্যাবাডিন প্যান্টের বেলায়ও একই দাম। কিন্তু নন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে দামের চিত্র ভিন্নতা রয়েছে। সেখানে অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পোশাক।