তৈরি পোশাকশিল্পের করপোরেট করহার ১২ শতাংশ রাখার দাবি বিজিএমইএর

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য করপোরেট করহার ১২ শতাংশ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে রিসাইকেল ফাইবার (পুনঃব্যবহারযোগ্য সুতা) উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতিসহ বোনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি রাখে সংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব দাবি করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিজিএমইএ বলছে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য করপোরেট করহার ১২ শতাংশ এবং লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সার্টিফাইড কারখানার জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারিত আছে। যা আগামী ৩০ জুন ২০২৮ সাল পর্ষন্ত থাকবে। তৈরি পোশাকশিল্পে করপোরেট করহার পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫ এর মূল স্পিরিটের পরিপন্থী হবে।
সংগঠনটি বলছে, পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রমে ভিন্ন ভিন্ন কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত হলে বন্ড কমিশনারেট থেকে পূর্বানুমোদন নেয়ার শর্ত সংশোধন করে আগের ন্যায় বিজিএমইএ হতে জারীকৃত ইন্টারবন্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে সাব-কন্ট্রাক্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা। আবার বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টারিফ কমিশন প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে বেনাপোল স্থল বন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা আবশ্যক। এছাড়া রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে এলসির বিপরীতে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কাঁচামাল পূর্বের ন্যায় প্রাপ্যতা সীমার বহির্ভূত রাখা এবং এস,আরও বাতিল করার দাবি সংগঠনটির।
আলোচনায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৩১ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর বাতিলের দাবি রাখেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)। একইসঙ্গে পাওয়ার লুমে উৎপাদিত কৃত্রিম আঁশও সুতার তৈরি ফেব্রিক্সে ভ্যাট অব্যাহতির দাবি রাখেন।
সংগঠনটি বলছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ফেব্রিকের স্থানীয় উৎপাদন খরচ আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু বাংলাদশে ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ ও পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের আলোকে ফেব্রিকের মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করা। পূর্বের ন্যায় বিটিএমএ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বন্ড ছাড়া পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করার দাবি রাখেন।
এসময় বস্ত্রখাতের উন্নয়নে বেশকিছু দাবি রাখেন। এসব দাবির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- পুনঃচক্র আঁশ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসাবে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য বা ঝুট স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে এবং উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কম্পোজিট মিলে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি; মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৩১ অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর বাতিল; প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রমের যাবতীয় বিষয় নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি ও তথ্য রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তর হতে সহজ করা; ভ্যাট সার্কেল অফিস, বিভাগীয় অফিস, ভ্যাট কমিশনারেট, নিরীক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সমন্বয়পূর্বক একটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সব তথ্যাদি চাহিদাপত্র প্রেরণ করা; তুলা এবং সুতা সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে করহার দশমিক ৫ শতাংশ রাখা; শিল্পোৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে দশমিক ৫ শতাংশ উৎসে কর করা।
অন্যদিক বাজেট প্রস্তাবে এনবিআরকে বিনিয়োগ বান্ধব করনীতি প্রণয়ন করার দাবি রাখেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি এবং বিভিন্ন অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামাদি পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত করাসহ ইত্যাদি।
বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ ছাড়াও এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।