সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যা বললেন ঢাবির ডিন
নীতিমালা প্রণয়ন হওয়ার আগে এবং কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য সমালোচনার মুখে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ।
এদিকে, পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষা স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, তাঁদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আজকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এক শিক্ষার্থী তাঁর মোবাইল ফোনে একটি খুদেবার্তা দেখান। তাতে লেখা রয়েছে, ‘দুঃখিত, অনিবার্য কারণবশত আজকের এমবিএ (সান্ধ্যকালীন) ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী তারিখ এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।’
খুলনা থেকে আসা এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সারারাত গাড়িতে ছিলাম। সকালে ঢাকা পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে যখন হলে পৌঁছেছি তখন দেখলাম অনিবার্য কারণবশত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’
অপর এক শিক্ষার্থী এটাকে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে এটা কাম্য নয়।’
এদিকে, পরীক্ষা স্থগিতের পর সাংবাদিকরা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মঈনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন সাংবাদিকরা তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তিনি একই জবাব বারবার দেন। তিনি ভর্তি পরীক্ষার পুরো ঘটনাকে ‘মিস ইন্টারপ্রিটেশন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মিস ইন্টারপ্রিটেশন মূলত কোথায় ছিল?
এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেন, ‘ভুল-বোঝাবুঝি মানে মিস ইন্টারপ্রিটেশন। আপনি একেক জিনিসের একেক রকম ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। (অন্য সাংবাদিককে দেখিয়ে) উনি উনার মতো আরেকটা ব্যাখ্যা দিতে পারেন না। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকতেই পারে। দেখার তারতম্য থাকবে না?'
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় নোটিশ দেওয়া হয় কিন্তু এই পরীক্ষার নোটিশ দেওয়া হয়নি কেন?
উত্তরে ড. মঈন বলেন, ‘নোটিশ দিতে হবে এটা কোন আইনে আছে? আইনে নাই তাহলে কেন বলছেন? আইনগতভাবে এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। শুধু মিস ইন্টারপ্রিটেশন হয়েছে।’
‘তাহলে ভিসি ও প্রোভিসি স্যারকে জানাননি কেন?’ জবাবে ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেন, ‘সে দায়িত্ব আমার নয়। তাই এই প্রশ্ন আমার কাছে করে লাভ নেই।’
তাহলে কার দায়িত্ব ছিল? জানতে চাইলে ড. মঈন বলেন, ‘সবকিছুর একটা মিস ইন্টারপ্রিটেশন হয়েছে।’ এ সময় তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান।
‘আপনি তো পরীক্ষা কমিটির প্রধান, তাহলে এমনটা হলো কেন?’
জবাবে পরীক্ষা কমিটির প্রধান বলেন, ‘না, আমি সবকিছুর প্রধান না। আমি বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন। এমনটা হওয়ার কারণ তো আগেই বললাম যে, মিস ইন্টারপ্রিটেশন, ভুল বোঝাবুঝি।’
পরীক্ষার বিষয়টি ভিসি-প্রোভিসিকে জানানোর দায়িত্ব কার ছিল?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মঈন বলেন, ‘আপনি তো শুনেছেন। আমার যা বলার আমি বলেছি। এর বেশি কিছু জানতে চান; এখানে আমরা প্রেস কনফারেন্স করব তখন জেনে নিয়েন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের বাইরে কিছু করিনি। যা হয়েছে শুধু মিস ইন্টারপ্রিটেশন।’
‘যদি সবকিছু ঠিকই থাকে, তাহলে পরীক্ষাটা স্থগিত ঘোষণা করলেন কেন?’
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেন, ‘ব্যত্যয় ঘটেনি। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। মূলত ইন্টারপ্রিটেশনের তারতম্য রয়েছে। কিছু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কারণে সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।’
‘একটা কেন্দ্রে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন, স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে মানা হবে?’
উত্তরে ড. মঈন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা তো এখনো হয়নি; পরীক্ষা হলে না হয় বলতে পারতেন স্বাস্থ্য নীতিমালা হয়নি। কাল্পনিক কথাবার্তা এখন বলে তো লাভ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানা মানে কী? স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে- মাস্ক পরতে হবে; সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে; নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে থাকবে। সেই স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে নিয়ম-নীতি ছিল সেই নিয়ম-নীতি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। আপনারা সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা ভেবে দেখেন।’
পরীক্ষা আবারও নেওয়া হবে কি না- এর উত্তরে ভারপ্রাপ্ত ডিন বলেন, ‘যত দ্রুত পারি আমরা পরীক্ষাটা নেব।’
এদিকে, পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না ঢাবির ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রোভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তাঁরা বলেন, এখন ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ। তা ছাড়া নীতিমালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সান্ধ্যকালীন কোর্সে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা না।
পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তালেব বলেন, ‘পরীক্ষা হওয়ার ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান স্যার আমাদের পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশ দেন।’
রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরবর্তী সময়ে নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।