কুবির সেই শিক্ষকের ছুটি প্রত্যাহারের দাবিতে সহকর্মীদের বিক্ষোভ
জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত একপক্ষের দাবি করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সমিতি। শিক্ষককে অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- দাবি করে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষক নেতারা অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় উপাচার্য কার্যালয় থেকে বাসভবনে যাওয়ার জন্য জিপে উঠলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের জিপ ঘিরে ধরেন। রাত সোয়া ৯টায় উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে তাঁর বাসভবনে চলে যান।
এদিকে শিক্ষক সমিতি কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে সমিতির সভাপতি জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। উক্ত কর্মসূচি চলার সময়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া তাঁর বিভাগের প্রথম ব্যাচের ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহেরকে সদস্য ও সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরীকে সচিব করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে তুলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বহিষ্কারের দাবিতে মঙ্গলবার উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় শাখা ছাত্রলীগ। বুধ ও বৃহস্পতিবার তাঁর বহিষ্কারের দাবিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে দুই দিনে ১৯টি বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এতে বুধবার ১১টি ও বৃহস্পতিবার ৯টি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, ওই শিক্ষক শোক দিবসে ক্লাস নেননি। পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি বিষয় বুঝিয়ে দিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। কিন্তু প্রশাসন আমার সঙ্গে একবারের জন্যও কথা বলেনি।’ তদন্ত না করে কীভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয় এমন প্রশ্ন এ শিক্ষকের।
এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত জানার সঙ্গে সঙ্গে ছুটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা। পরে সন্ধ্যা ৬টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ কার্যালয় থেকে বাসবভনে যাওয়ার জন্য জিপে উঠলে তাঁর জিপ ঘিরে ধরেন শিক্ষক নেতারা। তাঁরা মাহবুবুল হকের ছুটি প্রত্যাহারের দাবিতে উপাচার্যের জিপের সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন, ‘ওই শিক্ষকের (মাহবুবুল হক ভূঁইয়া) ওপর উপাচার্যের ব্যক্তিগত ক্ষোভ রয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য। তিনি স্বেচ্ছাচারিতার শীর্ষে উঠে এ হীন কাজ করেছেন।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, শিক্ষার্থী ও অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’