মেধাবী মুখ
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দিন থেকেই প্রথম হওয়ার স্বপ্ন দেখি’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন ভর্তি হই, সেদিন থেকেই বিভাগে প্রথম হওয়ার স্বপ্ন দেখি। নিজের প্রতি আস্থা রেখে সে অনুযায়ী প্রথম বর্ষ থেকে পরিশ্রম করেছি। নিজেকে বিশ্বাস করেছি বলে আজ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছি।’
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মারুফা ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের নবম ব্যাচে সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৩.৭৫) পেয়েছেন।
মারুফা মনে করেন, মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে লেখাপড়া না করলে। আর আত্মবিশ্বাস না থাকলে শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের সফল হওয়া যায় না।
এ পর্যায়ে আসতে বহু বাধা-বিপত্তির কথা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যেতে শুরু হয়। ক্লাসে মেয়েদের সংখ্যা কমতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তাঁর শিক্ষাজীবনের ওপরও নানা বাধা-বিপত্তি আসে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি।
মারুফা জানান, স্কুল ও কলেজে বরাবরই প্রথম স্থান অর্জন করতেন তিনি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। নিজ জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় মেধাতালিকায় মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি।
মারুফা মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়ও। এসএসসিতে নবীনগর ইচ্ছাময়ী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও জেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পরে এইচএসসি পরীক্ষায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও ঢাকা বোর্ড মেধাতালিকায় ২৯৪তম স্থান অধিকার করেন।
সাফল্যের পেছনের গল্প জানতে চাওয়া হলে মারুফা একবাক্যে বলেন, ‘রুটিনমাফিক পড়াশোনা করা আর প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করা।’
পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, কুইজ, বিতর্কেও পারদর্শী মারুফা। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে খেলাধুলায় পাঁচটি, বিতর্কে ছয়টি, রচনা লেখা প্রতিযোগিতায় সাতটি পুরস্কারসহ ২০০৫ সালে ‘নেসলে-নিডো গল্প লিখো’ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পান তিনি।
ঢাবির এই শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ধর্ম বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৈনিক রুটিন করে ছয় ঘণ্টা পড়াশোনা, প্রয়োজনীয় নিবন্ধ পড়া, শিক্ষকদের নির্দেশকৃত চলচ্চিত্র দেখা, বিভাগকেন্দ্রিক ‘রিলিজিয়ন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’, ‘রিলিজিয়ন অ্যান্ড পলিটিকস’সহ অনেক বই পড়েন তিনি। ক্লাসের পর অযথা আড্ডা না দিয়ে তিনি চলে যান লাইব্রেরিতে।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মারুফা বলেন, ‘পড়াশোনা ঠিক রেখে বাকি কাজগুলো ভালোভাবে করলে সবকিছু জানা সম্ভব। এতে করে যেকোনো বিষয়ে যুক্তি দেখানো সহজ হবে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’
আগ্রহ বিতর্ক ও চলচ্চিত্রে
রোকেয়া হল ডিবেটিং ক্লাবের নিয়মিত সদস্য ও বিতার্কিক বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের এই শিক্ষার্থীর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে চান তিনি।
হিজাব পরে বিতর্ক করায় নানা সময়ে অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে বলে আক্ষেপ করেন ঢাবির এই ছাত্রী। নিকাব খুলে বিতর্ক করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
‘যেখানে আমার ভয়েস স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, সেখানে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পারফরম্যান্সটা এখানে মেইন, চেহারাটা নয়’, আক্ষেপ করে বলেন মারুফা।
‘এটা আমার কোনো গোঁড়ামি না। আমার ভালো লাগে। তাই এভাবে থাকি’, যোগ করেন এই ছাত্রী।
মারুফা চলচ্চিত্র দেখতে ও বই পড়তে পছন্দ করেন। কোন ধরনের চলচ্চিত্র পছন্দ করেন জানতে চাইলে মারুফ বলেন, “বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের চলচ্চিত্র বেশি দেখা হয়। ‘টেন কমান্ডমেন্টস’, ‘এ বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘আব্রাহাম’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গোরা’, ‘হাজার বছর ধরে’— এসব মুভি আমার অনেক ভালো লেগেছে।”
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ইংরেজি সাহিত্যের ‘এ হিস্ট্রি অব গড’, ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যান’ মারুফার পছন্দের বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মারুফা ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে চান। তিনি বিদেশে গিয়ে এমফিল করে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চান। এ ছাড়া উচ্চতর শিক্ষার জন্য কেমব্রিজ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান তিনি।