আকিবের সর্বোচ্চ ফলাফলের নেপথ্যে
মুদ্দাসির হোসেন আকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের ৬৪তম ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া (৩.৯৯) শিক্ষার্থী। ঢাকার আজিমপুরে জন্ম নেওয়া আকিবের সাফল্যের গল্পটা একটু ভিন্ন। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মোটামুটি পর্যায়ের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার চেয়ে খেলাধূলা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই সময় বেশি কাটাতেন তিনি। খেলাধূলার প্রতি বেশি মনোযোগ থাকায় তিনি ঠিক ততটুকুই পড়াশোনাই করতেন যতটুকু করলে রেজাল্ট ভালো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়াই পাল্টে দিয়েছে আকিবের জীবনের মোড়। নিজের প্রচেষ্টা, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হওয়া, বিভাগের শিক্ষক ও সিনিয়রদের সহযোগিতা ও উৎসাহ তার সাফল্যের মূল কারণ বলে জানান আকিব।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে আকিব বুঝতে পারেন বিশ্বকে জানতে হলে ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে ভালোভাবে পড়াশুনার বিকল্প নেই। তারই ধারাবাহিকতায় নিয়মিত পড়াশুনা করে নিজ বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেন তিনি। আকিবের এই সাফল্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় দুই হাজার জনের পেছনে থেকে সুযোগ আজ আকিব বিভাগের প্রথম। তিনি ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষাতে উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ ও ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আজিমপুর কলোনিতে থাকতেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস ও দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ হওয়ায় মূলত ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। আকিব বলেন, তাঁর বাবা ও চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক গল্প করতেন। সেই গল্প আকিবকে স্বপ্ন দেখাত এবং উৎসাহিত করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আকিবের কাছে তাঁদের অনুপ্রেরণায় ঢাবিতে পড়ার আগ্রহ আরো প্রবল হতে থাকে।
নিয়মিত পড়াশোনা করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে সর্বোচ্চ ফলাফল করেন আকিব। ফলস্বরূপ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে প্রথম হওয়ায় বিভাগ থেকে ‘প্রাক-স্নাতক’ বৃত্তি পান। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পরিশ্রম আর জানার আগ্রহ। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ভালো ফলাফল করার জন্য পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। রুটিন মাফিক পড়াশোনা করলে অবশ্যই ভালো ফলাফল করা যাবে। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পড়াশোনায় ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই, জ্ঞান অর্জন করতে হলে বিশ্বকে জানতে হবে, অনেক পড়াশোনা করতে হবে।
ভবিষ্যতে আকিবের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার ইচ্ছে রয়েছে। এজন্য উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় লেখাপড়া করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিসংখ্যান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। জীব পরিসংখ্যান, বিগ ডাটার যুগে পরিসংখ্যান অনেক বড় হাতিয়ার। তিনি বলেন, এমন কোনো কাজ নেই যেখানে পরিসংখ্যান লাগে না। তথ্য-প্রযুক্তি, প্রাণ পরিসংখ্যান, গবেষণা , ডাটা কালেকশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান লাগে। ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। খেলার মাঠ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যান জাদু দেখা। গুগলের চিফ ইকোনোমিস্ট হাল ব্যারেনের উক্তিকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ১০ বছরে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন জব হবে পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থীদের জন্য।
শুধু লেখাপড়া নয়, স্কুলে পর্যায় থেকেই খেলাধূলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পারদর্শী ছিলেন আকিব। স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বিশেষ করে ফুটবল খেলা প্রতি আগ্রহ বেশি তার। কলোনিতে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন তিনি এবং বার্সালোনা ফুটবল দলের সমর্থন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিভাগের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান নবীনবরণে মঞ্চে পরিবেশনা করেন। এ ছাড়া পরিসংখ্যান বিভাগের ৬৪তম ব্যাচের শর্টফিল্মে অভিনয় করেন এরই মধ্যে যেটি সাড়ে তিন লাখ বার ইউটিউবে দেখা হয়েছে।
আকিব মুভি দেখতে ও বই পড়তে পছন্দ করেন। কোনো ধরনের মুভি পছন্দ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের মুভি বেশি দেখা হয়। ‘দ্যা গডফাদার’ ট্রিলজি, ‘সোনার কেল্লা’, ‘পারসুয়েট অফ হ্যাপিনেস’ এসব মুভি আমার অনেক ভালো লেগেছে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ তাঁর পছন্দের বইগুলো মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলো তাঁকে অনেক আকৃষ্ট করে।