সাতদিন ধরে তালা ঝুলছে ঢাবির শিক্ষকের কক্ষে
সাতদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ড. শেখ মনির উদ্দিনের কক্ষে তালা ঝুলছে। ছাত্রলীগের দাবি, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রতীকী উৎসবে যোগ না দেওয়ায় ‘শিক্ষার্থী’রা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এতে ছাত্রলীগ ‘সমর্থন’ দিয়েছে।
ড. শেখ মনির উদ্দিন শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর অভিযোগ সাতদিন হয়ে গেলেও বিভাগের চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজ কোনো ব্যবস্থাই নেননি। তিনি দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। আর এজন্য তিনি ব্যবহার করেছেন ছাত্রলীগকে।
গত ২৮ মার্চ থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে মনির উদ্দিনের কক্ষ।
শেখ মনির উদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার তিনি ও তাঁর বিভাগের অন্য চারজন শিক্ষক বিভাগের চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর চিঠি লেখেন। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান ওই চিঠি প্রশাসনের কাছে পৌঁছাতে দেননি। পরের দিন বুধবার মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ তাঁর রুমে তালা লাগিয়ে দেয়। বিষয়টি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পরিকল্পনায় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ড. শেখ মনির উদ্দিন।
এদিকে চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের দাবি, উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ায় ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রতীকী আনন্দ উৎসবে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মনির উদ্দিনের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে এতে যোগ দেয় ছাত্রলীগ।
তবে ওই অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান শেখ মনির। তিনি বলেন, ‘এমন কাজ তাঁর দ্বারা হয়নি। বিষয়টি তিনি জানেনই না। এটা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
বিভাগের চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজ বলেন, ‘যারা তালা দিয়েছে তারাই খুলে দিবে।’ কারা তালা দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। আজ মঙ্গলবার সকালে এ বিষয়ে দেখা করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি ডিনের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। তিনি যে রিপোর্ট দিবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মনির উদ্দিনের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তবে কেন তারা এমনটা করেছে তা বলতে পারেননি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহনাজের দ্বন্দ্ব আছে বলেও তাঁরা জানান।
তবে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করেননি বিভাগীয় চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজ।
শিক্ষকের রুমে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার বিষয়ে চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম ইসলাম লিমন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে এতে সমর্থন জানিয়ে এ শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এতে অনুষদ ছাত্রলীগ অংশ নেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ওই বিভাগে সমস্যার বিষয়ে আমি জেনেছি। দ্রুতই এর সমাধান করা হবে।’