‘অপতথ্য ছড়ানোয়’ ছাত্রীদের অভিভাবকের কাছে দেওয়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের মাঝরাতে বের করে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। বরং ‘অপতথ্য ছড়ানোয়’ তাদের অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আজ শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেন ঢাবি উপাচার্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে মাঝরাতে চার ছাত্রীকে বের করে দেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান। এ সময় অভিভাবকদের ডেকে এনে ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু গতকাল রাত আড়াইটার দিকে সুফিয়া কামাল হলের সামনে উপস্থিত হয়ে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এর মধ্যে ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘টোটাল চারজন। এটাও অনেক সংখ্যায় তাও কিন্তু নয়। এটাও একটা বিভ্রান্তি, বড় আকারের বিভ্রান্তি, অপতথ্য ছড়ানো হলো। মাত্র চারজন মেয়ে, যাদের সন্দেহ করা হলো। তাদের গতিবিধি এবং তারা ভুয়া, ফেক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুকে অপতথ্য দিচ্ছে, হল-সংক্রান্ত, সরকারবিরোধী। আরো যেন কী কী। এগুলো সব আছে, তথ্য সংরক্ষিত। তখন হল প্রভোস্ট যেটা অভিভাবকসুলভ আচরণ করলেন, তিনি এই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের রুমে ডেকে আনলেন। উনি বললেন, বাবা তোমাদের মোবাইলগুলো দাও। কারণ, এটা সাইবার ক্রাইমে পড়তে পারে, আমরা দেখি। এগুলো চেক করে দেখা গেল, যে এ ধরনের তথ্য আছে। তখন তাদের বলা হলো, বাবা এগুলা যদি তোমরা করো, তাহলে তো হল ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এটা সুফিয়া কামাল হল, হাজার হাজার মেয়ে এখানে আছে। টোটাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন অপশক্তির উত্থান ঘটছে। অপতথ্য, অপব্যাখ্যা যাচ্ছে। সুতরাং, তোমরা এগুলো করতে পারবে না, তোমাদের অভিভাবকদের আমরা ডাকছি। অভিভাবকদের ডাকা হলো।’
‘আপনারা শুনে খুশি হবেন, একজন অভিভাবক কেঁদে এসে বলল যে আপনারা যে এই অসাধারণ কাজটি যে করলেন। সে অভিভাবক রাত্রে বসে উনাদের সঙ্গে খেলেন। এবং একজন অভিভাবক আবার পুলিশে চাকরি করেন। তিনি বললেন যে, আমার চাকরিটি চলে যাবে। একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক পুলিশে চাকরি করে, আমাদের গুলশানে। মেয়েটির ভাই। সে বলতেছে, আমার চাকরিটি চলে যেত, যদি এই ধরনের অপতথ্য আমার বোন, গুজব ছড়ানোর কাজে জড়িত থাকে। তাহলে তো সাইবার ক্রাইমে পড়ে যাবে, আরেকটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবে। খুব ভালো হলো। এই বলে তিনজন শিক্ষার্থীকে তিনজন অভিভাবকের হাতে সোপর্দ করা হলো।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘তাদের সবারই কর্মজীবনে, আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু হল প্রশাসন বসে রয়েছে রাত্রে। এটা বুঝতেই পারছেন, মেয়েদের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ, মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়া, হাজার হাজার মেয়ে। কত একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছিল তাদের। এর ভেতরে রিউমার ছড়াচ্ছে। সুতরাং সেগুলো সামাল দিয়ে, তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে বলা হলো, লিখিত নেওয়া হলো, দেখানো হলো। তারা অত্যন্ত খুশি হলো যে, আপনারা এই কাজটি যে করেছেন। আমরা এই জন্য তো মেয়েদের পাঠাইনি। এবং তারা অনেকেই নাকি খেলোয়াড়ও। তারা আজকে খেলতেও আসবে। শুধু বলা হলো, হলের ভেতর থেকে যখন এগুলা করবে, তাহলে তো হল ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অভিভাবকদের বলা হলো, তাদের আপনাদের কাছে নিয়ে যান।’
এই ছাত্রীদের মাঝরাতে বের করে দেওয়া হয়নি দাবি করে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আরেকজনের বাবা, তিনি এলেন ধামরাই থেকে। ধামরাই থেকে তিনি একেবারেই খুবই সাধারণ পরিবারের মানুষ। উনি আসতে একটু দেরি হয়েছে, বোধহয় একটু কর্মজীবী মানুষ। উনিও বারবার ফোন করেছেন প্রভোস্টকে যে আমি কিন্তু আসব, আপনারা কিন্তু থাকবেন। সবাই রয়েছি। আসতে দেরি হয়ে গেছে। সাড়ে ১১টা, ১২টা হয়ে গিয়েছে উনার। এইটাও হয়েছে অপব্যাখ্যা যে, মধ্যরাতে বের করে দিয়েছে। আসলে তারা কিন্তু বিকেল থেকেই এদেরকে নিয়ে অপেক্ষা করতেছে। শুধু গার্ডিয়ানদের আসতে আসতেই এই দেরিটা হয়ে গেল। এই জন্য হয়ে গেল মধ্যরাত। এটাকেও অপব্যাখ্যা, অপতথ্য দেওয়া হলো, মধ্যরাতে বের করে দেওয়া। আসলে কোনোটাই বের করে দেওয়া না। অভিভাবকরা আসলেন, তাদের বলা হলো। এই মেয়েটি, আমার ছাত্রী, এইগুলা করে, এগুলা কিন্তু আমাদের অন্য মেয়েদের সম্মান হারাবে, ঝুঁকি বাড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হবে। রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি হবে।’
এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেন হয়রানি না করা হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’