রাবির হলে সিট পেতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক ছাত্র হলগুলোতে সিট পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের। এক শিক্ষার্থীর বরাদ্দ দেওয়া সিট অন্য শিক্ষার্থীর দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। হলে সিট না পেয়ে শিক্ষার্থীদের মেসে বা ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে হলে না থেকেও হলের সিট ভাড়া গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে সিট না পাওয়ায় তাঁদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে মেসে থাকতে হচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য অনেক সময় নষ্ট ও পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতার শরণাপন্ন না হয়ে সিটে উঠলে বের করে করে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে হল প্রশাসন নিশ্চুপ থাকছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিট বণ্টনে হল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকা, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বর্ষের সেশনজটের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া হলগুলোতে নিজ দলের কর্মী ও পছন্দের প্রার্থীদের সিট দিয়ে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এমনকি অর্থের বিনিময়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে হলে সিটের ব্যবস্থা করে দেয় ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ নেতার শরণাপন্ন না হয়ে কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠলে তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতার সুপারিশে হল কর্তৃপক্ষ সিট বরাদ্দ দেন বলেও জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সিট পেয়ে আমি ওই হলে ২৪২ নম্বর কক্ষে উঠি। পরে ছাত্রলীগ অন্য একজনকে উঠাবে বলে আমাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয়। আমি হল প্রশাসনকে অভিযোগ দিলে প্রাধ্যক্ষ আমাকে পুনরায় ওই কক্ষে উঠিয়ে দেন। পরে ওই দিনই আমাকে ছাত্রলীগ আবার ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয়। পরে হল কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অথচ আমাকে প্রতি মাসে হলের ভাড়া দিতে হচ্ছে।’
এ ছাড়া হলে হলে ‘পলিটিক্যাল ব্লক’ করে ছাত্রলীগের অনেক নেতা একাই পুরো কক্ষ দখল করে রেখেছেন। ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় এক হলের শিক্ষার্থী হয়ে থাকছেন অন্য হলেও।
জসিম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি হলে সিট পেয়েছি প্রায় চার মাস আগে। কিন্তু আমার সিটে অন্য শিক্ষার্থী থাকায় আমি হলে থাকতে পারছি না। কিন্তু আমাকে ওই সিটের ভাড়া দিতে হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘নবাব আবদুল লতিফ হলে প্রায় এক বছর আগে আমি সিট পাই। আমার বরাদ্দকৃত কক্ষটি ছাত্রলীগ দখল করে রেখেছে।’
এ বিষয়ে জানতে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি কল কেটে দেন। সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রুবাইয়াত ইয়াসমিন এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘হলগুলোতে এ ধরনের কোনো সমস্যা আছে কি না, আমার জানা নেই। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবেও আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। হলগুলোতে যদি এ ধরনের কোনো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে হল প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে বসে আলোচনার করে সমাধানের চেষ্টা করব।’