শিক্ষার আলো নিয়ে চলছে তরী
শিক্ষা সবার জন্য, কিন্তু পরিবেশ ও পরিস্থিতির জন্য সবাই তা পায় না। সমাজ তাদের নাম দিয়েছে সুবিধাবঞ্চিত। এই কথাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালোই জানে। এ রকম অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু ঘুরে বেড়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় তাদের বসবাস। এই শিশু বয়সেই এদের অর্থ আয়ের পেছনে ছুটতে হয় দুই বেলা আহারের জন্য। কারোও কারোও আবার পরিবারের অন্নও জোগাড় করতে হয়। এদের অনেকে ক্যাম্পাসে ফেরি করে চা ও বাদাম বিক্রি করে। এর ফলে শিক্ষা অর্জনের দিকে তারা মনোনিবেশ করতে পারে না। সময় তখন ২০০৮ সাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সচেতন শিক্ষার্থীর মনে বিষয়টি ধরা পড়ে। তারা চায়নি এমন করে নষ্ট হয়ে যাক তাদের জীবন। তাদেরও শিক্ষার প্রয়োজন, একই সাথে জীবিকার এবং কীভাবে তা করা যায় তা তারা ভালো করেই জানত। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সেখ ফয়সাল আহমেদ তাঁর বন্ধু এবং ছোট ভাইবোনদের নিয়ে হাতে নেন এক মহৎ উদ্যোগ। তারা প্রতিষ্ঠা করেন 'তরী', যেখানে বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হবে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে। সেই থেকে তাঁরা এসব শিশুকে স্কুলে আনার কাজ শুরু করে দেন।
শিশুরাও উদ্বুদ্ধ হয় এ রকম শিক্ষার সুযোগ পেয়ে। তারা দিনের একটা বিশেষ সময় শিক্ষা গ্রহণ করে, তারপর যার যার কাজ করে। এদের ক্লাস নেওয়া হয় ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দায়। এদের শিক্ষা প্রদানের মহৎ কাজটি করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রছাত্রী। ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অবস্থা, তারাও আলোকিত হতে থাকে শিক্ষার আলোয়। সত্য হতে থাকে সবার জন্য শিক্ষা কথাটি।
তারপর অনেক সময় কেটে গেছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখনো টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। বেড়েছে এর পরিসর, বেড়েছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। এখান থেকে শিক্ষা নিয়েই অনেকেই এখন পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি কলেজেও, যা এই সংগঠনের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই গর্বের দাবিদার এই প্রতিষ্ঠানে যারা স্বেচ্ছায় শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছে সেসব মহৎপ্রাণ ছাত্রছাত্রী। তাঁরা প্রমাণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন, সমাজ থেকে মুছে ফেলতে পারেন অশিক্ষার ছাপ, পৃথিবীর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গড়ে তুলতে পারেন শিক্ষিত সম্পদ রূপে।
ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা এবং প্রয়োজন জানতে আজ তাদের সাথে কথা বলেন সেখ ফয়সাল আহমেদ। ছাত্রছাত্রীরা খাতা লাগবে জানালে তিনি তা শিগগিরিই সবার সহযোগিতা নিয়ে প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন। তা ছাড়া ঈদের আগেই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের 'তরী' লিখিত ব্যাগ সরবরাহ করা হবে- যাতে এরা স্কুলে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এরপর মতবিনিময় করা হয়। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসাইন রাহাতসহ অন্য সাংবাদিকরা। তাঁরা তরীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন এবং এই মহৎ কর্মের সাথে থাকবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীরা এমন পড়ার সুযোগ পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। কর্মক্লান্তির মাঝেও আজ তাদের মুখে সুখের হাসি। তারাও বিশ্বকে জানতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি সোহানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে চলছে তরীকে। তাঁরা তরীকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে শিক্ষকসহ সুধীসমাজের সহযোগিতা কামনা করেছেন।যে কেউ অনলাইনে তরীর সদস্য হতে পারেন। সদস্য হতে www.toriju.org ওয়েব সাইট ভিজিট করুন। সদস্য ফরম পূরণ করার মাধ্যমে। মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে এখানে। তরীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে ফেসবুকে তরীর ফ্যান পেজের সাথে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। ফেসবুকে ঢুকে https://www.facebook.com/groups/391176187676294/ লিখে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে তাদের ফ্যান পেজটি। এ ছাড়া যে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাইলে যোগাযোগ করা যেতে পারে-০১৯৪০৯৭১৩১৫(সোহান-সাধারণ সম্পাদক) এবং ০১৯৩০৬৫৯০৯৩ (সাকিব-তত্ত্বাবধায়ক) নম্বরে।