ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরে কানের পর্দা ফাটল জাবি ছাত্রের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে কানের পর্দা ফেটে গেছে অভিযোগ করে ওই কর্মীদের বিচারের দাবিতে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। আবাসিক হলে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৩ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১২৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন মারধরের শিকার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরাফাত হোসেন (৪৩তম ব্যাচ)।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থী আরাফাতের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরাফাত হোসেন, গণিত বিভাগের প্রশান্ত, ছাত্রলীগকর্মী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বসুর মুঠোফোন চুরি হয়। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। পরে আরাফাত তাঁর বন্ধু নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী জামিনুর রহমানের মুঠোফোন ব্যবহার করে বাবাকে মুঠোফোন চুরি হওয়ার ঘটনাটি জানান।
লিখিত অভিযোগে আরাফাত হোসেন উল্লেখ করেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমাকেই সন্দেহ করা হয়। এর পর আমাকে প্রথমে হলের মাঠে ও পরে ছাদে নিয়ে বিষয়টি স্বীকার করার জন্য চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু আমি চুরি করিনি জানালে ছাত্রলীগকর্মী ফিরোজ মাহমুদ দুই কানে সজোরে থাপড় দেন। এতে আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি।’
অভিযোগপত্রে আরাফাত আরো উল্লেখ করেন, তাঁকে ছাদ থেকে হলের ১২৯ নম্বর কক্ষে এনে জামিনুর রহমান, লিটন, আরাফাত হোসেন শোভন, ওয়াদুদ হাসান মিঠু, সৌরভ বসুসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী বেধড়ক মারধর করেন। পরে কানে ও গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি তাঁকে।
পরে ব্যথার পরিমাণ বাড়তে থাকলে গত বৃহস্পতিবার বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক দেখান আরাফাত। চিকিৎসক জানান, তাঁর দুই কানের পর্দা ফেটে গেছে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থী বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নাক-কান-গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. বাঁধন কুমার দের কাছ চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগটি মিথ্যা দাবি করে আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমি চুরি করিনি। অন্যায়ভাবে তারা আমাকে মারধর করেছে।’
মারধরের কথা স্বীকার করে ছাত্রলীগকর্মী জামিনুর রহমান বলেন, ‘চড়-থাপড় মেরেছি। তবে এত বেশি মারধর করা হয়নি।’ অভিযুক্ত বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি হলের অভ্যন্তরে ঘটায় সোমবার হল প্রাধ্যক্ষকে অভিযোগপত্রটি পাঠানো হবে। প্রাধ্যক্ষ এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবীর রোববার রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। আমাদের (হল প্রশাসন) না জানালে কীভাবে জানব বা ব্যবস্থা নেব। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার করা হবে।’