শেষ হলো স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
তীব্র যুক্তির লড়াই, হার-জিতের ফলাফল, পুরস্কার বিতরণ আর সবশেষে জয়গান বিশুদ্ধ যুক্তিবাদিতার। এভাবেই পর্দা নামল স্টামফোর্ড ডিবেট ফোরাম (এসডিএফ) আয়োজিত ১০ম আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৫-এর। ২৭ আগস্ট শুরু হওয়া এই আয়োজনের শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। বিতর্কের ফাইনাল শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এই আয়োজনে এনটিভি অনলাইন ছিল অন্যতম মিডিয়া পার্টনার।
পাঁচদিনের বিশাল আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৬টি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। সামগ্রিকভাবে প্রতিযোগিতাটি বাংলা ও ইংরেজি; এই দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। সংসদীয় পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত বাংলা বিতর্কে অংশ নেয় ৩২টি দল আর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট(বিপি) পদ্ধতিতে ইংরেজি বিতর্কে অংশ নেয় ২৪টি দল। ইংরেজি বিতর্কে সব বিভাগকে পেছনে ফেলে ফাইনাল বিতর্কে অবতীর্ণ হয় ইংরেজি, আইন, অর্থনীতি ও প্রকৌশল বিভাগের চারটি দল। অন্যদিকে বাংলা বিতর্কে ৩২টি দলের মধ্যে ফাইনালের মঞ্চে জায়গা করে নেয় সাংবাদিকতা বিভাগ এবং ইংরেজি বিভাগ।
শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ- বাংলা বিতর্কের ফাইনাল। বিতর্কের বিষয় ছিল- ‘এই সংসদ বাংলাদেশের চলমান সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা মানবে না।’ সরকারি দলে ছিল সাংবাদিকতা বিভাগ আর বিরোধীদলে ছিল ইংরেজি বিভাগ। এই বিতর্কে সাতজন বিচারকের মধ্যে ছয়জন সরকারি দলের পক্ষে আর একজন বিরোধীদলের পক্ষে রায় দেন। অর্থাৎ বাংলা ফাইনাল বিতর্কে ইংরেজি বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সাংবাদিকতা বিভাগ আর রানার আপ হয় ইংরেজি বিভাগ। বাংলা ফাইনাল বিতর্কে বিতার্কিকদের কথায় সমসাময়িক বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়, সমস্যা, চুক্তির নানান দিক উঠে আসে। যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা, বর্তমান সরকার আর বিরোধীদলের কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তার্কিকেরা।
ইংরেজি বিতর্কে ফাইনালের বিষয় ছিল-‘This house as USA should cease all diplomatic ties with Saudi Arabia until tangible improvement in their human rights conditions.’ তীব্র লড়াই শেষ চারজন বিচারকের সর্বসম্মত রায়ে বিজয়ী হয় ইংরেজি বিভাগ, রানার আপ হয় অর্থনীতি বিভাগ। বাংলা বিতর্কের ফাইনালে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন সাংবাদিকতা বিভাগের সোহান মোহাইমিনুল। পুরো আয়োজনের বাংলা বিতর্কে সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন দুইজন- ইংরেজি বিভাগের রাকিব জোহা আর সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সোহান মোহাইমিনুল। ইংরেজি বিতর্কে ফাইনালের এবং সমগ্র আয়োজনের সেরা বিতার্কিক হন ইংরেজি বিভাগের মিরাজুল ইসলাম।
ফাইনাল দেখতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ্ আলমগীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন হেড অব এনটিভি অনলাইন খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ। আরো উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড ডিবেট ফোরামের (এসডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক আল-মামুন এবং স্টামফোর্ড ডিবেট ফোরামের (এসডিএফ) সভাপতি আমিমুল হাসান।
প্রধান অতিথি শাহ আলমগীর বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম যেন শুধুই একটি সনদ পাওয়ার জন্য পড়ালেখা না করে। তারা যেন পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্কের মতো সৃজনশীল কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে। সিলেবাস ভিত্তিক পড়ালেখার বাইরেও অন্য বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাঁর মতে, সুনাগরিক ছাড়া স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে হেড অব এনটিভি অনলাইন খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ বলেন, এই ধরনের প্রতিটি ভালো কাজে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান সব সময় পাশে থাকবে।
স্টামফোর্ড ডিবেট ফোরামের (এসডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক আল-মামুন আয়োজনকারী প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এসডিএফ যেন ভবিষ্যতেও এই রকম আয়োজন অব্যাহত রাখে। এসডিএফের সব আয়োজনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা করে যাবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে এসডিএফের সভাপতি হিসেবে আমিমুল হাসান ভবিষ্যতে আরো বড় আয়োজন করার আশা প্রকাশ করেন। তিনি এই আয়োজনের সাথে জড়িত এসডিএফের সবাইকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন এসডিএফের সাধারণ সম্পাদক আহনাফ তাহমিদ এবং এসডিএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল্লাহ মো. শুকরানা।
পাঁচদিনের এই আয়োজনের পর্দা উঠেছিল গত ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। ওই দিন বিকেলে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফিরোজ আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (বার্তা) বিশিষ্ট সাংবাদিক নাসির আহমেদ। আয়োজনের মিডিয়া সহযোগী হিসেবে ছিল দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি সান, সিটি এফএম ও এনটিভি অনলাইন।