তিনবার সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি জবির ছাত্রী হল
বারবার সময়সীমা বাড়ানো হলেও শেষ হচ্ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন একমাত্র ছাত্রী হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’-এর নির্মাণকাজ।
তৃতীয়বারের মতো সময় নিয়ে হলটির নির্মাণকাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল গত ৩০ জুন। কিন্তু এখনো নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার কোম্পানি ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢিলেঢালাভাবে চলছে হলটির নির্মাণকাজ। ভবনটি ১৬ তলা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে ১৫ তলা পর্যন্ত। আবার এই ১৫ তলাও পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়নি। বহুলাংশে কাজ বাকি রয়েছে। ভবনের কোনো দরজা, জানালা, পানির পাইপ কিছুই লাগানো হয়নি। এ ছাড়া লিফট, গ্যাসলাইন ও পানির জন্য দরপত্রও করা হয়নি।
ভবনটিতে ১১১টি কক্ষ, একটি লাইব্রেরি, একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং, প্রতিতলায় সাতটি করে টয়লেট, আটটি গোসলখানা, ছাত্রীদের ওঠানামার জন্য চারটি লিফট রাখার কথা রয়েছে। এগুলোর আংশিক কাজ হলেও বাকি রয়েছে বেশির ভাগ কাজ।
ভবনটির একজন নির্মাণশ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি বুঝিয়ে দিতে আরো ১০ থেকে ১২ মাস লাগবে।
সাধারণত সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের যেকোনো কাজের মেয়াদ দুবারের বেশি বাড়ানো হয় না। কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় এই হলটি নির্মাণের সময় তিনবার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পেরিয়ে গেছে এই মেয়াদের সময়সীমাও।
ছাত্রী হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরে দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। এবং সর্বশেষ তৃতীয় মেয়াদে সময়সীমা ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এই বিলম্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদাসীনতাকে। তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে স্থানীয় সমস্যার কথা।
প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হল নির্মাণে দায়িত্বরত প্রকল্প ব্যবস্থাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১১ সালে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৪ সালে আমাদের হাতে বুঝিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভবনের কাজ করার জন্য আশপাশে যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই একপাশ থেকেই কাজ চালাতে হয়েছে।’
এ ছাড়া একসঙ্গে মালামাল রাখতে না পারা এবং বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও দায়ী করেন হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘হল বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীই ভালো বলতে পারেন। আমরা বিভিন্ন সময় তাদের চাপ দিয়েছি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘কাজ দেরি হওয়ার জন্য শুধু আমরা দায়ী নই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দিতে দেরি করেছে। এ ছাড়া ভবনের কাজ করার জন্য আশপাশে যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, সেই পরিমাণ জায়গা নেই। চলতি মাসেই ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হবে। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারব।’