ক্যাম্পাসে শাপলা, অন্যরকম সৌন্দর্য
দল বেঁধে বন্ধুদের সঙ্গে শাপলা-শালুক তোলার স্মৃতি অনেকেরই আছে। তবে অনেকের কাছেই এখন তা সুদূর অতীত। দেশে হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা, খাল-বিল কমে বা শুকিয়ে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ। তাই এখন বিল-ঝিলেও শাপলার দেখা মেলাও ভার।
তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা এদিক থেকে বেশ ভাগ্যবান। শাপলা-শালুক তোলার সুযোগ না হলেও দেখার সুযোগ রয়েছে তাঁদের। কারণ ক্যাম্পাসের খালেদা জিয়া হলের পাশে, রবীন্দ্র কলাভবনের সামনে এবং চারুকলার পাশের জলাশয়ে দেখা মেলে লাল-সাদা শাপলার।
সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শাপলা ফুলগুলো। সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মনকেও সতেজ-প্রাণবন্ত রাখতেও এর জুড়ি নেই। তাই তো মেয়েদের হল, চারুকলা ও রবীন্দ্র ভবনের পাশ দিয়ে গেলে শাপলাগুলো শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি কাড়বেই।
শাপলার সৌন্দর্যে বিমোহিত এমনই এক শিক্ষার্থী যূথী আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় শাপলাগুলো দেখি। এতে এক আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়। সকালটা যেন আরো সুন্দর হয়ে যায়। ক্লাসে যেতে যেতে যতক্ষণ ফুলগুলো দেখা যায়, আমি তাকিয়ে থাকি।’
অনেকটা স্মৃতি রোমন্থন করে ফিশারিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন ছোটবেলায় স্কুলে যেতাম তখনো আমার শাপলা দেখার সুযোগ হতো। কারণ যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতাম, তার পাশের জলাশয়েই ফুটত শাপলা। আর সেই থেকেই শাপলার প্রতি আমার আলাদা এক দুর্বলতা। আমরা একদিন সবাই মিলে ফুলসহ শাপলার ঢ্যাপ তুলেছিলাম। আর সেই ঢ্যাপের খইও আমরা খেয়েছি। কিন্তু তারপর আর ওইভাবে শাপলা তোলা হয়নি। এই ফুলগুলো দেখলে মাঝেমধ্যেই আমার সেই স্মৃতি মনে পড়ে যায়।’
মোছা. আয়েশা ও মাহমুদা ভাষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁরাও জানালেন তাঁদের শাপলা নিয়ে ভালো লাগা, মন্দ লাগা। তাঁরা বলেন, সকালে শাপলা ফুটতে দেখলে বেশি ভালো লাগে। এটা আলাদা এক অনুভূতির জন্ম দেয়। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা শাপলা তুলে বিক্রি করে। যখন শাপলাগুলো তোলে, তখন খুব খারাপ লাগে।’
কথা হয় দীপা, মুসলিমা আক্তার ও লিসা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী দীপা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শাপলা আমার খুব ভালো লাগে। আগে অনেক শাপলা তুলেছি। আমার তো এখনো মনে হচ্ছে কয়েকটা শাপলা তুলে আনি। কয়েকদিন আগে একবার গিয়েছিলামও তুলতে, কাপড় ভিজে যাচ্ছিল বলে আর পারিনি।’
শাপলা তোলার রোমহর্ষক স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে দীপা বলেন, ‘আমি তখন মাত্র সাঁতার শিখেছি। একবার আমি আমাদের পুকুর থেকে শাপলা তুলতে গিয়ে প্রায় ডুবেই গিয়েছিলাম। পরে মা আমাকে তুলে আনেন।’
‘শাপলা দিয়ে আমরা মালা বানাতাম। ওই স্মৃতিগুলো অনেক সুন্দর ছিল। আমার বেশি ভালো লাগত ফোটা ফুলের মালা। আর শাপলার ভেতরের দিকে ভ্যাট থাকে। সেটাও খেতাম আমরা।’ যোগ করেন দীপা।
এ সময় লিসা আক্তার একটু মজার সুরেই বলেন, ‘আমি একবার ঢ্যাপ থেকে খই ভাজতে গিয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।’