ইবি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তুকির টাকা কোথায় যাচ্ছে
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে হলগুলোর ভর্তুকির টাকা বাড়িয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। ভর্তুকির টাকা বেড়েছে ঠিকই, বাড়েনি চারটি হলের খাবারের মান। কেননা, ভর্তুকির পুরো টাকা পৌঁছাচ্ছেই না ওই হলগুলোর ডাইনিং ম্যানেজারদের কাছে। তাই, এই টাকা ঠিক কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
সম্প্রতি অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হল, খালেদা জিয়া, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর প্রভোস্ট কাউন্সিলের এক সভায় হলের ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৩তম সিন্ডিকেট সভায় ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে হলের শিক্ষার্থী হিসেবে মাথাপিছু মাসিক ৬০ টাকা থেকে ২০ টাকা ভর্তুকি বৃদ্ধি করে ৮০ টাকায় উন্নীত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভর্তুকির পুরো টাকা ব্যয় করা হচ্ছে না এই চারটি হলের খাবারের মান উন্নয়নের কাজে। তবে, বাকি তিনটি হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের হিসাব অনুযায়ী ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন হলের আসন সংখ্যা ৪৭৫টি। এ হিসেবে প্রতি মাসে ভর্তুকি ৩৮ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ডাইনিং ম্যানেজার প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা। তাই হিসাব অনুযায়ী ১৭ মাসে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকা কম পেয়েছে এই হলের শিক্ষার্থীরা।
সাদ্দাম হোসেন হলের ডাইনিং পরিচালক আবেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘হলের সাবসিডি (ভর্তুকি) বেড়েছে অনেক আগে। প্রতি মাসে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অথচ প্রশাসন থেকে দেওয়া হয় ৩৮ হাজার টাকা। শিক্ষার্থীদের ভালো খেতে দিতে পারলে ভালো লাগে। কিন্তু আমি কোথায় টাকা পাব?’
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাদ্দাম হোসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘হলে কত টাকা ডাইনিং ভর্তুকি দেওয়া হয় তা জানা নেই।’
তবে, হলের উপরেজিস্ট্রার আব্দুল খালেক বলেন, ‘খাবারের ভর্তুকি মাসিক ৩৮ হাজার টাকা করে আসে। কিন্তু ওই পরিমাণ শিক্ষার্থী ডাইনিংয়ে খায় না। তাই ডাইনিং পরিচালককে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা হলের ফান্ডে জমা রাখা হয়।’
ভর্তুকির এই টাকা কী কাজে ব্যয় হয় জানতে চাইলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘অবশিষ্ট টাকা হলের ফান্ডে জমা হয়ে থাকলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রডাক্টিভ কাজে লাগানো হবে।’
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদ্দাম হোসেন হলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হল ভর্তুকির টাকা ম্যানেজারকে কম দিয়ে হলের ফান্ডে রাখার কথা বলে থাকেন উপরেজিস্ট্রার। তবে ওই টাকা হলের ফান্ডে জমা করা হয় না। জমা হলে আলাদা ডুকমেন্ট থাকত।’
এদিকে, বাকি তিনটি হলের অবস্থা আরো করুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলে ভর্তুকি ৩৮ হাজার ৪০০ টাকার জায়গায় মাত্র ১৬ হাজার টাকা, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ৩১ হাজার ৮৪০ টাকার জায়গায় ১২ হাজার টাকা এবং শেখ হাসিনা হলে মাত্র ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, সাদ্দাম হোসেন হল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তুকি বাবদ তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা নিয়েছে। খালেদা জিয়া হল কর্তৃপক্ষ নিয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার টাকা। দুই লাখ ৮৮ হাজার টাকা নিয়েছে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষ নিয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা।
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আহসান-উল-হক আম্বিয়া বলেন, ‘সব হলে একইভাবে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতি মাসে ডাইনিং ম্যানেজারকে ভর্তুকি দেওয়ার পর অবশিষ্ট টাকা বছরের চারবার (বিশেষ পিকনিক) ফিস্ট আয়োজনের কাজে লাগাই।’
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিস্ট আয়োজনের জন্য আলাদাভাবে টাকা নেয় প্রতিটি হল কর্তৃপক্ষ।
খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অশোক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ভর্তুকির টাকা শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা হিসাবেই আসে। প্রতিদিন হলের ডাইনিংয়ে খাওয়া শিক্ষার্থীদের হিসাব করে ডাইনিং ম্যানেজারকে ভর্তুকি দেই। অতিরিক্ত টাকা হলের অন্য কাজে ব্যয় করা হয়।’
শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হলের সব ছাত্রীই ডায়নিংয়ে খায় না। ফলে ছাত্রী হিসাব করে ডায়নিং ম্যানেজারকে টাকা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা হলের অন্য কাজে ব্যয় করা হয়।’ এদিকে,ভর্তুকির টাকা কম দেওয়ায় খাবারের মান উন্নত করার জন্য ডাইনিং ম্যানেজারকে চাপ দিতে পারে না হল প্রশাসন। ফলে ডায়নিং থেকে ভালো মানের খাবার পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
সাদ্দাম হোসেন হলের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমাদের নামে টাকা তুলে খাবারের মান উন্নয়ন না করে ওই টাকা কী করা হয়?’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তা শুধু খাবারের জন্য ব্যয় করতে হবে। কোনোভাবেই অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যাবে না।’