বর্ণাঢ্য আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৩ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
পরে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১৩তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি র্যালি বের করেন। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।
দুপুর ১২টার দিকে নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রকাশনা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কমচারীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আনন্দ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ‘একনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদনের ফলে।
বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। ছবি : এনটিভি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘এ মাসেই ঢাকার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রায় ২০০ একর ভূমি বরাদ্দের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪০ বছর স্বাধীনতার উত্তরকালে এত জমি একসাথে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয়নি।’
উপাচার্য বলেন, একনেকে এই প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৯২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। আর মেগা প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী একাধিক একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, নতুন আরো কয়েকটি অনুষদ, ছাত্রছাত্রীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলারমাঠ, সুইমিংপুল, মসজিদ, পরিবহন ও বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মীজানুর রহমান আরো বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। আরো অধিক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব শর্তের প্রয়োজন আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই মিলে তা পূরণ করছি। এ ক্ষেত্রে সরকার আমাদের যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে, আগামীতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।’
আলোচনা সভায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮’ উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি, কর্মচারী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছবি : এনটিভি
শিল্পকলা প্রদর্শনী : আলোচনা সভার পর ‘শিল্প-সৃজনে আলোকিত হই’ স্লোগানকে সামনে রেখে দুপুর ১২টার দিকে নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ‘১ম বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনী’র উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ছবি ও অন্যান্য শিল্পকর্ম স্থান পায়। এই বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত (সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা) চলবে। এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বার্ষিক শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রকাশনা প্রদর্শনী : ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮’ উপলক্ষে ভাষা শহীদ রফিক ভবন প্রাঙ্গণে জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় দিনব্যাপী ‘প্রকাশনা প্রদর্শনী’র আয়োজন করা হয়। ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বার্তা প্রকাশ করা হয়। এতে বিগত ১৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রকাশনা প্রদর্শনীতে অন্যান্য প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণাধর্মী বই, জার্নাল ও অন্যান্য প্রকাশনা প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সামাজিক বিজ্ঞান ভবন চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সবাই উদ্বেলিত ও উৎফুল্ল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়।