জাবিতে তরীর দশকপূর্তি-পুনর্মিলনী উদযাপন
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তরীর দশকপূর্তি ও প্রথম পুনর্মিলনী উদযাপিত হয়েছে।
‘শিক্ষা, আলো, স্বপ্ন মনে; এসো মিলি তরীর টানে’ স্লোগানে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তরীর প্রধান উপদেষ্টা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক ও আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ।
পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে অমর একুশের সামনে এসে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করে তরীর শিশুরা।
এর আগে সকালে দশকপূর্তি ও প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে তরীর শিশু, সাবেক ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে উপহার বিতরণ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে তরী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ১০ বছরে তরীর অর্জন অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত ব্যস্ততার মধ্যেও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কথা ভুলে যায়নি। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তরী আজ দশকপূর্তি উদযাপন করছে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। যত দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে, তত দিন তরী থাকবে। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, সারা দেশে একসময় ছড়িয়ে পড়বে তরী তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তরীর অন্যান্য উপদেষ্টা, সাবেক ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক ও তরীর শিশুরা উপস্থিত ছিল।
এদিকে শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সড়কের পাশে তরীর উদ্যোগে নিম, পেয়ারা, শিউলিসহ ১০টি গাছের চারা রোপণ করা হয়।
এরপর সাড়ে ১১টা থেকে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে শিশুদের বিভিন্ন খেলাধুলা, সাবেক ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবকদের মোরগ লড়াই এবং বালিশ বদল, বল নিক্ষেপ খেলার আয়োজন করা হয়।
পরে দুপুর ২টায় জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। আলোচনা সভায় তরীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা বক্তব্য দেন।
সভাপতিত্ব করেন তরীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শরফুদ্দিন মোহাম্মদ শান্ত। আলোচনা সভা শেষে শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। সবশেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এ আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল কালের কণ্ঠ, চ্যানেল ২৪, বাংলানিউজ ও রেডিও ক্যাপিটাল। এ ছাড়া দিনব্যাপী ইস্পাহানি চায়ের উদ্যোগে চা পরিবেশন করা হয়।
অন্যদিকে, দশকপূর্তি ও পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে 'তরী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করা হয়। এতে শরফুদ্দিন মুহাম্মদ আবু ইউসুফকে সভাপতি ও সোহেলুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
অ্যালাইমনাই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহসভাপতি সাজেদুর রহমান সজিব, সহসভাপতি এস কে ফয়সাল আহমেদ, সহসাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবু সায়ের আল আরাবী, জোবায়দাতুল মদিনা রেখা ও জাকিউল ইসলাম।
‘আলোর পথে আমরা’ স্লোগানে ২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল জাবি ক্যাম্পাসে পথচলা শুরু হয় তরীর। ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীদের হাতে গড়ে ওঠে তরী। সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায়, ছিন্নমূল ও পথশিশুদের পাঠদানের মাধ্যমে শুরু হলেও বর্তমানে তরী শিশুদের খাতা, কলম, ব্যাগ, স্কুলের পোশাক, শীতের পোশাক ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে।